অপুর্ব কারুকার্য ও রংতুলির আঁচড়ের ছোয়ায় দেবী দূর্গার মোহনীয় সৌন্দর্যে মুগ্ধ করেছে ভক্তবৃন্দের মন।
সুমন হোসেন, মশিয়াহাটী (যশোর) : “শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ভোরের আগমনী, শিউলী ঝরানো দিন আনে সে চিরদিনের বাণী” যশোর জেলার অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত হিন্দু অধ্যুশিত ৯৬ গ্রামের প্রাণকেন্দ্র মশিয়াহাটী গ্রাম। ওই গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের উল্লেখযোগ্য একটি উপসনালয় হলো মশিয়াহাটী আঞ্চলিক দূর্গা পূজা মন্দির। প্রতি বছর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় পূজা এই ধরনীতে দেবী দূর্গার আগমন উপলক্ষে দূর্গা পূজার অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠান ঘিরে ব্যাপক আয়োজনের উদ্যোগ নিয়ে থাকে প্রতি বছর মশিয়াহাটী আঞ্চলিক দূর্গা পূজা উদযাপন কমিটি।
বেশ কয়েকজন শিল্পীদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের পর পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে ৩০১ টি প্রতিমা তৈরি করে মশিয়াহাটী দূর্গা মন্দিরকে সাজানো হয়েছে। যা অত্যন্ত নান্দনিক ও সকল দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কেড়েছে। প্রতিমা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষ এত সুন্দর কারুকাজ দেখে শিল্পীদের এবং মন্দির কতৃপক্ষ কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে শাীদীয় দূর্গোৎসব। মশিয়াহাটীতে যা ‘বড়ো পুজো’ হিসাবে অধিক পরিচিত। ইংরেজি ১৬১০ সালে কলকাতার রাজা সাবর্ণ রায় চৌধুরী স্বপরিবারে দূর্গা পূজার প্রচলন করেন। সেই প্রচলিত ধারায় দূর্গা পূজা সর্বজনীনতা পায়। মশিয়াহাটীতে ১৪ টি গ্রামের মানুষের অংশ গ্রহনে প্রতি বছর এই ব্যাপক আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন পৌরানিক কাহিনী অবলম্বনে প্রতিমা তৈরী করা হয়।
পুতুল পূর্জা করে না হিন্দু কাঠ মাটি দিয়ে গড়া, মৃন্মায়ি মাঝে চিন্মায়ি হেরী হয়ে যাই আত্মহারা।” স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায়।
সূত্র জানায়, মশিয়াহাটী এলাকার কিছু বিদ্যানুরাগী মানুষের প্রচেষ্টায় ১৯১৮ সালের মশিয়াহাটী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালিন সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে মাধ্যমিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। মশিয়াহাটী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ম ব্যাচের পরিক্ষার্থীদের সফলতা কামনা করে দূর্গা পূর্জার মানত করা হয়।
ওই বিদ্যালয়ের ১৯২৪ সালের ১ম ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো রেজাল্ট করায়, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে দূর্গা পূর্জার আয়োজন করেন। এর আগে ১৯২৩ সালে মশিয়াহাটীতে প্রথম দূর্গা পূজার শুরু করা হয়।
সনাতন ধর্মাবলম্বী সূত্রে জানা যায়, ২০ অক্টোবর শুক্রবার মহাষষ্ঠী শারদীয়া দূর্গাদেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস এর মাধ্যমে দূর্গা উৎসব শুরু হয়।
২১ অক্টোবর শনিবার মহাসপ্তমী শারদীয়া দূর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমী বিহিত পূর্জা করা হয়।
২২ অক্টোবর রোববার মহাঅষ্টমী শারদীয়া দূর্গাদেবীর মহাষ্টম্যাদি কল্পারম্ভ, মহাষ্টমীবিহিত পূর্জা ও সন্ধ্যায় মনোঙ্গ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
২৩ অক্টোবর সোমবার মহানবমী শারদীয়া দূর্গাদেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও মহানবমী বিহিত পূর্জা এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার বিজয়া দশমী শারদীয়া দূর্গাদেবীর দশমীবিহিত পূজা সমাপনান্তে বিসর্জন দেওয়ার মধ্যে দিয়ে দূর্গা উৎসবের অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করা হয়।
“রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধুমধাম ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম, পথ ভাবে ‘আমি দেব’ রথ ভাবে ‘আমি ‘মূর্তি ভাবে ‘আমি দেব’ হাসে অন্তর্যামী।” —-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়।
মনিরামপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শঙ্কর প্রসাদ দত্ত বলেন, আমরা স্বপরিবারে মশিয়াহাটীতে দূর্গা পূজা দেখতে এসেছি। খুব ভালো লাগছে। প্রতি বছরের তুলনায় এবছর আরো বেশি সুন্দর হয়েছে। খুলনা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো পরিসরে মশিয়াহাটীতে শারদীয় উৎসব উদযাপন করা হয়। পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা সহ ধন্যবাদ ঙ্গাপন করছি।
মশিয়াহাটী আঞ্চলিক দূর্গা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারন সম্পাদক ফাল্গুন মন্ডল বলেন, ৯৬ অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্রে মশিয়াহাটী আঞ্চলিক দূর্গা মন্দিরে বিভিন্ন পৌরানিক কাহিনী অবলম্বনে ৩০১টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। এই প্রতিমা তৈরিতে শিল্পীরা বেশ কয়েকদিন ধরে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে মনের মাধুরী দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন তাদের নিখুঁত শৈল্পিক আলপনার প্রতিমা। বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসা মানুষের কৃতজ্ঞতায় ভাসছেন মন্দির ও পূজা উদযাপন কমিটির লোকজন। ভিন্ন কিছু করার সিদ্ধান্ত থেকে আজ এই প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। তবে সবটুকু সফলতা দর্শনার্থীদের জন্য।