যশোর অভয়নগরে ছোলা ও বাদাম বিক্রেতা একজন  রবিউল ইসলামের সফলতার গল্প  

Uncategorized খুলনা জীবন-যাপন বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

ছোলা ও বাদাম বিক্রিতে ব্যাস্ততম সময় পার করছেন সফল ব্যাবসায়ী রবিউল ইসলাম


বিজ্ঞাপন

সুমন হোসেন, অভয়নগর (যশোর)  :  মোঃ রবিউল ইসলাম। বয়স ৫৬ বছর। তিনি পায়রাহাটের আব্দুল হামিদ টি এম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম পরিছন্নতাকর্মী হিসাবে ৪৯ বছর চাকুরী করছেন। ১৯৬৭ সালের জুন মাসের ৫ তারিখে তিনি জন্ম গ্রহন করেন। দারিদ্র্যতার কারনে ৮ম শ্রেণী পাশ করার পর লেখা-পড়া করা সম্ভব হয় নি।

যে কারনে একটি স্কুলের মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে দপ্তরীর সামান্য বেতনে সংসার চলে না তার।যে কারনে বাড়তি আয়ের দরকার হয়। ওই সময় (১৯৮৮ সালে) ২ কেজি ছোলা যার দাম ছিলো ২৬ টাকার পুজি নিয়ে পায়রাহাটের ঈদগাহ ময়দানে ধানের বস্তা বিছিয়ে বিক্রি শুরু করেন।

সেই থেকে ব্যবসা শুরু হয় রবিউলের। ৩৫ বছর ধরে ছোলা ও বাদাম বিক্রি করছেন রবিউল। প্রথমে অল্প পরিমানে বিক্রি হলেও বর্তমানে বিকিকিনি বেড়েছে অনেক বেশি। এখন পায়রা বাজারে প্রতি হাটবারে ২০ কেজি ছোলা ও ১০ কেজি বাদাম বিক্রি করেন রবিউল ইসলাম। এতে এক হাটে আনুমানিক ৪ হাজার টাকার ছোলা ও বাদাম বিক্রি হয় তার।

বলছিলাম, অভয়নগর  উপজেলার পায়রা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড সমশপুর গ্রামের মৃত ছাদেক আলী খাঁ’র ছেলে মোঃ রবিউল ইসলাম (৫৬) এর জীবনের সফলতার  গল্প। পরিবারের ২ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে রবিউল সবার ছোট। তিনি ১৯৭৭ সালে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়া করেন। সংসারে অভাব-অনাটনের জন্য লেখা পড়াও শেষ করতে পারেন নি।

রবিউল ইসলামের ছোলা-বাদাম খেতে তার দোকানে ভীড় লেগেই থাকে।

 

রবিউল ইসলাম জানান, পাইকারী বাজার থেকে কাঁচা ছোলা কিনে বাড়ি নিয়ে আসি। পরিষ্কার পানি ও লবন দিয়ে প্রথমে ছোলা গুলো সিদ্ধ করে পরে পানি দিয়ে ধুয়ে পাত্রে রাখি। একই ভাবে বাদাম গুলো কড়াইতে বালি দিয়ে ভেজে পাত্রে রাখি। এরপর বাজারে একটি বাঁশের চটা দ্বারা তৈরী টেবিলের উপর পসরা সাজিয়ে রাখা হয়।

একটি স্টিলের বড় মগে চামচে করে ছোলা, কাঁচা মরিচ, পেয়াজ, বাড়ি তৈরী চানাচুর ও খাঁটি শরিসার তেল দিয়ে একসাথে মিশিয়ে ছোলা মাখা তৈরি করি। এই ছোলা মাখা ১০০ গ্রাম ১৫ টাকা ও বাদাম ১০০ গ্রাম ২৫ টাকায় বিক্রি করি। একহাটে ২০ কেজি ছোলা ও ১০ কেজি বাদাম বিক্রি হয়।

আমার যে পরিমান ছোলা ও বাদাম পায়রা বাজারে নিয়ে আসি তার সবটুকুই বিক্রি হয়, আলহামদুলিল্লাহ। তবে দ্রব্যমূল্যে দাম বৃদ্ধি পেলেও আমি সাধারন মানুষের কথা চিন্তা করে কোনো পন্যের দাম বাড়াই নি। এ কারনে লাভ কম হলেও আমার বিক্রি হয় বেশি। পয়ারা বাজারে সপ্তাহে রোববার ও বৃহস্পতিবার দুই দিন হাট বসে।

হাটের দিন তাই ব্যাস্ততম সময় পার করছেন সফল ছোলা-বাদাম ব্যাবসায়ী রবিউল ইসলাম।

 

হাটের দিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ছোলা মাখা ও বাদাম বিক্রি করি। এ সময় আমার ছেলে ও নাতনী আমাকে দোকানে কাস্টমারদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সহযোগিতা করেন। তবে কোনো কোনো দিন লাভ কম হলেও আমি নিজেকে সফল বলে মনে করি।

পায়রা বাজারে এসে সমশপুর গ্রামের জহুরুল ইসলাম মিঠু বলেন, হাটের দিন কেনাকাটার শেষে রবিউল ইসলামের ছোলা মাখা খেতে আসি। খুব ভালো লাগে। অনেক দিন বাড়িতে পরিবারের সদস্যরা ছোলা মাখা নিয়ে আসতে বলে দেয়।

মনিরামপুর উপজেলার গাবোখালী মহাবিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের ছাত্র নাহিদুজ্জামান বলেন, রবিউল চাচার অসাধারণ ছোলা মাখার কথা শুনে খেতে এসেছি। সত্যি খুব সুন্দর হয়েছে। পরিবারের জন্য কিছুটা কিনে নিয়ে যাবো।

পায়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হাফিজুর রহমান বিশ্বাস বলেন, রবিউল ইসলাম রবি একজন সৎ ও ভালো মানুষ। সততার সাথে স্কুলের দপ্তরীর কাজ ও ছোলা বাদাম বিক্রি করেন। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ কাউকে করতে শুনি নি।স্কুলের ছেলে-মেয়েরা সহ এলাকার মানুষের মুখে তার ছোলা মাখার প্রশংসা শুনেছি অনেক বার।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *