স্পোর্টস ডেস্ক : পাকিস্তান সফর দিয়ে টি-২০ বিশ্বকাপ মিশন শুরু করছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। আগামী অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় সংক্ষিপ্ত ভার্সন বিশ্বকাপের দল গঠনের বিষয়টি মাথায় রেখে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ শুরু করছে টাইগাররা। বহু জল্পনা-কল্পনা শেষ করে অবশেষে পাকিস্তানে অবস্থান করছে টিম বাংলাদেশ।
তারুণ্য নির্ভর দল নিয়ে পাকিস্তান সফরের জন্য টি-২০ সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। তাই শুধুমাত্র পাকিস্তান সফর নিয়েই পরিকল্পনা নয়, বিশ্বকাপ নিয়েও চিন্তা-ভাবনাটা রয়েছে টাইগারদের। যে কারণে এ সফর দিয়ে দল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেছে বাংলাদেশ।
ম্যাচের আগের দিন আজ সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। প্রতিপক্ষকে সমীহ করলেও সিরিজ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী মাহমুদউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমি খুব আশাবাদী আমার দল নিয়ে। যেন আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি। আমি খুব আশাবাদী যেন আমরা সিরিজটা জিততে পারি।’
টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে পাকিস্তান আছে শীর্ষে, বাংলাদেশের অবস্থান নয়ে। মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘আমার মনে হয় না রেটিং ব্যবধান খেলায় কোনও প্রভাব ফেলবে। আপনি যদি এসব নিয়ে চিন্তা করেন, তাহলে সেটা ম্যাচে প্রভাব ফেলতে পারে। যার কারণে এসব নিয়ে আমরা চিন্তা করছি না। আপনি যদি আমাদের শেষ দুটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ দেখেন, তাহলে দেখবেন বেশ ভালো ক্রিকেট খেলেছি আমরা। এই সিরিজেও সেটারই পুনরাবৃত্তি করতে চাই। ভালো একটি সিরিজ হবে আশা করছি।’
বাংলাদেশ দলে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম নেই। তবে যারা দলে আছেন, তারা প্রায় সবাই সম্প্রতি শেষ হওয়া বিপিএলে ভালো করেছেন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ এই সিরিজে ফেবারিট কি না? এই প্রশ্নের সরাসরি কোন উত্তর দেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক।
তিনি বলেন, ‘আমি এটা বলতে পারব না যে আমরা ফেভারিট কি না। কারণ আমরা অনেকদিন পর পাকিস্তানে এসেছি। তারা নিজেদের মাটিতে অনেক শক্তিশালী দল, অন্তত এই ফরম্যাটে। র্যাঙ্কিংও যদি দেখেন, সেটাও তাদের পক্ষে কথা বলবে। আমি আমার দল নিয়ে খুব আশাবাদী যেন ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি এবং সিরিজটা যেন জিততে পারি।’
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়েছিল ২০১৬ সালে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সেই ম্যাচে অবশ্য পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। চার বছর পর ফের পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। তবে এবার খোদ পাকিস্তানের মাটিতেই। যেখানে নিরাপত্তা ইস্যু মাথায় নিয়েই পাকিস্তান সফর করেছে বাংলাদেশ দল।
পাকিস্তান সফরের দলে ওপেনার হিসেবে রয়েছেন বেশ কজন খেলোয়াড়। তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন শান্ত, নাইম শেখ, লিটন কুমার দাস, আফিফ হোসেন ও সৌম্য সরকার। প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর মতে, এ সফরে বিভিন্ন সময়ে তরুণদের সুযোগ দিতে প্রস্তুত তারা।
সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘এটি একটি তারুণ্য নির্ভর দল। এর মধ্য দিয়ে আমাদের প্রক্রিয়ার গভীরতা প্রকাশ পায়। আশা করছি এদের মধ্য থেকে কিছু খেলোয়াড় একটা প্রভাব ফেলতে পারবে যাতে তারা বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিতে পারবে। তবে এটি এখও চূড়ান্ত হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘তারা কি করে সেটির উপর নির্ভর করছে (তরুনদের নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা অনুযায়ী)। কোন খেলোয়াড় যদি তার সেরাটা দিতে না পারে, তবে তাকে এগিয়ে নেয়াটা কঠিনই হবে। যদি কোন খেলোয়াড়ের বিকাশের সম্ভাবনা থাকে, তবে আমরা তাকে নিয়ে এগোবো। এই সিরিজের পর যতটা সম্ভব দল ছোট রাখতে হবে। আমি মনে করি, পরের সিরিজগুলোতে আমরা ১৬-১৭ জন খেলোয়াড়দের নিয়ে খেলতে পারি।’
যদিও পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিততে মরিয়া বাংলাদেশ তথাপি তিনি দল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে প্রস্তুত বলে জানান ডোমিঙ্গো। তিনি বলেন, ‘ভারতের বিপক্ষে তিন নম্বরে ব্যাট করেছেন সৌম্য। তবে এই সিরিজে ৬ নম্বরে ব্যাট করতে পারেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ ৫ নম্বরে, আফিফ ৩ বা ৪ নম্বরে খেলতে পারেন। শান্ত তার প্রস্তুতি ভালোভাবে শেষ করেছেন। সেরা খেলোয়াড়রা যেকোন পরিস্থিতিতে, যেকোন পজিশনে খেলতে পারেন। নিজেদের মেলে ধরার জন্য তরুণ খেলোয়াড়দের এটিই সেরা সুযোগ। আমি এটি নিয়ে উচ্ছসিত। লিটনের মতো খেলোয়াড়কে যদি দুই-একটি ম্যাচে চার নম্বরে ব্যাট করতে হয়, তবে ভালো। মিঠুন যদি তিন নম্বরে ব্যাট করতে হয়, তাও ঠিক আছে। যদি আফিফকে ছয় নম্বর থেকে ওপেনিংএ যেতে হয়, তাকে এগুলো করতে শিখতে হবে।’
বর্তমান টি-২০ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে ছোট ফরম্যাটে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য দলপতি হিসেবে চান কোচ ডোমিঙ্গো। পাকিস্তান সফর নিয়ে ডোমিঙ্গোর সাথে সুর মিলিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে হয়, তরুণ খেলোয়াড়রা নিজেদের প্রমাণ করার জন্য প্রস্তুত। সাকিব-মুশফিক দলে নেই। অবশ্য কিছু খেলোয়াড়কে বাদ দেয়া হবে, তাই সর্বোচ্চ সুযোগটি ভালোভাবে কাজে লাগানো উচিত তাদের। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে আমাকে ও তামিমকে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি তরুণদেরও নিজেদের দক্ষতা দেখাতে এগিয়ে আসতে হবে। তারা যদি, তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারে, তবে আমাদের ক্রিকেটের জন্যই ভালো হবে।’