মিথ্যা মোবাইল চুরির অপবাদ এড়াতে  সিআইড’র সাইবার টিমের পরামর্শ

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত ঢাকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ মোবাইল ফোন চুরির অপবাদ এড়াতে সিআইডি’র সাইবার টিমের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জনসাধারণের অবগতির জন্য কিছু পরামর্শ প্রদান করে একটি ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন। নিম্নে ঘটনাটির বিবরণ বর্ননা করা হলো।


বিজ্ঞাপন

সাইবার পুলিশ সেন্টারের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের মাধ্যমে একটি অভিযোগ পাওয়া যায় যে, জনৈক ব্যাক্তির একটি iphone-14 প্রো ম্যাক্স হারানো গিয়েছে। তিনি থানায় জিডি করে জিডির কপি ও IMEI সহ অভিযোগ করেন। অভিযোগ প্রাপ্ত হয়ে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় জানা যায় যে, জিডিতে বর্ণিত আইফোনটি নারায়ণগঞ্জে ব্যবহার হচ্ছে। ব্যবহারকারীর সাথে যোগাযোগ করে তাকে ফোনসহ সিআইডি অফিসে আসতে বলা হয়।

ফোনটির ব্যবহারকারী ফোনসহ সিআইডি অফিসে হাজির হয়ে জানান নে, তিনি বসুন্ধরা শপিংমলের একটি স্বনামধন্য দোকান থেকে এই ফোনটি কিনেছেন এবং তার কাছে ফোনের ব্ক্স এবং মানি রিসিপ্ট ও আছে। তখন তার সাথে থাকা বক্স, মানি রিসিপ্ট এবং সাথে থাকা ফোনের IMEI মিলিয়ে দেখা যায় ফোনের ফিজিক্যাল IMEI এর সাথে মানি রিসিপ্ট এর আইএমইআই এর মিল থাকলেও বক্সের সাথে কোন মিল নাই এবং ফোনটির ক্রয়ের সময় দেখা যায় হারানো ফোনের মালিকের ক্রয়ের ও আগে। কিছুটা দ্বিধা-দন্দে পরে যায় সিআইডি টিম।

সিআইডি তখন আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিলে দেখা যায় বর্ণিত ফোনে অভিযোগকারীর সিম কখনোই ব্যবহার হয়নি। অর্থাৎ যার কাছে ফোনটি পাওয়া গিয়েছে তিনি সত্য কথা বলেছেন। তিনি ফোনটি নতুন কিনেছেন এবং ক্রয়ের পর থেকে নিজেই ব্যবহার করছেন।
তাহলে যিনি জিডি করলেন তিনি কি মিথ্যা জিডি করেছেন? এমন প্রশ্ন জাগে সিআইডির টিমের মনে।

ডাকা হয় জিডির বাদীকে। এবার তিনিও ফোনের বক্স এবং মানি রিসিপ্ট নিয়ে হাজির। তিনিও বসুন্ধরা শপিংমলের অন্য একটি দোকান থেকে ফোনটি ক্রয় করেছিলেন বলে জানান। তার কথা যাচাইয়ের জন্য পুনরায় আবার তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নেয় সিআইডি। দেখা যায় বাদীর ফোন হারিয়েছে এটা সত্য, যে ফোনটি হারিয়েছে সেটাও iphone-14 প্রো ম্যাক্স তবে তার IMEI জিডিতে বর্ণিত IMEI থেকে আলাদা। বাদীকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান তিনি বক্সের IMEI দেখে থানায় জিডি করেছেন।

এবার দুজনের ব্ক্স একসাথে করে দেখা যায় বাদীর কাছে যে বক্স সেই বক্সের সাথে যাকে সন্দেহজনক হিসেবে ডেকে আনা হয়েছিলো তার ফোনের ফিজিক্যাল IMEI মিলে যায়। আবার সন্দেহজনক ব্যক্তির কাছে যে বক্স আছে সেটার সাথে বাদীর প্রকৃত যে ফোনটা হারানো গেছে সেই ফোনের IMEI এর সাথে মিলে যায়। অর্থাৎ যে কোনভাবে দুজনের বক্স পরিবর্তন হয়ে গেছে।

ডেকে আনা হয় বসুন্ধরার দুই দোকান মালিককে। তারা জানান এই ফোনগুলো ইমপোর্ট করার সময়ক বক্স এবং ফোন আলাদা আসে। দেশে আসার পর ফোন গুলো বক্সে ঢুকানো হয়। সে সময়ে এমন অদল বদল হতে পারে। এটা তাদের ভুল। এখানে বাদী বা বিবাদীর কোন দোষ নাই এবং তারা দুই দোকানদার নিজেরাই বাদীকে একটি নতুন ফোন দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। সন্দেহজনক ব্যক্তির নিকট তারা ক্ষমা চায় তাদের ভুলের জন্য তিনি যে হয়রানির স্বীকার হলো সে জন্য।

পরামর্শ ১। যে কোন ফোন ক্রয়ের সময় অবশ্যই ফোনের ফিজিক্যাল IMEI এর সাথে বক্সের IMEI মিলিয়ে নিবেন।
২। মোবাইল ক্রয় করার সময় দোকানের মানি রিসিপ্টে অবশ্যই IMEI লিখিয়ে নিবেন এবং তাতে তারিখসহ দোকানদারের স্বাক্ষর নিবেন।

৩। ফোনের IMEI দেখতে যে ফোনটি ক্রয় করবেন তাতে ডায়াল করুন *#06# এতে করে ফোনের ডিসপ্লেতে যে IMEI আসবে তার সাথে বক্সের এবং মানি রিসিপ্ট এর IMEI ঠিক আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে দোকান ত্যাগ করুন।

উল্লেখ্য, প্রতিদিন সাইবার পুলিশ সেন্টারের কাছে মোবাইল হারানোর এমন অসংখ্য অভিযোগ আসতে থাকে। সবগুলোকেই সমান গুরত্ব দিয়ে দেখা হয়। তবে বিভিন্ন টেকনিক্যাল কারনে সব ফোন উদ্ধার করা সম্ভব হয় না, যে কারনগুলো এই ফোরামে বলা যাচ্ছে না। সুতরাং নিজে সতর্ক হোন, অন্যকে সতর্ক করুন। ধন্যবাদ সবাইকে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *