বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ঘটনাপঞ্জি

Uncategorized ইতিহাস ঐতিহ্য জাতীয় জীবনী বিশেষ প্রতিবেদন রাজনীতি সারাদেশ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।


বিজ্ঞাপন

আজকের দেশ ডেস্ক :  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর  নেতৃত্বে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সব  ঘটনাপঞ্জি যা আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ জনক অবিসংবাদিত বিশ্বনেতার রাজনৈতিক নেতৃত্বের অবিস্মরণীয় ভুমিকা বাংলার মানুষ আজও মনে করেন। দেশের নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর  নেতৃত্বে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সব  ঘটনাপঞ্জি তুলে ধরা হলো।

 

১৭ নভেম্বর, ১৯৪৭ : পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলাকে ঘোষণার জন্য শত শত নাগরিকের স্বাক্ষর সংবলিত স্মারকপত্র প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিনের কাছে পেশ।
২৭ নভেম্বর, ১৯৪৭ :  করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত।
৬ ডিসেম্বর, ১৯৪৭ :  পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ছাত্র বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত।
৪ জানুয়ারি, ১৯৪৮ :  বিচ্ছিন্ন ও অসংগঠিত প্রতিবাদকে সংগঠিত রূপদানের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত।
৮ জানুয়ারি, ১৯৪৮ :  ছাত্রলীগ মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদার বিষয়ে আলোচনার জন্যে খাজা নাজিমুদ্দিনের সাথে তার বাসভবনে সাক্ষাৎ করে।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮ :  পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকে গণপরিষদের ব্যবহারিক ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্তের দাবি তুলে সংশোধনী প্রস্তাব আনেন।
২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮ :  গণপরিষদের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ঢাকার ছাত্র সমাজ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ধর্মঘট পালন এবং ছাত্রসভার আয়োজন করে।
২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮ :  ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিস-এর যৌথসভায় ১১ মার্চ প্রতিবাদ দিবস হিসেবে ধার্য করা হয়।
২ মার্চ, ১৯৪৮ :  ১১ মার্চের ধর্মঘটকে সফল করার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয় এবং শামসুল আলম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন।
১১ মার্চ, ১৯৪৮ :  বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী ও ছাত্রদের নিয়ে সাধারণ ধর্মঘট পালন ও পূর্ব বাংলা সরকারের সচিবালয় ঘেরাও করেন। পুলিশ এই ধর্মঘটে বেধড়ক লাঠিচার্জ এবং বঙ্গবন্ধু, শামসুল হক ও অলি আহাদসহ অনেককে গ্রেপ্তার করে।
১৫ মার্চ, ১৯৪৮ :  খাজা নাজিমুদ্দিন সরকার রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ সদস্যদের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন এবং রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত ৮ দফা খসড়া চুক্তি প্রণয়ন করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধুর অনুমোদন নেওয়া হয়। চুক্তি মোতাবেক ১৫ মার্চ সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুসহ অন্যরা মুক্তি লাভ করেন।
১৬ মার্চ, ১৯৪৮ :  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে সাধারণ ছাত্র-জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
২১ মার্চ, ১৯৪৮ : মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসভায় ঘোষণা করেন, উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। সেখানেই তার এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছাত্রনেতারা তীব্র প্রতিবাদ জানান।
২৪ মার্চ, ১৯৪৮ :  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে অনুষ্ঠিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানেও জিন্নাহ ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ এই ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করেন। সেখানেও ছাত্রদের মধ্য থেকে এর প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়।
১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮ :  ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদানের দায়ে মুসলিম লীগ সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে।
২৭ জানুয়ারি, ১৯৫২ :  পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর খাজা নাজিমুদ্দিন পল্টন ময়দানের সমাবেশে ঘোষণা করেন কেবল মাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। সাথে সাথে সমাবেশস্থলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। শ্লোগান ওঠে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’।
৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ :  ঢাকা শহরের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বত:স্ফূর্ত ধর্মঘট পালিত হয়। ছাত্ররা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবিতে তখনকার সময়ের সবচেয়ে বড় একটি মিছিল নিয়ে রাজপথ প্রদক্ষিণ করে।
১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ :  ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা’র দাবিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমদ কারাগারের অভ্যন্তরে আমরণ অনশন ধর্মঘট শুরু করেন।
১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ : পাকিস্তান সরকার ২১ ফেব্রুয়ারি ডাকা সাধারণ ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সকল সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ : হাজার হাজার ছাত্র জনতার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে সালাম, বরকত, রফিক জব্বার প্রমুখ শহীদ হন।
২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ :  শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর পুলিশ পুনরায় গুলি চালালে শফিউর রহমানসহ ৪ জন ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ :  শহীদদের স্মরনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের উদ্যোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ব্যারাকে নির্মিত হয় প্রথম শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ। একুশের প্রথম শহীদ শাহাদত বরণ করেছিলেন যে স্থানে সেই স্থানেই নির্মিত হয় স্মৃতিস্তম্ভটি।
২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ :  গণদাবির মুখে বঙ্গবন্ধু ও মহিউদ্দিন আহমদকে ফরিদপুর জেল থেকে মুক্তি প্রদান করা হয়।
২৫ এপ্রিল, ১৯৫২ : পূর্ব পাকিস্তান সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদের সম্মেলন বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে গণভোট দাবি করেন।
২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৩ : আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে হাজার হাজার জনতা অস্থায়ীভাবে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। সরকার সকল সভা সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধ করলেও আওয়ামী মুসলিম লীগ নেতা-কর্মী ও সাধারণ ছাত্র-জনতা খালি পায়ে স্মৃতিস্তম্ভের নিকট শ্রদ্ধা জানায়।
৭ মে, ১৯৫৪ : যুক্তফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকার করে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে।
২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪ :  জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় ভাষণ প্রদান করেন।
১৭ নভেম্বর, ১৯৯৯ :  ইউনেস্কোর ১৮৮টি দেশের সমর্থনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *