সুমন হোসেন, (যশোর) : যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভবানিপুর গ্রামের ভবদহ নামকস্থানে শ্রী নদীর উপর ২১ ভেন্ট, ৯ ভেন্ট ও ৬ ভেন্টের নির্মিত স্লুইসগেট জায়ান্ট পাকিস্তান আমলের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ছিল।
তবে সমায়ের ব্যবধানে ভবদহকে যশোরের দুঃখ বলা হচ্ছে বর্তমানে। যশোর জেলার মণিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর, যশোর সদর উপজেলা, খুলনার ফুলতলা, ডুমুরিয়া মুক্তেশ্বরী-টেকা-শ্রী-হরি ও আপারভদ্রা-হরিহর-বুড়িভদ্রা নদী দিয়ে বেষ্টিত। যশোর টাউনসহ এ অঞ্চলে বৃষ্টির পানি ও উজানের পানি উল্লেখিত নদী সিস্টেম ও এর সাথে সংযুক্ত খালের মাধ্যমে ভাটিতে নিষ্কাশিত হয়। মুক্তেশ্বরী-টেকা- শ্রী-হরি ও আপারভদ্রা-হরিহর-বুড়িভদ্রা নদী সিস্টেম দুটি কেশবপুর উপজেলার কাশিমপুরে মিলিত হয়েছে এবং মিলিত প্রবাহ ভদ্রা-তেলিগাতী-গ্যাংরাইল নাম শিপসা নদীতে পতিত হয়েছে। মুক্তেশ্বরী-টেকা-হরি ও আপারভদ্রা-হরিহর-বুড়িভদ্রা এবং এর সাথে সংযুক্ত খাল গুলোর মাধ্যমে অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর ও যশোর সদর (অংশিক) এর প্রায় ৫৩টি ছোট বড় বিলের পানি নিষ্কাশিত হয়। সমুদ্রের নোনা পানি প্রতিরোধে এবং কৃষিযোগ্য মিঠাপানি ধরে রাখার জন্য ষাটের দশকে হরি-টেকা – শ্রী নদীর অভয়নগর উপজেলার ভবদহ নামক স্থানে ২১ ভেন্ট স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়।
পরবর্তীতে আশির দশক পর্যন্ত ভবদহ স্লুইসের সুফল ভালভাবে পাওয়া যায়। সত্তরের দশকের পর হতে এই অঞ্চলে নদীগুলোর মূল উৎস্য প্রবাহমান পদ্মা হতে বিছিন্ন হওয়ায় সাগর বাহিত পলি উজানের দিকের নদী ও খালের তলদেশে নিক্ষেপিত হতে থাকে। একারণে শুষ্ক মৌসুমে ভদ্রা তেলিগাতি নদীর মাধ্যমে সাগর হতে প্রচুর পলি বাহিত হয়ে হরি-টেকা-মুক্তেশ্বরী নদী ও আপারভদ্রা-হরিহর-বুড়িভদ্রা নদী ও এর সংযুক্ত খাল গুলোর তলদেশে নিক্ষেপিত হয়ে ভরাট হয়ে যায় পড়ছে।
বছর চারেক আগেও ভবদহ স্লুইসগেট হতে শিপসা নদী হয়ে বড় বড় মাছ ধরা ট্রলার চলাচল করতে পারতো।
কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূল সিন্ধান্তে ভবদহের স্লুইচগেট বন্ধ করে সেখানে মোটর ব্যবহার করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে জোয়ারের সাথে আসা পলি নদীতেই থেকে যায় বলে দাবী ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতাদের।
সরেজমিনে কয়েকদিন আগে নদী ঘুরে দেখা যায়, ২১ গেটের উপর ১৩ টি এবং ৯ গেটের উপর ৫টি মোটরপাম্প বসানো আছে, সাথে আরো ৪ টি পাওয়ার পাম্প।
আর দীর্ঘদিন নদী খনন করে সে মাটি নদীর ভেতরেই রাখা হয়েছে। ফলে নদী পরিণত হয়েছে নালাতে। ৯ গেটের সামনে দেখা যায় নদীর তলদেশ শুকিয়ে উচু হয়ে আছে, কোন প্রকারে নালা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
কপালিয়া ব্রিজের কাছে দেখা যায় নদীর প্রস্ত ৫-৬ ফিট। মনে হয় লাফিয়ে পার হওয়া সম্ভব। নদীর গভীরতা আছে ৩/৪ ফিট। সাথে সাথে নদীর পাশে পলি জমে থাকা স্থান দখল হতে শুরু করেছে। অনেকেই নদীর ভিতরেই জাইগা দখল করে মৎস্য ঘের স্থাপন করেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রনজিত বাওয়ালী বলেন, একজন রাজনীতিক ও আমলাদের ষড়যন্ত্রে, পানি উন্নয়ন বোর্ড এ জনপদকে জলাভুমিতে রুপান্তরিত করার চেষ্টা করছে। ডুমুরতলা গ্রামের শিবপদ বিশ্বাস জানান, ভবদহের জলাবদ্ধতার সমাধান হলে বাবুদের ভোট কম হয়ে যাবে, তারা প্রতি বছর জলাবদ্ধতার সমাধানের দোহায় দিয়ে ভোট চাইতে পারবে না।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, টি আর এম ছাড়া বিকল্প কোন উপায়ে ভবদহের জলাবদ্ধতার সমাধান স্থায়ীভাবে সম্ভব না। যত দ্রুত সম্ভব টি আর এম চালুর মধ্য দিয়ে ভবদহে নদী আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
ভবদহ এলাকার সকল নদীতে জোয়ার ভাটা না আসার কারণে নদীর গভীরতা ও প্রসস্ত কমে নালাতে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভাবে দেখে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট সমাধানের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন ভবদহ জলাবদ্ধতা কবলিত এলাকার সর্বস্তরের জনগণ।