বিআইডব্লিউটিএর অতি: পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিনের সম্পদের পাহাড় !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি আইন ও আদালত ঢাকা প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

বিশেষ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) যেন টাকার খনি। এই প্রতিষ্ঠানে যারাই চাকুরী করেন তারাই কোটিপতি বনে যান। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি থেকে শুরু করে প্রকৌশলী, প্রধান প্রকৌশলী ও পরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা যে যেভাবে পারছেন প্রতিষ্ঠানটির রক্ত চুষে খাচ্ছেন। তারা একেকজন প্রায় ১০/১২ বছর ধরে বিআইডব্লিউটিএর প্রধান কার্যালয়ে চাকুরী করার সুবাদে প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। সরকারি চাকুরী বিধি অহরহ লংঘন করা হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানে। এ ছাড়া নানা কৌশলে উন্নয়ন প্রকল্পের শত শত কোটি টাকা আত্মসাত করা হচ্ছে। এ নিয়ে সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও বন্ধ করা যাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম-দুনীতি ও লুটপাট।


বিজ্ঞাপন

দুদক সুত্রে জানাগেছে, বিআইডব্লিউটিএর প্রায় এক ডজন কর্মকর্তা ও কর্মচারির বিরুদ্ধে আয়ের সাথে সংগতিহীন অর্থ-সম্পদ উপার্জনের অভিযোগ তদন্ত চলছে। এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারির কাছে তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে। কেউ কেউ আংশিক তথ্য দিয়েছেন। পরিপূর্ণ তথ্য পাওয়াগেলেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির অিিরক্ত পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধ পথে শত শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুদক।


বিজ্ঞাপন

কে এই আরিফ উদ্দিন : পুরো নাম: এ.কে.এম.আরিফ উদ্দিন। পিতা: করিম হাজী.গ্রাম-রায়পুর.থানা-সুজানগর, পাবনা। বর্তমানে তিনি বন্দর ও পরিবহন শাখা অতিরিক্ত পরিচালক ও ল্যান্ড এন্ড এস্টেট এর পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হিসেবে কর্মরত। চৌকষ এ কর্মকর্তা অত্যন্ত ক্ষমতাধর ও পাবনা জেলার সন্তান হিসেবে নিজেকে আরও সুপার পাওয়ার হিসেবে মনে করে থাকেন এ বক্তব্য বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের । তার গ্রামের বাড়ী:-রায়পুর, সুজানগর, পাবনাতে খোঁজ নিয়ে ও আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে একজন আরিফ উদ্দিনের ক্ষমতাধর কর্মকর্তা হয়ে উঠার কথা। তথ্য সূত্র যতটুকু পাওয়া গেছে স্ত্রী শামীমা, ছেলে সাদ ও মেয়ে আরিন। সাদ ও আরিন দ‘ুজনই দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষারত আছে। তিনি রাজশাহী ভার্সিটিতে অধ্যায়নকালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেকা ছিলেন বলে জানা যায়। তার পিতা ও চাচারা সবাই বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতি করেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

দুদকের অনুসন্ধান: স্বারক নং- ০০.০১.২৬০০.৬০৩.০১.২৩৪.২৩-৩২১৭ এ দুর্নীতি দমন কশিনের উপ-পরিচালক মো: হাফিজুল ইসলাম ( অনু ও তদন্ত-২) টিমের পক্ষ থেকে ০৩/০৯/২০২৩ ইং তারিখে পরিচালক ( প্রশাসন) বিআইডব্লিউটিএ বরাবরে এ পত্রে “আরিফ হাসনাত” যুগ্ম পরিচালক বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এর সুষ্ঠ অনুসন্ধানের জন্য নিম্নবর্নিত রেকর্ডপত্র সংগ্রহপূর্বক চিঠি প্রদান করে।উক্ত স্বারকের নামের স্থলে আরিফ হাসনাত লেখা রয়েছে কিন্তু যুগ্ম পরিচালক আরিফ হাসনাত নামক কোন কর্মকর্তা বিআইডব্লিউটিএ পাওয়া যায়নি।

দুদকের চাহিদা পত্রে যে সমস্ত কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে তা হলো বিআইডব্লিউটিএ আওতাধীন নারায়নগঞ্জ পোর্ট হইতে ১/১/১৯-৩১/১২/২২ তারিখ সময়ে সদরঘাট পোর্ট হতে ১/১/২০২০-৩১/১২/২২ তারিখ সময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক খাতের হিসেবের বিবরনী এ ছাড়াও জনাব আরিফ হাসনাত, যুগ্ম পরিচালক, বিআইডব্লিউটিএ এর ব্যক্তিগত নথি, উত্তোলিত বেতন ভাতার বিবরন (শুরু হইতে জুন/২৩ সময় পর্যন্ত) দায় দায়িত্ব সম্পর্কীত অফিস আদেশ সমূহ তার নিজ স্ত্রী/সন্তান/ভাই গনের নামে ব্যবসা/শেয়ার পরিচালনায় আবেদন এবং অনুমোদন সংক্রান্ত সমুদয় রেকর্ডপত্র।

সম্পদের খতিয়ান: অনুসন্ধানকালে জানাগেছে, অতিরিক্ত পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ দ্বারা ঢাকা এলিফ্যান্ট রোডে ২২ কোটি টাকা দিয়ে একটি বহুতলা বাড়ী ক্রয় করেছেন। বাড়ী নং ৩০১,এলিফেন্ট রোড,ঢাকা ১২০৫। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি আলীশান ফ্ল্যাট ক্রয় করে বসবাস করছেন। যার মূল্য কমপক্ষে ৩ কোটি টাকা। ওই ফ্ল্যাটের মধ্যে সুইমিংপুলও তৈরি করেছেন। এ ছাড়া ডেকোরেশন করেছেন প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে। ফ্ল্যাট নং –ব্লক-সি,রোড নং-১,প্লট নং ৫৪,৫৫,৫৬। এ ছাড়া তিনি লেটেষ্ট মডেলের গাড়ি ব্যবহার করেন। তার ছেলে মেয়ে আমেরিকায় লেখা পড়া করে। গ্রামের বাড়ী পাবনাতে নাকি ২০০ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। এ বিষয়ে আমাদের অনুসন্ধান চলছে। দুদকের অভিযোগ মতে তিনি একাধিক ব্যবসাদেও অর্থ লগ্নি করেছেন। অন্তত: ৫ টি বেসরকারী ব্যাংকে তার ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এসব ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখা হয়েছে। তিনি আমেরিকা ও কানাডায় দুটি বাড়ী ক্রয় করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি এলোটি না হয়েও বিআইডব্লিউটিএর একখানা গাড়ী সার্বক্ষনিক ব্যবহার করেন। এছাড়া তার স্ত্রীর ব্যবহারের জন্য রয়েছে লেটেষ্ট মডেলের আলাদা গাড়ি। তার স্ত্রীর চাল চলন দেখলে মনে হয় তিনি কোন শিল্পপতির স্ত্রী। এর আগে বিআইডব্লিউটিএর একজন চেয়ারম্যানের সাথে তার কলংক রটেছিল বলে বিআইডব্লিউটিএ ভবনে গুঞ্জন আছে।

আইন ও এস্টেট পরিচালক পদ দখল : নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের স্মারক নং- ১৮.০০.০০০০.০১৯.১৮.০১৩.২১-২৯৫, তারিখ:২৬ ডিসেম্বর ২০২৩। পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে: উপযুক্ত বিষয় ও সুত্রস্থ পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে মো: মশিউর রহমান তালুকদার উপসচিব স্বাক্ষরিত পত্রে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)-এর সাংগঠনিক কাঠামোতে এস্টেট ও আইন বিভাগের জন্য অর্থ বিভাগ থেকে ১৬/০৮/২০২৩ তারিখের ১৬৮নং স্মারকের মাধ্যমে ১২টি পদ সৃজনে সম্মতি প্রদান করা হয়েছে। পদগুলোর মধ্যে ০২টি উপপরিচালক উপ-পরিচালক (এস্টেট)-০১টি, উপপরিচালক (আইন)-০১টি] এর পদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া, প্রতিষ্ঠানটি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বেতনভাতা প্রদানের জন্য সরকারের বাজেট সহায়তার উপর নির্ভরশীল।

এমন পরিস্থিতিতে, পদ সৃজনে সরকারের আর্থিক সংশ্লেষের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত পরিচালক পদ এবং পরিচালকের সহায়ক পদ হিসেবে ব্যক্তিগত সহকারী এবং অফিস সহায়ক পদ সৃজনে অর্থ বিভাগের অসম্মতি জ্ঞাপন করা হয়।

আইন ও এস্টেট পরিচালক পদ সৃজনে অর্থ মন্ত্রনালয়ের অসম্মতি জানিয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয় থেকে বিআইডব্লিউটিএ কে পত্র: নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয় টি শাখা ১৫ এপ্রিল ২০২৪ এর স্মারক নং- ১৮.০০.০০০০.০১৯.১৮.০১৩.২১.১০৩ এ বিআইডব্লিউটিএ সাংগাঠনিক কাঠামোতে এষ্টেট ও আইন বিভাগের জন্য বছর বছর সংরক্ষনের ভিত্তিতে অস্থায়ী ভাবে ০৩ পদ সৃষ্টিতে সম্মতি জ্ঞাপন সংক্রান্ত একটি পত্র দেন।

উক্ত পত্রে অর্থ বিভাগের সূত্র :  পত্র নং-০৭.০০.০০০০.১২৬.০০.০০৮ (অংশ-১) ২২.৭৯ তারিখ ২১.৩.২০২৪ এক পত্রে বিআইডব্লিউটিএ সংগাঠনিক কাঠামোতে এষ্টেট ও আইন বিভাগের জন্য ০৩ (তিন) ক্যাটাগরির ০৩ (তিন) টি পদ পরিচালক এর ০১ টি, সাঁটলিপিকারের (ব্যক্তিগত সহকারী) ০১টি এবং অফিস সহকারী ০১টি, রাজস্বখাতে অস্থায়ী ভাবে সৃজনের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রনালয়ের সম্মতি প্রদানের জন্য অর্থ বিভাগ,অর্থ মন্ত্রনালয় গত ১৬-১২-১০২৩ তারিখ অনুরোধ করা হয়।

তদপ্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগ পদ সৃজনে সরকারের আর্থিক সংশ্লেষের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রম্ভাবিত পরিচালক পদ এবং পরিচালকের সহায়ক পদ হিসেবে ব্যক্তিগত সহকারী এবং অফিস সহকারী এবং অফিস সহায়ক পদ সৃজনে অসম্মতি জ্ঞাপন করেছে। অথচ বিআইডব্লিউটিএ ওয়েব সাইট ঘেঁটে করে দেখা গেছে ল্যান্ড এস্টেট বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হিসেবে এ তার নাম রয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *