নিজস্ব প্রতিবেদক : ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার নতুন মেয়র ও কাউন্সিলরদের শুরু থেকেই তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, মশা যেন ভোট খেয়ে না ফেলে। মশা ক্ষুদ্র হলেও অনেক শক্তিশালী এটা মাথায় রাখতে হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত ২ মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে সমস্যা। এখন থেকেই এই মশা নিয়ন্ত্রণে সবাইকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেদিকেও আপনাদের (নতুন মেয়র ও কাউন্সিলরদের) দৃষ্টি দিতে হবে। মশা আপনার ভোট যেন খেয়ে না ফেলে। মশা ক্ষুদ্র হলেও অনেক শক্তিশালী এটা মাথায় রাখতে হবে। সেদিকে আপনারা বিশেষভাবে নজর দেবেন। যেন সঠিক ভাবে এটা (মশা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ প্রয়োগসহ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ) করা হয়।
করোনো ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাঝেমধ্যে একেকটা ঝামেলা আসে। এখন যেমন করোনা ভাইরাস দেখা দিয়েছে। এর থেকে কীভাবে বাংলাদেশকে মুক্ত করা যায় তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, এখনও আমাদের দেশে (করোনা ভাইরাস) আসেনি। কিন্তু এরকম যদি দেখা যায় সে জন্য আমরা ডেডিকেডেট একটা হাসপাতাল আলাদা করে দিয়েছি। সেখানে নার্স, ডাক্তার যারা সার্ভিস দেবে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, তাদের জন্য পোষাক, তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা, সেগুলো করছি। সঙ্গে সঙ্গে যে নির্দেশনাগুলো যাচ্ছে সবাইকে তা মেনে চলতে হবে।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতেও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফসলের জমি নষ্ট না করে পরিকল্পিত নগরায়ন করা হবে।
‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে এবার পুষ্টি নিশ্চিত করা হবে। স্বাস্থ্যসম্মত আবাসন নির্মাণ করা হবে বস্তিবাসীর জন্য তারা এখনকার মতো এমন ভারা দিয়ে থাকবে।’
উন্নয়ন প্রকল্পের বাজেট যথাযথভাবে কাজে লাগছে কি না তা নজরদারিতে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যাক্তিসার্থের উর্ধ্বে থেকে জনগনের জন্য নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দেন শপথগ্রহণকারীদের।
দুর্নীতি যেন উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে সতর্ক করে তিনি বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। স্থানীয় সরকারকে আরো শক্তিশালী করা হবে। যার যার বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিজেদের অর্জন করতে হবে।
এর আগে এদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে শপথ নিয়েছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নব-নির্বাচিত ২ মেয়র ও কাউন্সিলররা।
প্রথমে দুই মেয়রকে শপথবাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই অনুষ্ঠানে ২ সিটির সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ১৭২ জন কাউন্সিলকে শপথ পাঠ করান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
শপথ নিলেও আইনি জটিলতায় এখনই চেয়ারে বসতে পারছেন না মেয়ররা। আগামী মে মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে তাদের।
প্রসঙ্গত গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত দুই মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হন। এরপর গত ৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের নাম-ঠিকানাসহ গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর মেয়র বা কাউন্সিলরদের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে সরকার বা সরকারের মনোনীত কর্তৃপক্ষ মেয়র ও সব কাউন্সিলরের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করবে।
এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস জয়ী হয়েছেন পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে; তিনি পেয়েছিলেন ৪ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৫ ভোট, তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাক হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫১২ ভোট।
ঢাকা উত্তরেও পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম; নৌকায় তার ৪ লাখ ৪৭ হাজার ২১১ ভোটের বিপরীতে বিএনপির তাবিথ আউয়াল ধানের শীষে পেয়েছেন ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৬১ ভোট।
দক্ষিণে ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ভোটারের মধ্যে মাত্র ২৯ শতাংশ ভোট দেন। অন্যদিকে উত্তরে ভোটের হার ছিল ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ।