গোপালগঞ্জ হাসপাতালে টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা সনদ পরিবর্তনের অভিযোগ 

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত খুলনা গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

মোঃ সাইফুর রশিদ চৌধুরী :  গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা সনদ পরিবর্তন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর চিকিৎসা সনদ পরিবর্তন করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে  অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।


বিজ্ঞাপন

দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটিতে প্রভাবশালী একটি চক্র প্রকাশ্যে সার্টিফিকেট বাণিজ্য করলেও অজানা কারণে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্ৰহণ করেনি হাসপাতাল কতৃপক্ষ। অবশেষে এবিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, দূর্নীতি দমন কমিশন ও গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। শান্ত শিকদার (১৪) নামের এক বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছাত্রের মা হ্যাপি বেগম এ অভিযোগ করেন।


বিজ্ঞাপন

ভুক্তভোগী শান্ত সিকদার   গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাইক কান্দি গ্ৰামের মোঃ তৌফিক সিকদারের ছেলে। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২২সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে শান্ত শিকদার (১৪) নামের বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছেলেকে পাইক কান্দি এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল মিথ্যা টাকা চুরির অভিযোগ তুলে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করার পর হত্যার উদ্দেশ্যে মুখে বিষ ঢেলে দেয়। পরে প্রতিবন্ধী শান্ত কে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।

জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ বিচিত্র কুমার বিশ্বাসের নির্দেশনায় হাসপাতালের কর্মচারী বিকু মোল্লা ও আলমগীর শিকদারসহ আরো অচেনা কয়েকজন আমার ছেলেকে বিষ মুক্ত করার জন্য ওয়াশ করে। ওয়াশ করার পর রোগির অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফার করে। ওইদিনই প্রতিবন্ধী শান্ত কে সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং দীর্ঘ ১০দিন যাবৎ চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ্য  করা হয়। এঘটনায় বিচার পেতে ভিকটিমের মা হ্যাপি বেগম ২৭ আগষ্ট ২০২৪ তারিখে গোপালগঞ্জ সদর থানার একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-২৫ তারিখ- ২৭আগষ্ট ২০২৪।

পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট মেডিকেল সার্টিফিকেট তলব করেন। এসময় ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় সোহেল শেখ আসামি পক্ষের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে সার্টিফিকেট প্রদানের সঙ্গে জড়িত ডাঃ বিচিত্র কুমার বিশ্বাস, ডাঃ সামিয়া সুলতানা, ডাঃ আব্দুল্লাহ আল রাজীব, আরএমও ফারুক আহাম্মেদ ও উপ-পরিচালক ডাঃ জীবিতেষ বিশ্বাস কে ম্যানেজ করে রোগীকে বিষ প্রয়োগ করা হয়নি মর্মে বানোয়াট একটি সার্টিফিকেট প্রদান করান।

অভিযোগ এর কপি

 

প্রতিবন্ধী শান্তর মা সাংবাদিকদের আরো জানান, এই বানোয়াট সার্টিফিকেটের জন্য আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার পথে। ওয়ার্ড বয় সোহেলের মাধ্যমে অন্যান্য ঘুষখোর ডাক্তার গণ টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট প্রদান করেছে। নানা অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকায় সোহেল শেখের বিরুদ্ধে এর আগেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

এবিষয়ের অনেক প্রমাণ আমি সংরক্ষণ করেছি। আমি লোক মাধ্যমে জানতে পেরেছি ওয়ার্ড বয় সোহেল শেখ তার নির্ধারিত ডিউটি না করে শুধু সার্টিফিকেট বাণিজ্য  করেই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। পাচুড়িয়া ও শিশু বনে করেছেন একাধিক বাড়ি, গোপালগঞ্জ ও ঢাকায় কিনেছেন ফ্লাট। তার স্ত্রী ও নিজের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে জমিয়েছেন টাকা।

এবিষয়ে আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, দূর্নীতি দমন কমিশন ও গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে আমি  লিখিত অভিযোগ করেছি। সকল প্রমাণ আমি তদন্তের সময় উপস্থাপন করবো, আশাকরছি সার্টিফিকেট বানিজ্যের সঙ্গে জড়িত ওয়ার্ড বয় সোহেল শেখ সহ সকলেই শাস্তির আওতায় আসবে।

এসকল অভিযোগের বিষয়ে ওয়ার্ড বয় সোহেল শেখ, ডাঃ বিচিত্র কুমার বিশ্বাস, ডাঃ সামিয়া সুলতানা, ডাঃ আব্দুল্লাহ আল রাজীব, আরএমও ফারুক আহাম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, রোগীর মা তার কাঙ্খিত মেডিকেল সার্টিফিকেট না পেয়ে আমাদের দোষারোপ করছে।

সহকারী পরিচালক ডাঃ জীবিতেষ বিশ্বাস জানান আমারা কোন অনিয়ম করিনি। প্রথম যে রিপোর্ট এসেছিল সেটি রোগীর অভিবাবকদের আপত্তির কারণে বোর্ড গঠন করে পুনর্মূল্যায়ন এর পর তদন্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে আদালতে পাঠানো হয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *