নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরা ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে (বিএলএসডিসি) সফল প্রশিক্ষণ শেষে সনদ পেলেন ৪০ জন প্রশিক্ষণার্থী।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচির (সিভিডিপি) আওতায় (তৃতীয় পর্যায়) ৬০ দিনব্যাপী বাস্তব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সনদ অর্জন করেন তারা। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) বিএলএসডিসি মিলনায়তনে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে সনদ তুলে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি (সিভিডিপি) উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. তৌহিদুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার মোহাম্মদ তাইবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বসুন্ধরা ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (বিএলএসডিসি) ইনচার্জ মেজর (অব.) মো. গোলাম হায়দার।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রজেক্টে বিএলএসডি সেন্টারে দুই মাসব্যাপী (৩১২ ঘণ্টা) এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। যেখানে প্লাম্বিং অ্যান্ড পাইপ ফিটিংস (লেভেল-২) বিষয়ে অংশগ্রহণকারীরা আধুনিক শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী কার্যকর দক্ষতা অর্জন করেন।
এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য পদ্ধতি প্রয়োগ; পেশাগত পরিবেশে কার্যকর যোগাযোগ ও দলগত কাজের দক্ষতা; পাইপ ইনস্টলেশনের জন্য হাতিয়ার ও পাওয়ার টুল ব্যবহারের জ্ঞান; পাইপ জোড়া লাগানো, পানি সরবরাহ ও বর্জ্য জলের পাইপলাইন ইনস্টলেশন; প্লাম্বিং ফিক্সচার ইনস্টলেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণের ওপর প্রশিক্ষণ অর্জন করেন।
এই কর্মসূচিতে তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়েছে বসুন্ধরা ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট, যা অংশগ্রহণকারীদের শিল্পে কাজের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে তুলেছে।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে গুণগত পেশাগত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং দক্ষতা ঘাটতি দূর করাই এই কর্মসূচির লক্ষ্য। বসুন্ধরা গ্রুপের সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ দেশের স্থায়ী উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচির (সিভিডিপি) উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. তৌহিদুল হক বলেন, বাংলাদেশের একটি ইউনিক প্রকল্প হচ্ছে সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি। এর সৌন্দর্য হচ্ছে প্রশিক্ষণার্থী বাছাই। গ্রামে সমবায় সমিতির মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থী বাছাই করা হয়। সমবায় সমিতির মাধ্যমে গ্রামের মানুষের পুঁজি জমছে, অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি আরও বড় হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে থাকে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের মানুষ তাদের সন্তানদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কীভাবে দক্ষ করা যায়, সেজন্য সমবায়ের কর্মীদের কাছে আসছেন।
গ্রামের সাধারণ সমবায়ীরা প্রকল্প দীর্ঘায়িত করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকল্পের কার্যক্রমের সময় বাড়লে ভবিষ্যতে সমবায়ীদের হয়তো আবারও এখানে নিয়ে আসব। আর কেরানীগঞ্জ উপজেলায় কার্যক্রম যেন পরবর্তী ধাপে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, সে চেষ্টা অব্যাহত রাখব।
প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে তৌহিদুল হক বলেন, প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় যুবকরা সাফল্য দেখাচ্ছেন। আমি আশা করি আপনারাও সাফল্য দেখাবেন। আপনারাও প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ধরে রাখার চেষ্টা করবেন।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার তাইবুর রহমান বলেন, আমরা প্রকল্পের মাধ্যমে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। সরকার আপনাদের দক্ষ করে তোলার জন্য বিশাল অংকের টাকা ব্যয় করছে। বেকার যুবকদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পারলে অর্থনীতির চাকা সচল হবে হবে, দেশ উপকৃত হবে।
তিনি বলেন, বেকার যুবকরা যখন বিদেশে যায়, প্রশিক্ষণ না থাকায় ও তারা দক্ষ না হওয়ায় মজুরিও কম পায়। তাতে যে পরিমাণ আয় হয় তা খুব বেশি না। আর প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে গেলে সহজে কাজ পাওয়া যায় এবং ভালো বেতন দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণ নিয়ে আপনারা যদি বিদেশে যান তাহলে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে বেতনও বেশি পাবেন। এতে অল্প দিনের মধ্যে সফল হবেন।
প্রকল্পের আওতায় আমাদের ৩৮টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় জানিয়ে তাইবুর রহমান বলেন, আপনারা উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের অফিসে যোগাযোগ করবেন। সরকারের উদ্যোগগুলো প্রচার করবেন। সরকারের সঙ্গে সহযোগী হয়ে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তিনি বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান।
স্বাগত বক্তব্যে বিএলএসডিসি) ইনচার্জ মেজর (অব) মো. গোলাম হায়দায় বলেন, সরকার বেকার যুবসমাজকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য, কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে তোলার চেষ্টা করছে। দক্ষ করে বিদেশে পাঠালে কয়েকগুণ বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে তারা ব্যাপক ভূমিকা পালন করবেন। এই প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরির বাজারে আলাদা অগ্রাধিকার পাবেন বলে বিশ্বাস করি।
প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে বক্তব্য দেন মশিউর আলম। তিনি বলেন, দুই মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা দক্ষ হয়েছি। আমরা বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানাই আমাদের পাশে থাকার জন্য। এখানে মনোরম পরিবেশে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আমাদের খেলার মাঠও দিয়েছে।
প্রশিক্ষণকালে সফলতার জন্য পুরস্কার পান শরিয়তপুরের আফজাল হোসেন, রায়হান, ইব্রাহিম, মাদারীপুরের ইসমাইল মোল্লা, সাগর, তরিকুল ইসলাম, মো. সিয়াম, আলী আশরাফী, ফারুক হোসেন, মহসিন উদ্দীন, মানিক তালুকদার, মোহাম্মদ উল্লাহ।
বসুন্ধরা ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার সম্পর্কে:
বিএলএসডিসি অত্যাধুনিক পেশাগত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রতিভা বিকাশে নিবেদিত। বসুন্ধরা রিভারভিউ, কেরানীগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত এই সেন্টার কারিগর শিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীর জন্য একটি অনুপ্রেরণার নাম।
বসুন্ধরা ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার নতুন প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের উদ্যোগের মাধ্যমে ভালো কাজ করে চলেছে। ইতোমধ্যেই সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচির প্রথম ধাপে ৮০ জন অংশগ্রহণকারী সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে অত্যন্ত সন্তুষ্ট জনক ফলাফল অর্জন করেন। যার মধ্যে পাম্বিং অ্যান্ড পাইপ ফিটিংস (পিপিএফ) বিষয়ে ৪০ জনের মধ্যে ৩৭ জন প্রশিক্ষণার্থী এবং ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স (ইআইএম) প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকৃত ৪০ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৮ জন অত্যন্ত ভালো ফলাফলের সাথে কৃতকার্য হয়েছেন।
প্রশিক্ষণার্থীদের এই ফলাফল বসুন্ধরা ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এর জন্য অত্যন্ত গর্বের। এখন পর্যন্ত প্রায় ১২০ জন শিক্ষার্থী বিএলএসডিসি-এর মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণটি সফলভাবে সম্পন্ন করে। প্রশিক্ষণটির দ্বিতীয় ধাপে অংশগ্রহণকারী ৪০ জনের মধ্যে প্রত্যেকের সন্তোষজনক ফলাফলের মাধ্যেমে প্লাম্বিং অ্যান্ড পাইপ ফিটিংস (লেভেল-২) এর অর্জিত ফলাফলে পাসের হার ১০০ শতাংশ।
এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের দেশে এবং বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া দক্ষ জনশক্তি তৈরির মাধ্যমে একটি উন্নত বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণেও ভূমিকা রেখেছে এবং একইভাবে সামনেও কাজ করার লক্ষ্যে বসুন্ধরা ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার বদ্ধপরিকর।