গোপালগঞ্জে বাড়ি এবং টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সে জমি দিয়েছেন এমন পরিচয়ে এই শাহীন কোনো মন্ত্রী-এমপি তো দূরের কথা প্রধানমন্ত্রী ও শেখ সেলিমের বাইরে কারো ফোনই ধরতেন না। ৭ বছর সচিবের দায়িত্ব পালনের পর শহীদুল্লাহ খন্দকারের চুক্তির মেয়াদ না বাড়িয়ে গোপালগঞ্জের আরেক অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিনকে পূর্ত সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরবর্তীতে আরও এক বছরের চুুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুর্র্ধষ ক্যাডার কাজী ওয়াসি উদ্দিন নিয়মের কোনো তোয়াক্কা করতেন না। তিনি সচিব পদে বসেই একের পর এক বদলি, প্লট কেলেঙ্কারি আর আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বাদ যায়নি তার বাসা ভাড়া নিয়ে কেলেঙ্কারিও।মন্ত্রিপাড়ায় ডুপ্লেক্স বাড়িতে থেকে মাত্র ৫ হাজার ৮শ’ ৫০ টাকা ভাড়া দিতেন এই দুনীতিবাজ সচিব। এদিকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রাশিদুল হাসানের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির প্রতিবেদন দিয়েছিল খোদ রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা। মিরপুরের দুয়ারীপাড়ার একটি অবৈধ উচ্ছেদের নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ, নিজ নামে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায় ৮৮ ফ্ল্যাট প্রকল্প, লালমাটিয়ায় কমিউনিটি সেন্টারের বাণিজ্যিক ফ্লোরে পজিশন হাতিয়ে নেওয়া, তেখাদিয়া প্রকল্পে নকশা বদল করে ঠিকাদারকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে বাঁচিয়ে দেওয়া, চাহিদা মাফিক অর্থ না পেলে ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করা, নিজ পছন্দের কর্মকর্তাকে বসিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে অর্থ নেওয়া, ১০০ কোটি টাকার কাজ মোহাম্মদপুর প্রকল্পে ৫ ভাগ বাড়িয়ে চারটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ বিস্তর অভিযোগ থাকলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইওে রয়ে গেছেন এসব কর্মকর্তারা।
নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কিছু সংখ্যক আমলা ও প্রকৌশলী ও ঠিকাদাররা মিলে ‘গোপালগঞ্জ সিন্ডিকেট’ তৈরি করে লুটপাটের রামরাজত্ব তৈরি করেছিল। যারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।
এই লুটপাটের নেতৃত্ব দিয়েছেন সাবেক গণপূর্ত সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন, শহীদুল্লাহ খন্দকার ও ওয়াসি উদ্দিন। যার মধ্যে দু’জনই গোপালগঞ্জে এবং একজন শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবির হোসেনের বেয়াই। মূলত: গোপালী সিন্ডিকেট অনিয়ম, দুর্নীতি, টেন্ডার বাণিজ্য, প্লট বাণিজ্য, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য করে পুরো মন্ত্রণালয়কে ও অধিদপ্তরগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে।
গত ২০০৮ সালের ২৯ ডিস্বেরের নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হন আব্দুল মান্নান খান। তার বেশুমার দুর্নীতি ও তার ক্যাশিয়ার ইকবালের কারনে অনিয়ম ও দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয় মন্ত্রণালয়টি। এরমধ্যে এ্যাডভোকেট ইকবালকে রাজউকের উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে শত শত কোটি টাকার প্লট বাণিজ্য করেন। যার সঙ্গে যুক্ত ছিল রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার নূরুল হুদা।
তৎকালীন সচিব ও শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবিরের বেয়াই ড. খন্দকার শওকত হোসেন পুরো সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ সময়ে তাদের সহযোগী ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরী, সদস্য নসরুল হামিদ বিপু, তৎকালীন হুইপ নূর ই আলম চৌধুরীসহ অনেকেই। এ সময়ে রাজউকের পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দিয়ে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য করে এই সিন্ডিকেট। এ সময়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন গোপালগঞ্জে শহীদুল্লাহ খন্দকার। এখানেই তিনি অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার ঘুষ ও দুর্ণীতি করে তার অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ছেলের কাছে পাঠাতে থাকেন। এ সময়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেনসহ গুলশানের ওয়েস্টিন হোসেন, রাজউকের বিভিন্ন প্লট, গুলশানের একটি প্লটকে চারটি ভাগ করে বরাদ্দ দেয়া, উত্তরার তৃতীয় প্রকল্পসহ উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরের শূন্য প্লটগুলো বরাদ্দ দিয়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
গুলশানের নূর আলীর ওয়েস্টিনের অবৈধ নির্মাণকে বৈধতা দিয়ে এখন তিনি ইউনিক গ্রুপে চাকরি নিয়েছেন। আব্দুল মান্নানের সময়েই গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদ নিয়ে একের পর এক টানা হ্যাচড়া ও কোটি কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয়। এ সময়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরে এক সময়ে চার হাজার টাকা ভাড়ায় থাকা বটতলার উকিল হিসেবে পরিচিত আব্দুল মান্নান ও তার স্ত্রী হাসিনা সুলতানা এতোই অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন যে, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা বিচাররাধীন রয়েছে।
গত ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী নিযুক্ত হন। তাকে কেন্দ্র করে নতুন সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। তাঁর সময়েই চার চারজন প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগ দেয়া হয় গণপূর্ত অধিদপ্তরে। তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের শেষ দিনেও অর্ধশত কোটি টাকা নিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরে প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগ দিয়ে রেকর্ড গড়েন। এ সময়ে চুয়েট ছাত্রলীগ নেতা ও চট্টগ্রামের বাসিন্দা শওকত উল্লাহ ও উৎপল কুমার দে’র নেতৃত্বে দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী চক্র গড়ে ওঠে। যাতে সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত মো. ফজলুল হক মধুসহ একটি চক্রের যোগসাজসে টেন্ডার ও বদলি বাণিজ্যে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয় গণপূর্ত অধিদপ্তর।
এ সময়ে যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের নেতৃত্বে টেন্ডার সিন্ডিকেট গড়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।শেরেবাংলানগর-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক মধু কাজ না করিয়েই জি কে শামীমকে ১০ কোটি টাকা বিল প্রদানের বিষয়টি পরে প্রমাণিতও হয়েছে। ২০১৮ সালের রাতের ভোটের পরে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী হন শ ম রেজাউল করিম। যিনি ‘টকশো রেজাউল’ নামেই বেশি পরিচিত। দায়িত্ব নিয়েই তার দুই ভাইসহ গণপূর্তের এই দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটকে নিয়ে বাণিজ্যে মেতে উঠেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে তদন্তনাধীন থাকার পরেও শুধুমাত্র রুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন এই পরিচয়ে প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দেয়া হয় মো. আশরাফুল আলমকে।
কথিত আছে এই নিয়োগে ৩৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। পরে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি অবগত হওয়ার পরে এই মন্ত্রী ও প্রধান প্রকৌশলী দুজনকেই সরিয়ে দেয়া হয়। ইতিমধ্যে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা মেট্টোপলিটন জোনের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে’কে বরখাস্ত করা হয়। এরই মধ্যে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব হন মো. শহীদুল্লাহ খন্দকার। গোপালগঞ্জে বাড়ি এই পরিচয়ে তিন দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পর শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি ছিলেন তিনি।
এ সময়ে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর গুলোতেই শহীদুল্লাহ খন্দকারই হয়ে ওঠেন শেষ কথা। সকল নিয়োগ-বদলি পদোন্নতি ও টেন্ডার বাণিজ্যের হোতা ছিলেন তিনি। তার নামে ঢাকা শহরে পোস্টারও হয়েছে। পাবলিক লাইব্রেরীর টেন্ডার ১৭ শতাংশ বেশি দরে দিয়ে ২৫ শতাংশ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি, সাবেক সচিব শাহ কামালের সঙ্গে ধরা পড়া মো. নুসরাত হোসেন। এ সময়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দণ্ডমুন্ডের কর্তা হয়ে যান পিআরও থেকে প্রকল্প পরিচালক হয়ে যাওয়া শেখ শাহীন। প্রধান প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিকসহ একটি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট রাজউকে প্লট বরাদ্দ, ক্যাটাগরি পরিবর্তন, সংসদ সদস্য শেখ হেলালসহ অনেক এমপিকে নীতিমালার বাইরে প্লট দেয়াসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।
গোপালগঞ্জে বাড়ি এবং টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সে জমি দিয়েছেন এমন পরিচয়ে এই শাহীন কোনো মন্ত্রী-এমপি তো দূরের কথা প্রধানমন্ত্রী ও শেখ সেলিমের বাইরে কারো ফোনই ধরতেন না। ৭ বছর সচিবের দায়িত্ব পালনের পর শহীদুল্লাহ খন্দকারের চুক্তির মেয়াদ না বাড়িয়ে গোপালগঞ্জের আরেক অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিনকে পূর্ত সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়।
পরবর্তীতে আরও এক বছরের চুুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুর্র্ধষ ক্যাডার কাজী ওয়াসি উদ্দিন নিয়মের কোনো তোয়াক্কা করতেন না। তিনি সচিব পদে বসেই একের পর এক বদলি, প্লট কেলেঙ্কারি আর আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বাদ যায়নি তার বাসা ভাড়া নিয়ে কেলেঙ্কারিও।মন্ত্রিপাড়ায় ডুপ্লেক্স বাড়িতে থেকে মাত্র ৫ হাজার ৮শ’ ৫০ টাকা ভাড়া দিতেন এই দুনীতিবাজ সচিব।
এদিকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রাশিদুল হাসানের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির প্রতিবেদন দিয়েছিল খোদ রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা। মিরপুরের দুয়ারীপাড়ার একটি অবৈধ উচ্ছেদের নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ, নিজ নামে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায় ৮৮ ফ্ল্যাট প্রকল্প, লালমাটিয়ায় কমিউনিটি সেন্টারের বাণিজ্যিক ফ্লোরে পজিশন হাতিয়ে নেওয়া, তেখাদিয়া প্রকল্পে নকশা বদল করে ঠিকাদারকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে বাঁচিয়ে দেওয়া, চাহিদা মাফিক অর্থ না পেলে ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করা, নিজ পছন্দের কর্মকর্তাকে বসিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে অর্থ নেওয়া, ১০০ কোটি টাকার কাজ মোহাম্মদপুর প্রকল্পে ৫ ভাগ বাড়িয়ে চারটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ বিস্তর অভিযোগ থাকলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইওে রয়ে গেছেন এসব কর্মকর্তারা।
ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতন হলে অন্তবর্তীকালীন সরকার এখনও এদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। এসব বিষয়ে দৃষ্টি না দিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন প্রকৌশলীদের বদলির বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের আগ্রহ বেশি দেখা গেছে।
ইতিমধ্যে তাদের সুপারিশের প্রেক্ষিতে ৮জন প্রকৌশলী বদলি করা হয়েছে। আরো অনেক প্রকৌশলী বদলির অপেক্ষায় রয়েছেন। যার মধ্যে দুর্নীতির কারনে অভিযুক্তরাও নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে ভালো পোস্টিং ভাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন।