গাড়ীচালক হাবিবুর রহমানের বিদায় সংবর্ধনায় সততার পুরস্কার স্বরুপ এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন যশোরের জেলা প্রশাসক 

Uncategorized ইতিহাস ঐতিহ্য খুলনা গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

সুমন হোসেন, (যশোর) :  মো: হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘ ৪০ বছর গাড়িচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কর্মরত ছিলেন যশোর জেলা প্রশাসকের ‘ডিসি পুলের’। কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি জেলা প্রশাসকের গাড়িচালক হিসেবেই দায়িত্ব পালন করেছেন। মঙ্গলবার ছিল তার শেষ কর্মদিবস।


বিজ্ঞাপন

এদিন তাকে জেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দেয়। বিদায় বেলায় যশোর কালেক্টরেট চত্বর থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে হাবিবুর রহমানকে তার বাড়ি পৌঁছে দেন জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম।


বিজ্ঞাপন

এ সময় জেলা প্রশাসক ছিলেন চালকের আসনে। আর গাড়ির ভেতরে প্রশাসকের আসনে বসেন হাবিবুর রহমান।

একজন গাড়িচালকের বিদায় বেলায় এমন বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় প্রশংসায় ভাসছেন জেলা প্রশাসক। এভাবে সম্মানিত হতে পেরে আবেগাপ্লুত হাবিবুর ও তার স্বজনরাও।

সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মচারী হিসেবে সুনামের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন হাবিবুর রহমান। ২০২২ সালে জেলাপর্যায়ে শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত হন হাবিবুর রহমান। জেলা প্রশাসনের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা বলেছেন, সততার দৃষ্টান্ত সরকারি গাড়িচালক হাবিবুর রহমান।

জানা গেছে, হাবিবুর রহমান ১৯৮৫ সাল থেকে যশোর জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে যশোরের জেলা প্রশাসকের গাড়ি চালিয়ে তিনি গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন। জেলার রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলির নীরব সাক্ষী হিসেবে তিনি পরিচিত। হাবিবুর রহমানের পৈতৃক বাড়ি যশোর শহরের মিশনপাড়া এলাকায়। এভাবে জেলা প্রশাসক তাকে সম্মানিত করবেন কখনো ভাবেননি হাবিবুর রহমান।

আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনা জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। আনন্দে আমি কেঁদে ফেলেছি। সব সময় পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করেছি।

তিনি বলেন, ৪০ বছর ধরে আমি জেলা প্রশাসক স্যারদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছি। চাকরিজীবনের শেষ দিনে স্যার চালকের আসনে বসে নিজে গাড়ি চালিয়ে আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন। পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছে আমার সম্মান অনেকগুণ বেড়ে গেছে। অধস্তন কর্মীদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হয়, সেটা ডিসি স্যারকে দেখে সবার শেখা উচিত।

হাবিবুর রহমানের বিদায় সংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, সততা ও নৈতিকতার প্রশ্নে আপসহীনতার যে দৃষ্টান্ত হাবিবুর স্থাপন করেছেন, তা সত্যিই বিরল। তিনি দীর্ঘ চাকরি জীবনে নিজেকে সততা ও কর্মনিষ্ঠার মূর্ত প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তি ও চাকরি জীবনে হাবিবুর রহমানের আদর্শ অনুসরণের আহবান জানান তিনি। সরকারি গাড়িচালকদের সততার দৃষ্টান্ত হাবিবুর রহমান। সরকারি কর্মকর্তা যাদের গাড়ি রয়েছে তাদের গাড়িপ্রতি মাসে ১৮০ লিটার তেল বরাদ্দ থাকে।

এই তেলের বেশিরভাগ চালকদের লুটপাটের অভিযোগ থাকে। জেলা প্রশাসকের গাড়িচালক এই ১৮০ লিটারের বাইরেও বিভিন্ন অজুহাতে আরও সমপরিমাণ তেল নেওয়ার ঘটনাও ঘটে; কিন্তু হাবিবুর রহমান দীর্ঘ চাকরি জীবনে নিজেকে সততা ও কর্মনিষ্ঠার মূর্ত প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তার তথ্যমতে, হাবিবুর রহমান তার বরাদ্দের তেলেই মাস শেষ করতেন। এ কারণে ২০২২ সালের ২৭ জুলাই যশোরে জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারপ্রাপ্ত হন গাড়িচালক হাবিবুর রহমান। শুদ্ধাচার পুরস্কার তুলে দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।

এ বিষয়ে যশোরের সাবেক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, আমার চাকরি জীবনে হাবিবুর রহমানের মতো সৎ মানুষ দেখিনি।

সাধারণ গাড়িচালকরা তেল চুরি করাটাও পেশা হিসাবে ধরে; কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন হাবিবুর রহমান। সরকারি গাড়িতে মাসে ১৮০ লিটার তেল বরাদ্দ থাকে। উনি যশোরের মতো একটি বড় জেলার জেলা প্রশাসকের গাড়িচালক। ব্যস্ততম জেলা যশোরের ডিসি স্যারকে পুরা জেলায় চলাচল করতে হয়।

অথচ তার গাড়িতে যা তেল লাগে এটা অকল্পনীয়। অবিশ্বাস্য। তিনি যতটুকু তেল লাগে ততটুকুই তেল নেন। গত মঙ্গলবার হাবিবুর সাহেবের সঙ্গে কথা হয়েছে। তার অবসরের কথা শুনে মনটা কিছুটা খারাপ।

সততার উদাহরণ হিসেবে তাকে নিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রামে তার উদাহরণ টানি। গাড়িচালকদের ট্রেনিংয়ে সততার উদাহরণ দেখাতে হাবিবুর রহমানকে নিয়ে যাওয়া উচিত। তিনি সরকারি গাড়িচালকদের সততার দৃষ্টান্ত।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *