নিজস্ব প্রতিনিধি (সিলেট) : নতুন বাঁকে যাচ্ছে সুনামগঞ্জ জেলা যুবদলের নেতৃত্ব। বিএনপি’র জেলা আহ্বায়ক কমিটিতে যুক্ত হওয়ায় জেলা যুবদলের সভাপতি আবুল মুনসুর শওকতকে বুধবার বিকেলে অব্যাহতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদল। এরপরই যুবদলের নেতৃত্বে কে আসছে, এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালের তিন জুন সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবুল মুনসুর শওকতকে সভাপতি, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুর রশিদ আমিনকে সিনিয়র সহ সভাপতি এবং সাবেক ছাত্রদল নেতা অ্যাড. মামুনুর রশিদ কয়েছ ও তোফাজ্জল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদক এবং কামরুল হাসান রাজুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। তিন মাসের মধ্যেই এই কমিটিকে ২০১ সদস্যে উন্নীত করে অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় যুবদল। দুই বছরের এই কমিটি ছয় বছর পার করেছে। এখন সভাপতি সক্রিয় হয়েছেন বিএনপি’র রাজনীতিতে।
তাঁকে ৩২ সদস্যের জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে যুক্ত করা হয়েছে। জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি আমিনুল রশিদ আমিনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে বুধবারই দায়িত্ব দিয়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি ও সম্পাদক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।
এই অবস্থায় যুবদলের নতুন নেতৃত্বে কে আসছে এই আলোচনা চলছে বিএনপি’র গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গ সংগঠনের তরুণদের মধ্যে।
বৃহস্পতিবার জেলা যুবদলের একাধিক নেতা এই প্রতিবেদককে বলেছেন, তারা আগে থেকেই কমিটি ভেঙে নতুন নেতৃত্ব দেবার দাবি জানিয়ে আসছেন। এখন এই দাবি আরও জোরালো হবে।
জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান রাজু বললেন, দুই বছরের কমিটি ছয় বছর পূর্ণ করেছে। আমরা চাই নয়া নেতৃত্ব। এর আগেও আমরা এই দাবি জানিয়েছি। অপরদিকে জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিনুর রশিদ আমিন বললেন, আমাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ায় কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি যতদিন দায়িত্বে থাকবো, সকলকে নিয়ে সংগঠনকে গোছানোর চেষ্টা করবো।
সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ কয়েছ বললেন, যুবদলের সুনামগঞ্জ জেলার সবচেয়ে সক্রিয় কমিটি ছিল এটি। বিএনপি রাজনীতির ক্রান্তিকালেও এই কমিটির নেতৃত্ব জেলার ১৬ উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ের ইউনিটে আহ্বায়ক কমিটি করেছে। জেলার ৮৮ ইউনিয়নের ৬০ টি’র কোনটিতে পূর্ণাঙ্গ, কোনটিতে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। অনেক ওয়ার্ড কমিটিও হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনায় যে নির্দেশনা দেবেন, আমরা সেটাই করবো।
জানা গেছে, বিএনপি রাজনীতির ভালো সময় হওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলা যুবদলের নেতৃত্ব পেতে বুধবার থেকেই মরিয়া হয়ে চেষ্টায় নেমেছেন কিছু তরুণ। এরা এক সময় জেলা ছাত্রদলের রাজনীতিতে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ পেতে আগ্রহী এসব যুবদল নেতাদের মধ্যে আমিনুর রশিদ আমিন, তোফাজ্জল হক, অ্যাড. মামুনুর রশিদ কয়েছ, কামরুল হাসান রাজু, সফিকুল হক ও জুনেদ আহমদ এর নাম শোনা যাচ্ছে।
জেলা যুবদলের সদ্য বিদায়ী সভাপতি আবুল মুনসুর শওকত বললেন, সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুই দায়িত্বশীল পদে একসঙ্গে কেউ যাতে না থাকেন, সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। এজন্য আমি পদত্যাগ করেছি। আমার পদত্যাগ পেয়ে কেন্দ্রীয় যুবদল জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতিকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করেছেন। তারা এখন যুবদলকে এগিয়ে নেবে। বিএনপি রাজনীতির দুর্দিনে যুবদলের দায়িত্ব পালন করেছি। জেল খেটেছি, জুলুম নির্যাতন সহ্য করেও ইউনিটে ইউনিটে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে আহ্বায়ক কমিটি করেছি। সাংগঠনিক কাঠামো আমার সময়ে শক্তিশালী হয়েছে। আমি চাই নেতৃত্বে ত্যাগী ও জনপ্রিয়রা যেন থাকে।
জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাড. নুরুল ইসলাম নুরুল বললেন, গেল ১৫/১৬ বছর জীবনবাজি রেখে যারা রাজপথে ছিল, ত্যাগী—নিবেদিত ও সার্বক্ষণিক যারা সংগঠনের সঙ্গে লেগে থাকে, তাদেরকে নেতৃত্ব দিতে হবে। সংগঠনকে এগিয়ে নিতে এসব তরুণকে কাজে লাগাতে হবে। যেহেতু কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে, সেহেতু নতুন কমিটি করলে সংগঠনে গতি বাড়বে।