সিটিজেন ইনিশিয়েটিভের সেমিনার  : “ফ্যাসিবাদের বিচার, দায় ও মিমাংসা”

Uncategorized জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী রাজনীতি সংগঠন সংবাদ সারাদেশ

!!  বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ মামলা নিচ্ছে না, কারণ তারা নিজেরাই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত # ফ্যাসিবাদের বিচার হওয়া উচিত আন্তজার্তিক মানের  #  ৫ই আগষ্টের পর মাত্র ৩ জন গুমকৃত মুক্তি পেয়েছেন, বাকিরা এখনো গুম হয়ে আছেন # ন্যায়বিচার এড়িয়ে রিকনসিলিয়েশন করা বিপজ্জনক বিষয় # ‘ধানমণ্ডি ৩২ নাম্বার’ গুড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক ঐক্যমত গঠনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে  !! 


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক  :  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মামলা, গুম ও হত্যা তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক মো: সালাহউদ্দিন খান বলেন, বাংলাদেশে বিএনপির পক্ষ থেকে ৩০০০ মামলা করা হয়েছে। আমরা অতীতে দেখেছি অপারেশন ঈগল হান্টের নাম করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নাটক সাজিয়ে নিরপরাধ ৪ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ৬৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলো বিগত সরকার। সারা দেশে বিএনপির পক্ষ তথ্য সংগ্রহ করে আমরা জেনেছি ২২৭৬ জনকে ক্রস ফায়ারে মারা হয়েছে। মোট ৩৬০০০টি এফাআইআর করা হয়েছে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উপর। হত্যা চেষ্টায় মামলায় মৃত্যুদন্ডের মত প্রহসনও ঘটেছে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ৭ তারিখের পর থেকে মামলা নিচ্ছে না পুলিশরা, কারন তারা নিজেরাই জড়িত এসব মামলায়। বিএনপির কিছু নেতা বিভিন্ন জায়গায় মামলা নিয়ে বানিজ্য করার ট্রাই করছে, এসব থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে হবে। ছাত্রদের পক্ষ হয়ে আমরা কাজ করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। আমরা চাই ফ্যাসিবাদের বিচার এবং তা দ্রুত বাস্তবায়ন করে নির্বাচনের পথে এগোতে।


বিজ্ঞাপন

সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন বলেন, ফ্যাসিবাদ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের যত্ন নেওয়া উচিত, যাতে মানবাধিকার আর বিপন্ন না হয় । ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কিছু সংশোধনী আনা হচ্ছে। এর মধ্যে বড় একটি অনুঘটক ঘটেছে UNHCR রিপোর্টের মাধ্যমে, যা ন্যায়বিচারকে আরও শক্তিশালীভাবে মোবিলাইজ করছে। জাতিসংঘ স্পষ্টভাবে বলেছে, মানবতাবিরোধী এই অপরাধ বা নির্মূল ক্ষমতা দখলের জন্যই ঘটেছে। বিএনপি এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযোগ দায়ের করেছে। দ্রুত কয়েকজনকে শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে আন্তর্জাতিক মানের বিচার হওয়া উচিত।


বিজ্ঞাপন

গুমকৃত ভিকটিমদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার মানবাধিকার সংগঠন মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন – এটি গণহত্যা, কেবল একটি ফ্যাসিবাদী কাজ নয়। মাত্র ৩ জন জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, বাকিরা এখনও গুমাবস্থায় রয়েছেন। ভেতরে হাজার হাজার মানুষ কাঁদছে, যারা এখনও ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা যখন সেই আয়নাঘর ব্যবস্থা দেখেছি তখন আরও কান্নার রোল বয়ে যাচ্ছে। এখন আমরা বলতে পারি যে আমাদের আত্মীয়রা কীভাবে এত কুখ্যাত নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছিল। আমরা ব্যক্তি, সংগঠন, সমাজ এবং রাষ্ট্র হিসেবে ব্যর্থ হয়েছি। এই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা প্রতিদিনই হত্যা করবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য, আমাদের আরেকটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ লড়তে হবে। আমরা আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার আশা করছি।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া আরভাইনের পিএইচডি ফেলো খন্দকার রাকিব বলেন, পূর্ববর্তী শাসনামলে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ন্যায়বিচার এড়িয়ে রিকনসিলিয়েশন করা বিপজ্জনক বিষয়। শাস্তি হোক বা মিমাংসা – এটাই এখন বাংলাদেশের প্রধান প্রশ্ন। মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা জনগনের বিরুদ্ধে সামগ্রিক অপরাধকে ব্যাপকভাবে সাধারণীকরণ করা হয়েছিলো বিগত শাসনামলে। মানবতার বিরুদ্ধে এই ধরনের অপরাধ গঠনে নাগরিক সমাজ অন্যতম বড় অনুঘটক ছিল। আর এমন অবিচার ভবিষ্যতে জন্য আরো দুর্বল সংস্কৃতি তৈরি করে। বিগত শাসনামলের আইন ছিলো বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রাণভোমড়া। এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল প্রতিকার হলো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। আর এজন্য বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় জুলাইয়ের গণহত্যার বিষয়ে সরকারের একটি সেল গঠন করা উচিত। আর সরকার বিরোধী ছোটখাটো উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অঞ্চলে কালেক্টিভ পানিশমেন্ট ছিলো বাংলাদেশের জন্য বিগতসালগুলো নিত্যদিনের বিষয়। এখন আমাদের পুনর্বিবেচনা করতে হবে, আমরা কীভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করব।

এবি পার্টির জুলাই অভ্যুত্থান বাস্তবায়ন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট উদয় তাসমীর বলেন, ৭২-৭৫ এর বাকশালি ধারা আবার ফিরিয়ে এনেছিলো পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার। বরং সেই পরিস্থিতিকে আরো বাড়িয়ে তুলেছিলো। গুম-খুনের সেই বিচার নিশ্চিতের বদলে অপরাধীদেরকে পুনর্বাসন করার পায়ঁতারা চলছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এর দায় এড়াতে পারেনা। তবে ‘ধানমণ্ডি ৩২ নাম্বার’ গুড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক ঐক্যমত গঠনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এই ঐক্যমত স্থাপন করেই ফ্যাসিস্টদের বিচার চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন মো: সাইমুম রেজা তালুকদার, প্রসিকিউটর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, বাংলাদেশ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *