ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের সাবেক নৌপরিবহণ মন্ত্রী শাহজাহান খানে ইশারায় চলছে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম  : বাস্তবায়নে তার  সহীদ হাসান, বন্দর সচিব ওমর ফারুক ও পলাতক সাবেক সিবিএ সাধারণ সম্পাদক ফটিক

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত কর্পোরেট সংবাদ চট্টগ্রাম জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক  :  ছৈয়দ সহীদ হাসান তার মূল পদবী – উচ্চহিসাব সহকারী, অর্থ ও হিসাব বিভাগ,চটগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষ।বাড়ি-মাদারীপুর!!তবে তিনি একজন ১৬তম গ্রেডের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হয়েও ১১তম লিয়াজু অফিসার পদ ভাগিয়ে নিয়ে ১৪ বছর ধরে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।


বিজ্ঞাপন

তিনি ১২/০৩/১৯৯৬ তারিখে জুনিয়র একাউন্টস এসিস্ট্যান্ট/জুনিয়র অডিটর পদে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি পদোন্নতি পেয়ে ১৩তম গ্রেডের উচ্চ হিসাব সহকারী হন। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে কপাল খুলে যায় তার। তার ভাশুর মাদারীপুরের এমপি শাহজাহান খান নৌ-পরিবহণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পাবার পরে চট্টগ্রাম বন্দরের ১১তম গ্রেডের লিয়াজু অফিসার পদের দায়িত্ব ভাগিয়ে নেন তিনি।


বিজ্ঞাপন

নিয়ম অনুযায়ী ১৩তম গ্রেডের কোন ব্যক্তি ১১তম গ্রেডের অতিরিক্ত বা চলতি দায়িত্ব পেতে পারেন না। কিন্তু সহীদ হাসান যেন চট্টগ্রাম বন্দরের অঘোষিত সম্রাট। তিনি ধীরে ধীরে চট্টগ্রাম বন্দরের মন্ত্রণালয় বিষয়ক সকল কাজ,নিয়োগ,পদোন্নতি, টিকাদারী পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন।


বিজ্ঞাপন

শাহজাহান খানের ভাশুর হিসেবে তাকে সবাই মন্ত্রীর এজেন্ট হিসেবে মানতে শুরু করে। শাহাজাহান খানের আমলের সকল নিয়োগ বাণিজ্য তার হাতে সম্পন্ন হতো। মন্ত্রণালয়ের আমলারা তাকে পদলেহন করে চলতো। ২০১১ সালে লিয়াজু অফিসার/সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা/প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে ২জন কর্মকর্তা নিয়োগ পেলেও লিয়াজু অফিসার পদে ঢাকায় কাউকে কাজ করতে দেয়নি সহিদ হাসান। মন্ত্রীর নির্দেশে তিনিই বহাল থাকেন বছরের পর বছর।

এরপরে এই পদগুলোর ২টি পদ শুন্য হলেও ২০২২ সাল পর্যন্ত বারবার নিয়োগে আটকে দিয়ে টিকে যান সহীদ হাসান।শেষমেশ ২০২২ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ লিয়াজু অফিসার/সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা/প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে ৩ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়।

এই পরীক্ষায় বিভাগীয় প্রার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকায় সহিদ হাসান অংশ নিয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মাত্র -৬.৫ নম্বর পেয়ে অকৃতকার্য হন। এটা জানতে পেরে নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ে আমলা,শাহজাহান খান ও বন্দর সচিব ওমর ফারুকের মাধ্যমে বন্দর কর্তৃপক্ষকে নানামুখী চাপ দিয়ে তাকে নিয়োগের জন্য চাপ দেন। কিন্তু বন্দরের লিখিত পরীক্ষার QR কোড সমৃদ্ধ টপশীটের মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করে ডিজিটাল রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ায় তিনি সেই চেষ্টায় ব্যর্থ হন।

পরবর্তীতে সাজ্জাত হোসেন নামে নবনিযুক্ত কর্মকর্তাকে লিয়াজু অফিসার পদে ঢাকায় নিযুক্ত করা হলেও সহীদ হাসানকেও লিয়াজু অফিসার পদে বহাল রাখা হয়। সাজ্জাত মূল পদের বিপরীতে নিয়োগ পেলেও সহিদ হাসানই লিয়াজু অফিসারের সকল কার্যক্রম চালাতেন।বন্দরের লিয়াজু অফিসারের একটিমাত্র পদ থাকলেও একইপদে পদায়ন হয় ২ জনের।

এটি বন্দরের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। একই পদে ২ জন পদায়ন করার মূল হোতা বন্দর সচিব ওমর ফারুক। তার নিয়োগ বাণিজ্য,টেন্ডার বাণিজ্য,পদোন্নতি বাণিজ্য সবকিছুর এজেন্ট হিসেবে সহিদ হাসান কাজ করে। সচিব ওমর ফারুক ও সহিদের এসব অপকর্মে সহযোগিতা না করায় লিয়াজু অফিসার সাজ্জাত-কে নভেম্বর,২০২৪-এ চট্টগ্রামে ফেরত আনা হয়। বন্দর সচিবের একান্ত অনুগত ব্যক্তি হিসেবে সহিদ হাসান সর্বজন স্বীকৃত।

ওমর ফারুক ও নৌপম চবক শাখার উপসচিব নজরুল ইসলাম আজাদের সহযোগিতায় ১৬ জানুয়ারি,২০২৫ তিনি নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল অফিসারের দায়িত্ব ভাগিয়ে নেন!! যেটা নিয়ম অনুযায়ী একজন ৩য় শ্রেণীর কর্মচারী কখনওই পান না। ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম বন্দর রেস্ট হাউজে তার সিন্ডিকেট অত্যন্ত শক্তিশালী। তিনি রেস্ট হাউজে থেকে লিয়াজু অফিসারের কাজ করার কথা থাকলেও ইমরান-রাব্বিকে দিয়ে তিনি রেস্ট হাউজ নিয়ন্ত্রণ করেন।

তিনি থাকেন ঢাকায় রাজকীয় ফ্ল্যাটে। গড়েছেন বিপুল সম্পদ ও অর্থের পাহাড়। ব্যবহার করেন চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি। তার দৌড়াত্বে অতিষ্ঠ চট্টগ্রাম বন্দরের বেশিরিভাগ কর্মকর্তা। বন্দরের কর্মকর্তারা ঢাকায় গেলে অফিসিয়াল কাজে গাড়ির সংস্থান থাকলেও তারা বেশিরভাগ সময় তারা গাড়ির সুবিধা পান না।

সহিদ হাসান মন্ত্রণালয়ের আমলাদের কথা বলে পরিবারের কাজে ঢাকায় ও মাদারিপুরে ব্যবহার করেন একাধিক গাড়ি।প্রতি মাসে অস্বাভাবিক হারে জ্বালানি তেলের হিসাব দিয়ে হাতিয়ে নেন লক্ষ লক্ষ টাকা। শুধু তাই নয় মন্ত্রণালয়ে সভার কথা বলে প্রতি মাসে ৩-৪ লক্ষ টাকার বিল করেন তিনি। এসব বিল চবক বোর্ড সভায় পাশ করার দায়িত্ব নেন বন্দর সচিব ওমর ফারুক।বিনিময়ে এসব বিলের বিরাট একটা অংশ তিনি বন্দর সচিব ওমর ফারুককে দেন।

আর তাদের এসব কাজে বাধা দেয়ায় লিয়াজু অফিসার সাজ্জাতকে কয়েকবার সতর্ক করেন বন্দর সচিব ওমর ফারুক। সহিদ হাসান ঢাকায় বন্দর চেয়ারম্যান, সসদস্যবৃন্দ, ওমর ফারুক ও কয়েকজন বিভাগীয় প্রধান ছাড়া অন্য কোন কর্মকর্তা অফিসিয়াল কাজে গেলে তাদের তোয়াক্কায় করেন না। কারণ মূল শক্তি বন্দর সচিব ওমর ফারুক। তারা দুজন মন্ত্রণালয়ে সকল অপকর্মের পার্টনার। ওমর ফারুক আওয়ামী আমলের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী।

সাবেক সিবিএ সাধারণ সম্পাদক নায়েবুল ইসলাম(ফটিক)- এর ঘনিষ্টজন হিসেবে ওমর ফারুক কোটি কোটি টাকার নিয়োগ, পদোন্নতি বাণিজ্য করে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন।বোর্ড সভায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিল/কাজ পাস করিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। তার ২ ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়ে সেটেল করে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে পড়ালেখার নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন।ছেলেদের বউসহ তিনি অস্ট্রেলিয়ায় সেটেল করেছেন। চট্টগ্রাম বন্দরে তার পদের প্রভাব খাটিয়ে তারই ভাগ্নে আরাফাতকে দিয়ে বিভিন্ন বিভাগে করেন ঠিকাদারি ব্যবসা।

তার ব্যবহৃত বন্দরের আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত ৪৫ লক্ষ টাকা মুল্যের Toyota, premio চট্টমেট্রো-গ -১৪-২৮৮১ গাড়িটি তার নিজের বলে জানা গেছে।তার শ্যালক আলভির চট্টগ্রামস্থ প্রতিষ্ঠান P2P ও Wecon এ রয়েছে তার বিপুল টাকার গোপন বিনিয়োগ।এছাড়াও তিনি ঢাকা ও চট্টগ্রামে নামে-বেনামে কিনেছেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও জমি।অনন্যা ও কল্পলোক আবাসিক এলাকায় আছে তার একাধিক প্লট।

তার এসব দুর্নীতির কারণে তিনি পরিচালক(প্রশাসন) পদে পদোন্নতি পান নি। অতচ তিনি এখন নিজেকে বিএনপি জামাতের লোক বলে পরিচয় দেন।আবার সহিদ হাসানকে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে রাখার জন্য সর্বদা সজাগ থাকেন। জানা গেছে, শাহজাহান খান বর্তমানে জেলে থাকলেও তাকে জেলে অর্থ সরবরাহ করেন সহিদ হাসান। আর শাহজাহান খানের পরামর্শে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম চালান সহিদ হাসান।

চট্টগ্রাম বন্দরের আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা শেখ নাসেরের নিকট আত্মীয় সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর কাওসার রশিদ, সচিব ওমর ফারুক,পরিচালক(পরিবহণ) এনামুল করিম, প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) হাবিবুল্লাহ আজিম,চীফ অডিট অফিসার কাজী মেরাজ উদ্দিন আরিফ, পলাতক সাবেক সিবিএ সাধারণ সম্পাদক (ফটিক) ও তার অনুসারী টিকাদারপগণ এবং নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের আওয়ামী আমলের চবক শাখার উপসচিব নজরুল ইসলাম(আজাদ) সিন্ডিকেট করে পুরো চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ন্ত্রণ করছেন এখনও। তাদের কথার বাইরে কিছুই ঘটেনা চট্টগ্রাম বন্দরে।

আর ফটিকের সাথে নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ করে সমন্বয় করেন সচিব ওমর ফারুক ও পরিচালক(পরিবহন) এনামুল করিম। সাইফ পাওয়ার টেকসহ বড় বড় টিকাদাররাও তাদের হাতের মুঠোয়। পুরো বাংলাদেশে ফ্যাসিস্টদের আধিপত্য কমলেও চট্টগ্রাম বন্দর জিম্মি করে অবলিলায় ব্যবসা করে যাচ্ছে ফ্যাসিস্টদের দোসররা।

যেন দেখার কেউ নেই। বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের এই অবস্থা হলে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে যেকোন সময় ফ্যাসিস্ট বাহিনী বড় ধরণের অঘটন ঘটে যেতে পারে। তাই অতি সত্ত্বর চট্টগ্রাম বন্দরকে ফ্যাসিস্ট মুক্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। না হয় সেটা জুলাই আন্দোলনের শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি করা হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *