নিজস্ব প্রতিনিধি (মাগুরা) : মকবুল হোসেন মাকুল, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও দেশের মাফিয়া ডন সাইফুজ্জামান শিখরের অন্যতম দোসর। আওয়ামী জমানায় দেশের টাকা লুটপাট করে এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। বংশ মর্যাদা,উচ্চ শিক্ষা,অর্থ -সম্পদ না থাকলেও কেবল এমপি শিখরের চামচামি করে গুছিয়ে নিয়েছে তার আখের।

শিখরের আর্শিবাদে মাগুরা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেয় মাকুল!

এর আগে আওয়ামী ব্যানারে মাগুরা পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে পৌরসভার প্যানেল মেয়র পদে অধিষ্ঠিত হয়। পরপর ৩ বার পৌরসভার কাউন্সিলর হয়ে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় দু’হাতে মাগুরা পৌরসভার বিবিধ খাতের টাকা লোপাট করে বনে গেছে শত শত কোটি টাকার মালিক।

বিগত ১৬ বছর মাগুরা পৌরসভায় যতো সরকারী-বেসরকারী অর্থ বরাদ্দ এসেছে বা উন্নয়ন কাজ হয়েছে নামে-বেনামে তার ঠিকাদারী করেছে এই মাকুল। আবার অন্য কোন ঠিকাদার কাজ পেলেও তার কাছ থেকে ১৫/২০% কমিশন আদায় করেছে মাকুল। মেয়র টুটুলকে নানা প্রকার কুপরামর্শ দিয়ে কিভাবে পৌরভার টাকা পকেটে ঢুকাতে হয় তার সব কৌশল বাতলে দিতো এই মাকুল।
৮০/৯০ এর দশকে মাকুলদের তেমন কোন অর্থ বিত্ত ছিলো না। তার বাবা করাত কলে (স-মিলে) লেবারের কাজ করতো। বাড়ীতে ছিলো ২ খানা ছাবড়া ঘর। অত্যন্ত দারিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা মাকুল উল্লেখযোগ্য লেখা পড়া করতে পারে নি। মাকুলের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সনদও নেই। কেবল মাত্র মাফিয়া ডন সাইফুজ্জামান শিখরের পা চেটে আজকের অবস্থানে এসেছে এমনটিই জানায় মাগুরার মোল্লাপাড়াবাসী।
মাকুল এখন কত টাকার মালিক?
অনুসন্ধানে জানাগেছে, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ আমলে মাকুল কয়েক শত কোটি টাকা ও সম্পদের মালিক হয়েছে। মাগুরা শহরের মোল্লা পাড়ায় বহুতলা ২ টি বাড়ী করেছে। মাগুরা পুরাতন জেলখানার উত্তর পাশের্^ ২টি বহুতলা বাড়ী করেছে।
মাগুরার মীরপাড়া,ঘোড়ামারা,ভায়না. ভিটাসাইর, চেক্সটাইলস মিলসপাড়া,স্টেডিয়ামপাড়া,লক্ষীকান্দর,বেলনগর,রামনগর, কামারখালি প্রভৃতি এলাকায় শত শত বিঘা জমি কিনেছে। তার রয়েছে ৩ খানা প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস। বিভিন্ন বেসরকারী ব্যাংকে রয়েছে অর্ধশতাধিক ্এ্যাকাউন্ট। তার স্ত্রী,সন্তান, ভাই,ভাগ্নে, স্ত্রীর আত্মীয় স্বজনদের নামে রয়েছে প্রচুর টাকা ও সম্পদ। এছাড়া ঢাকার ফার্মগেইট আবাসিক এলাকায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনে সেই ফ্ল্যাটে এখন স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করছে।
৪/৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা হক্যাকান্ডে
সরাসরি নেতৃত্ব দেয় মাকুল !
৪/৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র জনতার ওপর গুলি চালিয়ে যে ৪ ছাত্র জনতাকে হত্যা করা হয় সেই হত্যাকান্ডে সরাসরি নেতৃত্ব দেয় মাকুল। ফলে তার নামে ৪ টি মামলা দায়ের হয়। এ সব মামলায় সে এজাহার নামীয় আসামী। শেখ হাসিনার পতনের পর সে মাগুরা ছেড়ে ঢাকায় পালিয়ে আসে। এখনও সে পলাতক রয়েছে। ঢাকা ফার্মগেট এলাকার ফ্ল্যাটে গোয়েন্দা নজরদারী করলে তাকে গ্রেফতার করা যাবে বলে মাগুরা পৌরবাসী ধারণা করছেন।
যে পথে নেতাদের ম্যানেজ করে বাড়ী গাড়ি রক্ষা করে মাকুল:
৫আগষ্টের পর ৩/৪ দিন মাগুরা শহরে ব্যাপক জনতান্ডব চলে। এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা আওযামী লীগ নেতাদের বাড়ী ,গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক অগ্নি সংযোগ ও লুটপাট করে।
শোনা যায়, এ সময় পলাতক থেকে মাকুল মাগুরা জেলার কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাথে কথা বলে তার বাড়ী গাড়ি রক্ষার আবেদন জানায়। বিনিময়ে তারা যা টাকা চাইবে তাই-ই পাবে বলে ওয়াদা করে। তার কাছে প্রচুর নগদ টাকা আছে এ কথা মাগুরার এ টু জেড পর্যায়ের নেতার জানতেন। তাই তারা ১০ কোটি টাকা দাবী করেন। তাদের দাবী থেকে সামান্য কমিয়ে ৬ কোটি টাকায় দফারফা করা হয়। মাকুল তার ঠিকাদার ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে দাবীকৃত টাকাগুলো পৌছে দেয়। ফলে অনেক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ী,গাড়ি,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট ও অগ্নি সংযোগে পুড়ে ভীষ্মভুত হলেও রক্ষা পায় মাকুল ও তার ভাইদের বাড়ী,গাড়ি,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ ঘটনায় বিস্মিত হয় মাগুরাবাসী।
মাকুলের সাম্প্রতিক ততপরতা:
নানাসুত্রে জানাগেছে, মকবুল হোসেন মাকুল এখন আওয়ামী লেবাস পরিবর্তন করে বিএনপি লেবাস ধারন করার চেষ্টায় লিপ্ত আছে। এজন্য সে মোটা অংকের টাকাও অফার করেছে বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে। অন্যদিকে স্বপরিবারে বিদেশে পালিয়ে যাবার জন্য বিশেষ বিশেষ মাধ্যমে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। অন্য একটি সুত্র জানায়, মাকুল নিজেকে জটিল কঠিন রোগী সাজিয়ে ডাক্তারী সার্টিফিকেট জমা দিয়ে হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে।
কোথায় দুর্নীতি দমন কমিশন? কোথায় গোয়েন্দা সংস্থা?
ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে হার্ডলাইনে রয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সারাদেশে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে আওয়ামী দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারে। একই সাথে দুদকও কাজ করছে আওয়ামী আলাদীনের চেরাগ হাতে পাওয়া নব্য কোটিপতিদের অবৈধ পথে গড়া ধন-সম্পদ উদ্ধারে। কিন্তু সারাদেশ থেকে মাগুরা যেন একটু ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে। কারণ- মাকুলের মত নব্য ধনপতিদের ধন-সম্পদের হিসাব নিতে আজ পর্যন্ত কোন নোটিশ জারি করেনি দুদক।
অন্যদিকে যৌথ বাহিনী বা পুলিশ গোয়েন্দারা একবারের জন্যেও মাকুলকে ধরতে অভিযান পরিচালনা করেনি। এ বিষয়টি মাগুরাবাসীকে খুব পীড়া দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি অবৈধ অর্থের জোরে মাকুল এবারও বেঁচে যাবে? তার কোন শাস্তি হবে না? অবৈধ পথে গড়া তার কোটি কোটি টাকার সম্পদ কী জব্দ করা হবে না? ছাত্র হত্যার দায়ে তার কি কোন শাস্তি হবে না? বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের এসি রুমে ঘুমিয়ে অথবা দামি গাড়ি হাঁকিয়ে আর কতদিন সে রাজধানী শহরে ঘুরে বেড়াবে?