বিশেষ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টকে শক্তিশালীকরণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্পের পরিচালক তানভীর হোসাইনের বিরুদ্ধে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে । বিআইএমের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা তিনি। নিজের আর্থিক স্বার্থ সংশ্লিষ্টতাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছেন তিনি। প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যে তিনি মোটা অঙ্কের অর্থও তছরুপ করেছেন।আওয়ামী দোসর এই কর্মকর্তা সে সময় সাবেক কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের প্রভাব খাটিয়ে বাগিয়ে নেন প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব।

বিআইএমকে বানিয়েছেন অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। পারিবারিক আবহে প্রকল্পের কাজ করে সরকারের মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন এই প্রকল্প পরিচালক। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন আওয়ামী দোসর পরিচয় দিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব। ৫ আগস্টের পর তার অবস্থা রহস্যময় থাকলেও মিষ্টি বিতরণ করে হয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অনুসারী। ২০১৮ সালের এপ্রিল শুরু হওয়া প্রকল্পটি ১ম সংশোধিত শেষ হয় ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। প্রকল্পটির ২য় সংশোধিত মেয়াদ গত বছরের ডিসেম্বরে শেষ হলেও প্রকল্পটি সম্পন্ন বুঝিয়ে দিতে পারেনাই প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন।

সূত্র জানায়, প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পেয়ে তিনি নিজেই ঠিকাদারির প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছিলেন। যা নিয়মবর্হিভূত। হালিমা সিদ্দিকা ট্রেডার্স ও সরদার ট্রেডার্স নামক দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের মাধ্যমে প্রকল্পের বিভিন্ন কাজ করছেন প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন। হালিমা ট্রেডার্সের স্বত্তাধীকারী তার মা হালিমা সিদ্দিকা আর সরদার ট্রেডার্সের স্বত্তাধীকারীও তার ভাই। এছাড়া সিকো ইন্টারন্যাশনাল নামের আরও একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্টান কাজ করছে এই প্রকল্পে। এই সিকো ইন্টারন্যাশনালের সাথেও রয়েছে প্রকল্প পরিচালকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন সরকারি দায়িত্বের পাশাপাশি ব্যক্তিগত আরও চারটি কনস্ট্রাকশন প্রজেক্টের সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছেন।

হালিমা ট্রেডার্স ও সরদার ট্রেডার্স এবং সিকো ইন্টারন্যাশনাল এই তিন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি কোন রকম জবাবদিহি ছাড়াই প্রকল্পের অর্থ তছরুপ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আর এই তছরুপকৃত কোটি কোটি টাকা নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গড়েছে বিলাসবহুল বাড়ি। যার প্রতিটি ৯ তলা থেকে ১৬ তলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল ভবন।
বিআইএমের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলার ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাজটি করেছেন প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইনের মায়ের নামে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্টান হালিমা সিদ্দিকা ট্রেডার্স। সেখানে ব্যাপক অনিয়ম করার অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, সিকো ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে করা একই ভবনের থাই-টাইলসের কাজেও করেছেন ব্যাপক অনিয়ম। ২২ হাজার স্কয়ার ফিট থাই লাগানোর কথা থাকলেও সবমিলিয়ে ৩ থেকে ৪ হাজার স্কয়ার ফিট থাইয়ের কাজ করেছেন। এছাড়াও ভবনটিতে টাইলস স্থাপনের কথা ছিল ১১ হাজার স্কয়ার ফিট। সেখানেও তিনি সবমিলিয়ে ৩ থেকে ৪ হাজার স্কয়ার ফিট টাইলস লাগিয়েছেন। প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ের কাজটি নামমাত্র কাজ দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ তছরুপ করেছেন প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন।
এছাড়া তার ভাইয়ের নামে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরদার ট্রেডার্সের মাধ্যমেও ব্যাপক অনিয়ম করেছেন তিনি। বিআইএমের অভ্যন্তরে রাস্তা ও উন্নয়ন কাজ করছে সরদার ট্রেডার্স। যার ইজিপি আইডি নম্বর ৮৮৩৬৯৭।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় বিআইএমের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের কাজটিও পায় সিকো ইন্টারন্যাশনাল। যার ইজিপি আইডি নম্বর ৮৮৫৫৪৬। দেয়ালটি নতুন নির্মাণের কথা থাকলেও শুধুমাত্র প্লাস্টার করেই বিল পকেটে তুলেছেন প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন।
এসব অনিয়মের মধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি রাজধানীর মিরপুরে পীরেরবাগে কিনেছেন ফ্ল্যাট। যার নম্বর ৩০৭/১/বি/২, ভবন-১, ফ্ল্যাট-৮/এইচ। এদিকে প্রকল্পের ব্যয় সাত কোটি টাকা বৃদ্ধি করেও করছেন অনিয়ম। বিআইএমের প্রকল্প থেকে তছরুপ করা অর্থ বিনিয়োগ করছেন প্রাইভেট প্রজেক্টে এর মধ্যে ড্রিম টাওয়ার, গার্ডেন টাওয়ার, লেক ভিউ ও রিলায়েন্স নিবাস নির্মাণের কাজ চলছে।
আদাবরের ১৭ নম্বর রোডের ১৭-১৮ কমফোর্ট হাউজিংয়ে ড্রিম টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি নিজেই। আদাবরের বায়তুল হাউজিং এলাকার ১৭ নম্বর রোডে সি ব্লকের গার্ডেন টাওয়ার, ১০৫২ নম্বর বাসা। একই রোড একই ব্লকের ১০৫০ বাসাটি তারই প্রজেক্টের যার নাম লেক ভিউ। আদাবরের সুনিবিড় হাউজিংয়ের ১৬ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাসাটিও তার নিয়ন্ত্রণে। যার নাম রিলায়েন্স নিবাস। চারটি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন কাজই করছে সিকো ইন্টারন্যাশনাল। প্রকল্পের দায়িত্ব পেয়ে যেন আলাদ্বীনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন তিনি।
সূত্র জানায়, প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন তড়িঘড়ি করে খাতা-কলমে প্রকল্প সম্পন্ন করলেও তা এখনো বুঝতে দিতে পারে নাই। মুলত প্রকল্পের আওতায় প্রশাসনিক ভবন মেরামত কাজেই করেছেন ব্যপক অনিয়ম। খাতা-কলমে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই হচ্ছে না শেষ। বিভিন্ন অনিয়মে নিমজ্জিত প্রকল্প বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টকে বুঝিয়ে দিয়ে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে প্রকল্প পরিচালক তানভীর হোসাইন।
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও প্রকল্পের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে অস্বীকার করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টকে শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের পরিচালক তানভীর হোসাইন বলেন, আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিব্রত করতেই কেউ এসব ভুল তথ্য সরবরাহ করেছে।