সৌদিতে শতাধিক প্রবাসীর বেতন আত্মসাৎ করে উধাও গোপালগঞ্জের মামুন  :  ভিডিও বার্তায় কাঁদছেন প্রবাসীরা

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত খুলনা গ্রাম বাংলার খবর বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

মোঃ সাইফুর রশিদ চৌধুরী  :  সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশি শতাধিক রেমিট্যান্স যোদ্ধার কয়েক মাসের বেতন আত্মসাৎ করে গোপালগঞ্জের এক প্রতারক মামুন গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রবাসীরা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত মামুন প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা বর্তমানে টাকার অভাবে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন এবং তারা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দেশে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।


বিজ্ঞাপন

ভুক্তভোগীদের ভাষ্য অনুযায়ী, মামুন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পূর্ব নিজড়া গ্রামের হান্নান শেখের ছেলে। তিনি সৌদিতে ‘সাগর’ ও ‘আব্দুল্লাহ’ নামে পরিচিত ছিলেন এবং AGC ও ACT নামে দুটি সাপ্লাইয়ার প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি সৌদি আরবে বিভিন্ন কোম্পানিতে বাংলাদেশি প্রায় ১০০ জন শ্রমিক নিয়োগ দেন। শ্রমিকদের দিয়ে মাসের পর মাস কাজ করিয়ে মূল কোম্পানি থেকে বেতন আদায় করলেও সেই অর্থ তিনি কর্মীদের না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেন।


বিজ্ঞাপন

ভুক্তভোগী প্রবাসীরা ভিডিও বার্তায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১৪ ঘণ্টা কাজ করেও মাস শেষে বেতন না পেয়ে পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। কেউ কেউ বাসা ভাড়া কিংবা খাবারের খরচ জোগাতে দেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার করতে বাধ্য হচ্ছেন। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি AGC কোম্পানির মাধ্যমে সৌদির একটি সোলার প্লান্টে কাজ করতেন, কিন্তু তিন মাসের বেতন—প্রায় ৯ হাজার রিয়াল বা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ লক্ষ—মামুন আত্মসাৎ করেছেন।


বিজ্ঞাপন

রাজবাড়ীর রেজাউল মল্লিক, গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়ার তুহিন ও হানিফ শেখ এবং নারায়ণগঞ্জের আরও অনেক প্রবাসী একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। তারা জানান, মামুন একা নন, তার প্রতারণায় সরাসরি সহায়তা করেছে তার স্ত্রী রিতু, বোনজামাই আল-আমিন (সোহেল), ভাই সোহাগ ও শ্বশুর মনির মোল্লা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আত্মসাৎকৃত অর্থ দিয়েই মামুন ঢাকায় ব্যবসা শুরু করেছেন।


বিজ্ঞাপন

মামুনের পাসপোর্ট নম্বর EM0326785, যেখানে ঠিকানা হিসেবে টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তার বাড়ি সদর উপজেলার পূর্ব নিজড়া গ্রামে। প্রবাসীরা আরও দাবি করেন, বর্তমানে মামুন মদিনায় আত্মগোপনে রয়েছেন এবং প্রশাসনের নজর এড়াতে স্থান পরিবর্তন করে চলেছেন।

প্রবাসীরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত পাওয়ার পাশাপাশি মামুন ও তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, “আমরা বিদেশে থেকে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে রেমিট্যান্স পাঠাই, অথচ আজ নিজেরাই এমন ভয়াবহ প্রতারণার শিকার হয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছি।”

এটি কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়ের প্রতারণা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা প্রবাসীদের বিরুদ্ধে এক গভীর অপরাধ। দ্রুত প্রশাসনিক তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এমন ঘটনা ভবিষ্যতে প্রবাসী আস্থা ও রেমিট্যান্স প্রবাহে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *