!!  বিশেষ প্রতিবেদন  !!  ১১ মাস বেতন বন্ধ, হুমকির মুখে হোমিও, ইউনানী,  আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ও শিক্ষা

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ স্বাস্থ্য

বিশেষ প্রতিবেদক  :  প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় গত বছরের জুন থেকে এখন পর্যন্ত টানা ১১ মাস বেতন পাচ্ছেন না বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কর্মরত অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার প্রকল্পে কর্মরত চিকিৎসকরা। ঋণগ্রস্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই। তারপরও সেবা বন্ধ নেই। কবে বেতন পাবেন তা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছেন এই চিকিৎসকরা।


বিজ্ঞাপন

১৯৯৯ সালে এইসপিএসপি প্রকল্পের অধীন ৪৫জন ইউনানী,আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক গ্রাজুয়েট চিকিৎসকদের বিভিন্ন জেলা সদর হাসপাতালে নিয়োগ করে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার পাশাপাশি প্রাচীন ও দেশজ চিকিৎসা তথা ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাকে মূল চিকিৎসা ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করা হয়। এরপর ২০১৪ সালে এইসপিএনএসপি প্রকল্পের ৩য় সেক্টর কর্মসূচির অধীন ২২৬ জন এবং ২০২১ সালে ৪র্থ সেক্টর কর্মসূচির অধীন ১১০জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয় যেখানে ৩টি মেডিকেল কলেজের প্রভাষক, মেডিকেল অফিসার, রেজিষ্ট্রার,সহকারী রেজিষ্ট্রার সহ জেলা-উপজেলার মেডিকেল অফিসার পদ রয়েছে। ৩য় ও ৪র্থ সেক্টর কর্মসূচিতে নিয়োগ পাওয়া জনবল রাজস্বে স্থানান্তরিত না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানসমূহে তীব্র শিক্ষক ও চিকিৎসক সংকট দেখা দিয়েছে।


বিজ্ঞাপন

সারা দেশে বেশ কিছু ইউনানী,আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের ভাষ্যমতে, বরাবরই বেতন পাওয়ার আশ্বাস মিলছে। তবে কবে নাগাদ বেতন হতে পারে তার ধারণা কারও কাছে নেই। বেতন না থাকায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এছাড়া জেলা ,উপজেলা কর্মরত চিকিৎসক থাকলেও সেবা গ্রহিতারা বিনামূল্যে ঔষধ পাচ্ছে না।


বিজ্ঞাপন

তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্ম এর মেডিকেল অফিসার (ইউনানী) ডা. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, পরিবার নিয়ে বেতন ছাড়া চলতে খুব সমস্যা হচ্ছে আমাদের। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলাম সেই ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করতে পাচ্ছি না। সবকিছু মিলিয়ে খুব অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি আমরা। তিনি আরও বলেন, একবার শুনলাম এপ্রিলের শেষে বেতন হতে পারে। এখন জুন মাস চলে। বেতন কবে হবে নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছে না কিছু।


বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ মাসুদার রহমান আকন্দ বলেন, ‘ আমার এখানে একজন ইউনানী মেডিকেল অফিসার কর্মরত আছে। নিয়মিত অফিস করলেও বেতন ১১ মাস ধরে বন্ধ। তাদের বেতন হয় ওপির মাধ্যমে। চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর প্রোগ্রাম শেষ হয়েছে ২০২৪ সালের জুনের ৩০ তারিখ। জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে পঞ্চম এইচপিএনএসপি পাস হওয়ার কথা, যা এখনো পাস হয়নি এবং কখন পাস হবে কেউ জানে না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের জন্য প্রকল্পে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে তা আরও দুই বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরইমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সুপারিশ করে তা বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার প্রকল্পের ডিপিএম ডা. মির্জা লুৎফর রহমান লিটন বলেন, অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার প্রকল্প শুধু একটি প্রকল্পই নয় বরং সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, জেলা ও উপজেলায় কর্মরত ৩৫১ জন চিকিৎসক ও দেশের ২৮% চিকিৎসা সেবা গ্রহনকারী গনমানুষের স্বাস্থ্য সেবার একটি প্লাটর্ফম।

দেশে ইউনানী ,আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে এই প্রকল্প ছাড়া আর তেমন কোন সরকারি উদ্যোগ নেই। তাই স্বাস্থ্য সেবার জনপ্রিয় এই প্রকল্পের সকল জনবলকে বিশেষ কারিগরি পদ বিবেচনায় রাজস্বখাতে স্থানান্তর করে দেশে ইউনানী ,আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে স্থায়ী সমাধান করতে হবে।

সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ কাম অধীক্ষক ডা. মো. রাশিদুজ্জামান খান বলেন, এটি একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হলেও এখানকার অধিকাংশ শিক্ষক প্রকল্পের জনবল। আমার এখানে ৩৯ জন প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক যারা ১১ মাস বেতন না পেয়েও নিয়মিত অফিস করছেন।

এখানে দুই বিভাগ মিলে মাত্র ১ জন শিক্ষক রাজস্বের।তিনিও ১ বছরের মধ্যে অবসরে যাবেন। বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত এই প্রকল্প চলবে এবং এটাই সর্বশেষ প্রকল্প। বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নতুন করে আর কোন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে না। তাই ২০২৬ সালের পর কি ভাবে চলবে এই প্রতিষ্ঠান? তাই এই জনবল সংকট নিরসনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা অভিজ্ঞদের রাজস্বখাতে স্থানান্তর করে এই সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, পিএসসি এর অধীন নিয়মিত শিক্ষক ‍নিয়োগ ছাড়া শিক্ষক সংকট সমাধান সম্ভব না।

সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রভাষক ডা. মোজাহিদ মিয়া বলেন, সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের শেষ সময়ে আমার এই প্রজেক্টের চাকুরিটা হয়। ২০২১ সালে চাকুরিতে যোগদান করে এখন প্রায় ১ বছর থেকে বেতন নাই। অন্য চাকুরিতে যাওয়ারও সুযোগ নাই। আমাদের রাজস্বে আত্তীকরণ করলে এতো সংশয়, সংকটে আজ থাকতে হতো না।

সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রভাষক ডা. মোঃ নাজমুল হুদা বলেন, গত ১১ মাস আমাদের বেতন নেই। জীবন চালানো দায় হয়ে গেছে। আমাদের রাজস্বখাতভুক্ত করবে আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোন অগ্রগতি নেই। ২০১৪ সালে এই জবে এসেছি। প্রায় ১১ বছরেও আমাদের চাকুরি স্থায়ী হলো না। অথচ আমাদের পূর্ববর্তী একই প্রকল্পের জনবল রাজস্ব স্থানান্তরিত হয়েছে।১১ মাস বেতন বন্ধ থাকার পরও ছাত্র-ছাত্রীদের মুখের দিকে তাকিয়ে অফিসে আসি, ক্লাস নেই। সরকার আমাদের মেধা, শ্রম ও কাজের অবমূল্যায়ন করছে।’

বেতন কবে নাগাদ হবে জানেন না খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার প্রকল্পের লাইন ডিরেক্টর ডা. মোঃ আবু জাহের। তিনি বলেন, ‘অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার প্রকল্পসহ আমাদের বিভিন্ন অপারেশন প্ল্যানের ২৫ হাজার কর্মী বেতন পাচ্ছেন না। কবে হবে সেটা বলাও মুশকিল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় মোট ৩৮টি অপারেশনাল প্ল্যান আছে। এর মধ্যে অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার একটি।

এগুলোর অপারেশনাল প্ল্যান হয় পাঁচ বছর মেয়াদি। অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫ম সেক্টর কর্মসূচি হবে ২ বছরের জন্য।

বর্তমান ডিপিপি অনুযায়ী এক্সিট প্লান তৈরি করে অত্যাবশ্যকীয় জনবল রাজস্বে স্থানান্তর করার কথা বলা হয়েছে।যেহেতু এটা সবশেষ প্ল্যান। এরপর রাজস্বখাতে যাবে। হয়তো এ অপারেশনাল প্ল্যান এতদিনে অনুমোদন হয়ে যেত, কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে দেরি হচ্ছে। বিভাগের লোকজনের পরিবর্তন হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যক্তিও পরিবর্তন হয়েছে। নতুনরা এসে নতুন করে বুঝছেন।’

এই প্রকল্পের চিকিৎসকেদের সাপোর্ট স্টাফ কম্পাউন্ডার ও হার্বাল এসিস্ট্যান্ট এর পদগুলো রাজস্বে স্থানান্তর হওয়ার পরও প্রভাষক,মেডিকেল অফিসার পদ গুলো রাজস্বে স্থানান্তরিত হচ্ছে না। এই বৈষম্য দূর করে বকেয়া বেতন ও চাকুরী স্থায়ী করনের দাবি ইউনানী ,আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *