রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীতে সংবাদ প্রকাশের জেরে শাহমুখদুম থানার ওসি মাছুমা মুস্তারী ও প্রতারক আক্তারুল ইসলামের যোগসাজশে ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলায় আসামি করা হয়েছে— রাজশাহীর আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আজিবার রহমান, সিনিয়র ফটো সাংবাদিক ফায়সাল আহম্মেদ, আরটিভি’র ক্যামেরাম্যান আরিফুল হক রনি, কালের কণ্ঠ’র মাল্টিমিডিয়া প্রতিনিধি নাঈম হোসেন, গণমুক্তি পত্রিকার ব্যুরো প্রধান মাজহারুল ইসলাম এবং আজকের প্রত্যাশা পত্রিকার নাজমুল হককে। এ ছাড়াও একজন ঠিকাদারকে আসামি করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত ২৬ আগস্ট। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) শাখায় একটি জমি নিলামকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিলে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সেখানে যান স্থানীয় সাংবাদিকরা। এ সময় কথিত পত্রিকার মালিক পরিচয় দেওয়া প্রতারক আক্তার সাংবাদিকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান, এক সাংবাদিকের মোবাইল ভেঙে ফেলেন এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পুরো ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

সাংবাদিকরা এ ঘটনায় মামলা করতে চাইলে ওসি মাছুমা মুস্তারী মামলা না নিয়ে কেবল লিখিত অভিযোগ নেন। পরে সাংবাদিকরা ধারাবাহিকভাবে প্রতারক আক্তারের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ শুরু করলে উল্টো তার পক্ষ নিয়ে চাঁদাবাজির মামলা রেকর্ড করেন ওসি। ভাইরাল হওয়া প্রতারক আক্তারের দায়ের করা এ মামলাটি (নম্বর–২/২০২৫) ২ সেপ্টেম্বর শাহমুখদুম থানায় নথিভুক্ত করা হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সাংবাদিকরা প্রতারক আক্তারের কাছে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। টাকা না দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার চালানো হয়েছে। তবে ঘটনার পূর্ণ ভিডিও পুলিশ ও সাধারণ মানুষের কাছেই রয়েছে, যা সাংবাদিকদের দাবি প্রমাণ করে।
স্থানীয় সাংবাদিক নেতারা জানিয়েছেন, “ওসি–প্রতারকের যোগসাজশে সাংবাদিকদের ভুক্তভোগী না মেনে উল্টো আসামি বানানো হয়েছে। এভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ ও ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে।”
বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে— “সংবিধানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। অথচ ভুক্তভোগী সাংবাদিকরাই আজ আসামি। এটি শুধু সাংবাদিক সমাজ নয়, গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার জন্যও হুমকি।”
গণমাধ্যমকর্মী সুরক্ষা আইন ও সংবিধান প্রদত্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এখানে চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, এ ধরনের মামলা গণমাধ্যমের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং সত্য প্রকাশের পথ রুদ্ধ করে দেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরএমপি’র মুখপাত্র গাজিউর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
তবে আরএমপি কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, “সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া চাঁদাবাজির মামলার তদন্ত চলছে। কেউ নির্দোষ হলে তদন্ত শেষে তার নাম বাদ দেওয়া হবে।”