রাজধানীর পূর্বাচলে জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাটাগরীতে প্লট বাগিয়ে নিয়েছেন সাবেক আওয়ামী লীগের দোসর এ,আর, মালিক !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

রাজধানীর পূর্বাচলে জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাটাগরীতে প্লট বাগিয় নেওয়া সাবেক আওয়ামী লীগের দোসর এ,আর, মালিক।

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক  :  রাজধানীর  পূর্বাচল নতুন শহর আবাসিক প্রকল্প এলাকায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকর্তাদের পারষ্পরিক যোগসাজসে; ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর এবং ডোনার মো: আতিকুর রহমান মালিক(এ আর মালিক) জালিয়াতি করে ”মুক্তিযোদ্ধা ক্যাটাগরীতে” প্লট বাগিয়ে নিয়েছেন বলে জানাগেছে।


বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়,রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও দুর্নীতি দমন কমিশনে(দুদক) দায়েরকৃত অভিযোগে বলা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর এবং ডোনার মো: আতিকুর রহমান মালিক নিজেকে বঙ্গবন্ধুর নাতিন জামাই পরিচয় দিতেন। তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি সেলুন জোয়ারদারের ঘনিষ্ঠ সহোচর ও ডোনার ছিলেন।

পতিত স্বৈরাচারের মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী ও তার স্ত্রী মো: আতিকুর রহমান মালিক এর মহাখালিস্থ ম্যাপ এগ্রো’র অফিসে উপদেষ্টা হিসেবে বসতেন। আওয়ামী শাসনামলে জাবেদ পাটোয়ারী ও তার স্ত্রী’র মাধ্যমে তিনি নানা অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। এছাড়া, পতিত স্বৈরাচারের আরেক দোসর কারাবন্দী সালমান এফ. রহমানের সাথেও তার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল।


বিজ্ঞাপন

গুলশানের আজাদ মসজিদের পাশে অবস্থিত সালমান এফ. রহমানের অফিসে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তাছাড়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রয়াত স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার ভাতিজা ও পরমানু শক্তি কমিশনের কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে এবং জাবেদ পাটোয়ারী ও তার স্ত্রী এবং সালমান এফ. রহমানের প্রভাব বলয়ে থেকে আওয়ামী শাসনামলে প্লট জালিয়াতি,ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি,ম্যাপ এগ্রোর কারখানায় ভেজাল পণ্য উৎপাদন,এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানীর অর্থ আত্মসাত,তদবির বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করেছেন ।


বিজ্ঞাপন

অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর মো: আতিকুর রহমান মালিক শুরুতেই প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ২১/৫/২০০৫ তারিখে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসিক প্রকল্প এলাকায় ২৪৫৬৪ নং কোডের মাধ্যমে বরাদ্দকৃত ৩ নং সেক্টরের ১০৩ নং রাস্তার ১০ কাঠা আয়তনের ১৫৬ নং প্লটটি বরাদ্দ নিয়েছেন। বর্ণিত প্লটটি ”ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি” ক্যাটাগরিতে বরাদ্দ নেয়ার জন্যে মো: আতিকুর রহমান মালিক প্রথমে যখন আবেদন করেন তখনও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।

তৎকালে তিনি আলফা এগ্রো লিমিটেড-এ এমডি পদে চাকরি করতেন। বেতনভূক্ত সার্ভিসহোল্ডার হওয়া সত্ত্বেও তিনি ”ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি” ক্যাটাগরিতে প্লট বরাদ্দ পাওয়ার জন্যে আবেদন করে স্পষ্ট প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।

রাজউকে ক্যাটাগরি পরিবর্তনের আবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন কর্তৃপক্ষ ভূলক্রমে বরাদ্দপত্রে ”মুক্তিযোদ্ধা ক্যাটাগরী” উল্লেখ করেছেন। তাহলে তিনি বিগত আওয়ামী শাসনামলের ১৬ বছরে ”মুক্তিযোদ্ধা ক্যাটাগরী” কথিত ভূল সংশোধনের জন্যে আবেদন করেননি কেন?

মূলত, তৎকালে ”ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি” ক্যাটাগরীতে প্লট বরাদ্দ দেয়ার সুযোগ না থাকায়,  রাজউক কর্মকর্তাদের পারষ্পরিক যোগসাজসে মুক্তিযোদ্ধা না হওয়া সত্ত্বেও মো: আতিকুর রহমান মালিক ”মুক্তিযোদ্ধা ক্যাটাগরী”তে প্লট বাগিয়ে নিয়েছেন। বিগত আওয়ামী শাসনামলে ”মুক্তিযোদ্ধা ক্যাটাগরী” এর বিশেষ সুবিধা থাকায় তিনি ক্যাটাগরী পরিবর্তনের আবেদন করেন নি।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের  ৫  আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন সংগ্রামের ফলে  রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ”মুক্তিযোদ্ধা ক্যাটাগরী” এর প্লট নিয়ে বিপাকে পড়েন ”ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা”  মো: আতিকুর রহমান মালিক। ”মুক্তিযোদ্ধা ক্যাটাগরী” পরিবর্তনের মূল কারণ হচ্ছে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় প্লটের বরাদ্দ বাতিল শুরু করেছে সরকার।

যেকোন সময় তার বরাদ্দও বাতিল হতে পারে এমন আশংকা এবং সম্প্রতি তিনি প্লট বিক্রির উদ্যোগ নিলে ক্রেতা ”মুক্তিযোদ্ধা ক্যাটাগরী” তে বরাদ্দ বাতিলের ঝুঁকি থাকায় প্লট ক্রয়ে অনাগ্রহ দেখায়।

এমন পরিস্থিতিতে চতুর মো: আতিকুর রহমান মালিক ২৬/১/২০২৫ তারিখে কথিত ভুল সংশোধন করে চূড়ান্ত বরাদ্দপত্র সংশোধনের জন্যে রাজউকে আবেদন করেন।

আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজউকের এস্টেট ও ভূমি শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ১৬/৭/২০২৫ তারিখে ৫০ লাখ টাকা ঘুসের বিনিময়ে ”মুক্তিযোদ্ধা ক্যাটাগরী” পরিবর্তন করে ”ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি” ক্যাটাগরিতে চূড়ান্ত বরাদ্দপত্র প্রদান করেন।

আবেদনে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসিক প্রকল্প এলাকায়;রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এস্টেট ও ভূমি শাখার কর্মকর্তাদের পারষ্পরিক যোগসাজসে; ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর এবং ডোনার আতিকুর রহমান মালিক কর্তৃক জালিয়াতি করে ”মুক্তিযোদ্ধা ক্যাটাগরীতে” প্লট বরাদ্দ নেয়া এবং ৫ আগষ্ট-২৪ তারিখে সরকারের পতনের পর ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে ৫০ লাখ টাকা ঘুসের বিনিময়ে ”প্লটের ক্যাটাগরী” পরিবর্তনের বিষয়ে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্যে আহবান জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এস্টেট ও ভূমি শাখা-২ এর পরিচালক ইকবাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি,তাই এ বিষয়ে অবগত নই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আপনাকে জানাবো।

অভিযোগের বিষয়ে আতিকুর রহমান মালিক বক্তব্য জানার জন্যে তার মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি। হোয়াটসএ্যাপে বার্তা দিলেও তিনি উত্তর দেন নি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *