ঢাকায় বেড়েছে পানির ব্যবহার

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে রাজধানীতে মানুষ কমলেও বেড়েছে পানির ব্যবহার। করোনা মহামারিতে মানুষের দৈনন্দিন সূচিতে পরিবর্তন এসেছে। সব স্তর ও শ্রেণির মানুষ নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। ফলে মহানগরীতে পানির ব্যবহার বেড়েছে। ঢাকা ওয়াসার পরিসংখ্যানও তাই বলছে। তবে পানির অপচয় যেন না হয়, সেদিকে নাগরবাসীকে সচেতন থাকার অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি।
রাজধানীতে স্বাভাবিক সময়ে পানির চাহিদা থাকে ২৪০ থেকে ২৪৫ কোটি লিটার। করোনার কারণে নগরীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। অসংখ্য মানুষ রাজধানী ছেড়ে গ্রামে গেছে। তারপরও রাজধানীতে বর্তমানে পানির চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৪৮ থেকে ২৫০ কোটি লিটার। ওয়াসার টেকনিকাল বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশে গত মার্চ থেকে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু হয়। এরপর থেকেই মানুষের মধ্যে ঘনঘন হাত ধোয়া, বাইরে থেকে বাসায় ফিরে গোসল করা, পরিধেয় কাপড় ধোয়া, শাকসবজি ধোয়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। বাসাবাড়ি ও সড়কে নিয়মিত পানি মিশ্রিত জীবাণুনাশক ছিটানোর দৃশ্য দেখা যায়। এছাড়া, বিভিন্ন বাজার, টার্মিনাল ও বাড়ির সামনে মানুষের জন্য হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব কারণে পানির নানাবিধ ব্যবহার বেড়েছে। এতে রাজধানীতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে পানির চাহিদা এখন তুলনামূলক বেশি।
পাড়া-মহল্লাও সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাগত ২৬ মার্চ থেকে লকডাউন শুরু হওয়ার পর ঢাকায় কার্যত সব বন্ধ রয়েছে। রাজধানী ছেড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। তারপরও পানির চাহিদার গতি রয়েছে ঊর্ধ্বমুখী। ঢাকার বিভিন্ন কাঁচাবাজারে দেখা গেছে, শাকসবজি বালতি বা বড় ডিসের পানিতে চুবিয়ে চুবিয়ে ধোয়া হয়। সিটি করপোরেশন, ডিএমপি, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থা পানিতে জীবাণুনাশক মিশিয়ে দুই বেলা নিয়মিত সড়কে ছিটায়।
সব শ্রেণি ও বয়সের মানুষের মধ্যে সাবান বা জীবাণুনাশক দিয়ে হাত ধোয়ার প্রবণতা বেড়েছে। মিরপুরের বাসিন্দা শামীমা জাহান বেসরকারি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। প্রতিদিনই তাকে ব্যাংকে যেতে হয়। ব্যাংক থেকে বাসায় ফিরে তিনি সরসারি বাথরুমে যান। তবে এর আগে বাসার সবাইকে তার কাছ থেকে দূরে থাকতে বলেন। গোসল সেরে ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিধেয় পোশাক ধুয়ে তারপর বের হন তিনি। করোনার আবির্ভাবের পর থেকে এটা তার প্রতিদিনের রুটিন। এভাবে তার অন্য সহকর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন বলে তিনি জানান। শামীমা বলেন, সবকিছুতেই পানির ব্যবহার বেড়েছে। বাসার জন্য শাকসবজি কিনতে হয়। বাজার থেকে সেগুলো নিয়ে আসার পর লবণপানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখি। তারপর সেগুলো তুলে আবারও পানিতে ভিজিয়ে রাখি। এরপর বেসিনে একটা একটা করে ধুয়ে ফেলি। তারপর নির্দিষ্ট পাত্রে রেখে দেই। কখনও কখনও বারান্দায় শুকাতে দেই।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বেশিরভাগ মানুষ তাদের দৈনন্দিন সূচিতে পরিবর্তন এনেছেন। খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন এসেছে। ঢাকার সড়কের পাশে ও মার্কেটে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এসবই করা হয়েছে গত আড়াই মাসে।
সড়কে ছিটানো হচ্ছে পানি মিশ্রিত জীবাণুনাশককরোনাভাইরাস রোধে গত ১৭ মার্চ পথচারীদের জন্য ২৫টি স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। কর্মসূচির উদ্বোধনকালে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। সচেতনতার প্রথম শর্ত হচ্ছে হাত ধোয়া। মূলত পথচারীদের সচেতন করে তুলতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব স্থানে সাবান ও পানি সরবরাহ করা হবে।
করোনার এই দুর্যোগকালে মানুষের মধ্যে যেমন হাত ধোয়ার রীতি চালু হয়েছে, ঠিক তেমনই পানির অপচয়ও বেড়েছে। অনেকে হাত ধোয়ার সময় হাতে সাবান মাখার সময়টুকুতে কল ছেড়ে রাখায় পানি অপচয় হচ্ছে। আবার বাসাবাড়িতে কল ছেড়ে দিয়ে শাকসবজি কলের নিচে রেখে দেন অনেকে। এতেও পানির অপচয় হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন কর্মকা- পরিহার করতে হবে। সবজি ভালো করে অবশ্যই ধুয়ে নিতে হবে। তা করতে গিয়ে পানির যেন অপচয় না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কলের নিচে সবজি রেখে হাত দিয়ে ঘষে ধুয়ে ফেললেই হয়। লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখলেও চলে। তবে তার আগে নিজেদের হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। হাত ধোয়ার সচেতনতার সঙ্গে সঙ্গে পানির অপচয় রোধেও সচেতনতা সৃষ্টির অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা ওয়াসা।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান বলেন, হাত ধোয়াসহ মানুষ নিজে ও বাসাবাড়ি, সড়ক পরিচ্ছন্ন রাখার কারণে এই সময়ে পানির চাহিদা বেড়েছে। ঢাকা থেকে অসংখ্য মানুষ চলে গেলেও পানির চাহিদা কমেনি, বরং বেড়েছে। তিনি বলেন, ওয়াসা বর্তমানে ২৫০ থেকে ২৫২ কোটি লিটার পানি উৎপাদন ও সরবরাহ করছে। ২৬০ কোটি লিটার পর্যন্ত আমাদের উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।


বিজ্ঞাপন