আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা
ঘাটতি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা
থাকছে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ
বিশেষ প্রতিবেদক : বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন তিনি। এটি পাস হবে ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৩.২৪ শতাংশ বেশি। টাকার ওই অংক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৭.৯ শতাংশের সমান। বিদায়ী অর্থবছরে মুস্তফা কামালের দেওয়া বাজেটের আকার ছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের ১৮ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির ১৮.৩ শতাংশের সমান।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালকে তার দ্বিতীয় বাজেটটি দিতে হলো এমন এক সময়ে, যখন করোনাভাইরাসের মহামারীতে পুরো বিশ্বের অর্থনীতিই টালমাটাল, বাংলাদেশের সামনেও গভীর অনিশ্চয়তা। এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘অর্থনেতিক উত্তরণ ও ভতিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’। সংক্রমণ এড়াতে সীমিত সংখ্যক আইনপ্রণেতাকে নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় চলছে এবারের বাজেট অধিবেশন; অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যদের বসতে হয়েছে দূরত্ব রেখে, মুখে মাস্ক আর হাতে গ¬াভস পরে। অন্যবছর বাজেট দেওয়ার আগে অর্থমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার তা হয়নি।
৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট যা জিডিপির ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। সংসদ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের জন্য আহ্বান জানান। এর পরই অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতা উপস্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে অনুষ্ঠিত বিশেষ মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট অনুমোদন করা হয়। এর পরে সংসদে বাজেট উপস্থাপনের জন্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সম্মতি দেন। আগে থেকেই সংসদ ভবনের রাষ্ট্রপতি দফতরে অবস্থান করছিলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত সংখ্যক সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে চলছে সংসদের আজকের অধিবেশন।
প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেট ব্যয়ের জন্য মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে ঘাটতির (অনুদানসহ) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা, এটি মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ। এটি এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। এরমধ্যে আবর্তক ব্যয় হচ্ছে ৩ লাখ ১১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এ আবর্তক ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে খরচ হবে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। এছাড়া সম্পদ সংগ্রহ, ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ ও পূর্তকাজ, শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগসহ মূলধনী ব্যয় হবে ৩৬ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। পাশাপাশি ঋণ ও অগ্রিম বাবদ ব্যয় ৪ হাজার ২১০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, এবারের বাজেটে নির্দিষ্ট কিছু শর্তে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের ব্যয় মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) কর রাজস্ব আহরণ করতে হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি করবহির্ভূত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তির পরিমাণ হচ্ছে ৩৩ হাজার ৩ কোটি টাকা। আয়ের দিক থেকে আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা।
বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা : প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অনুদান ব্যতীত ঘাটতি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই ঘাটতি ৫ শতাংশ। বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, ঘাটতি অর্থায়নে ৮০ হাজার ১৭ কোটি টাকা আসবে বৈদেশিক অনুদান থেকে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে নেওয়া হবে ২৫ হাজার কোটি টাকা।
থাকছে কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ : প্রস্তাবিত বাজেটে ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে, ‘দেশের প্রচলিত আইনে যা–ই থাকুক না কেন, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা যেকোনো সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর প্রদান করে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না।’ এ ছাড়া একই সময় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাগণ পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলে, ওই বিনিয়োগের ওপর ১০ শতাংশ কর প্রদান করলে, আয়করসহ কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করবে না।