চাকরিচ্যুতরা পালাতে পারে যেকোনো সময়

অপরাধ রাজধানী

ডিএসসিসিতে শুদ্ধি অভিযান

 

বিশেষ প্রতিবেদক : দায়িত্বগ্রহণের সাথে সাথেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে দূর্নীতিমুক্ত করার ঘোষণা দেন নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ফলে তিনি চালিয়েছেন শুদ্ধি অভিযান। এরই অংশ হিসেবে চাকরিচ্যুত করলেন দুই কর্মকর্তা ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদারকে। এ দুজনের বিরুদ্ধে কমিশন বাণিজ্য, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিএসসিসির চাকরিচ্যুত প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী সরদারের নগর ভবনের প্রায় প্রতিটি বিভাগেই ছিল অদৃশ্য কর্তৃত্ব। আর এর মাধ্যমে তিনি গড়েছেন অঢেল অর্থ সম্পদ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী সরদার ১৯৯৫ সালের ১৯ জুলাই কর কর্মকর্তা হিসেবে অবিভক্ত সিটি করপোরেশনে যোগদান করেন। ২০১৩ সালে ১৫ মে পদোন্নতি পেয়ে উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের আশীর্বাদে ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আইনের মারপ্যাচে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার (চলতি) দায়িত্ব পেয়ে বেপোরোয়া হয়ে ওঠেন।
চাকরিচ্যুত ইউসুফ আলী সরদারের স্ত্রী চৌধুরী রাশিদা আক্তার এবং এক পুত্র রাশেদ ইউ তূর্য ও এক কন্যা ইসরাত ইয়াসমিন ইরাকে কানাডার টরেন্টো শহরে বসবাসের ব্যবস্থা করেছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া তার ছোটভাই মো. ইউনূস আলী সরদারও কানাডায় তার মেঝ পুত্র সাকিব ইশরাকসহ বসবাস করছেন। তিনি সেখানে ২০১৭ সাল থেকে মান্ডিলাস ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে চাকরি করেন। ফলে যেকোনো সময়ে চাকরিচ্যুত ইউসুফ সরদার পালাতে পারে দেশ ছেড়ে।
সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৭৬টি মার্কেটের রাজস্ব আদায়, নবনির্মিত মার্কেটের দোকান বরাদ্দে নিজের পছন্দে ব্যক্তিদের নামে অর্থিক সুবিধা নিয়ে বরাদ্দ দিয়ে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন তিনি। গড়ে তুলেছেন বিশাল সিন্ডিকেট। তার সিন্ডিকেটের ইশারা ছাড়া রাজস্ব বিভাগের কোনো কাজ হয় না। দোকান বরাদ্দ কমিটির ১৯ সদস্যকে তিনি একাই নিয়ন্ত্রণ করতেন। ইউসুফ আলী সরদারের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে দুদকে একটি মামলা হয়। মামলার ফাইল ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। ওই মামলার অজুহাতে প্রতিটি মাকের্টের মালিক সমিতিকে সুবিধা দেয়ার কথা বলে প্রায় তিন কোটি টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ইউসুফ সরদার ফোন ধরেননি।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি দিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করায় বঞ্চিতদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। কর্মচারী বিধিমালায় এক বা একাধিক পদে চলতি দায়িত্ব দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্ত সিনিয়রকে ডিঙিয়ে জুনিয়দের পদোন্নতি দেয়ার বিধান নেই। তবুও বিধি লঙ্ঘন করে রাজস্ব বিভাগের একাধিক জুনিয়র কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে কর কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুসকে রাজস্ব বিভাগ থেকে মেয়রের সহকারী একান্ত সচিব করা হয়েছে। কর কর্মকর্তা শাজাহান আলীকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
অপরদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) গুরুত্বপূর্ণ, স্পর্শকাতর ও বিতর্কিত তথ্য সংবলিত কিছু অফিসিয়াল নথি এবং ফাইলে থাকা কতিপয় নোটশিট একটি দুষ্ট চক্র গায়েব করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আকস্মিকভাবে চাকরিচ্যুত হওয়ায় প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার (চলতি দায়িত্ব) অনিয়ম-দুর্নীতির অনেক কিছুই সরাতে বা সংশোধন করতে পারেননি।
একই সময়ে সদ্য বিদায়ী মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের শেষ সময়ে এসে তড়িঘড়ি করে অনৈতিক পন্থায় ডিএসসিসিতে উপ-কর কর্মকর্তা (ডিটিও) পদে ৩১ জন ও কর কর্মকর্তা (টিও) পদে ৭ জনকে পদোন্নতি (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল বিতর্কিত ওই সিআরও। প্রস্তাবিত ওই পদোন্নতিতে ডিএসসিসির চাকরি বিধি বা আইনের ন্যূনতম অনুসরণ করা হয়নি। ডিএসসিসির জন্য সর্বশেষ প্রণীত তফসিল-২০১৯ অনুযায়ী ‘কোনো পদে কাউকে অতিরিক্ত বা চলতি দায়িত্ব প্রদান করতে হলে ওই পদের একধাপ নিচের কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওই পদের জন্য নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে।’ এ আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ডিটিও পদের জন্য বিএ পাস নির্ধারিত থাকলেও এইচএসসি পাস লোকজনকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের পাস কাটিয়ে সম্পূর্ণ অনৈতিক পন্থায় পদোন্নতি দেয়া হয়েছে তৃতীয় শ্রেণিদের।
আবার পদোন্নতির এ ফাইলে সিইও অনুমোদন দিয়ে স্বাক্ষর করেছেন ১ এপ্রিল এবং মেয়র ২ এপ্রিল। ও সচিব দফতরে এসেছে ২৮ এপ্রিল। পরবর্তিতে এ ফাইল সংস্থাপন শাখায় অফিস আদেশ জারির জন্য যায় ৪ মে। অনুমোদিত ওই ফাইলের স্মারক নম্বর- ৪৬.২০৭.০০০.১০.০১.০৮৮১.২০১৯ তারিখ ১৯.১২.২০১৯। ওই ফাইলে সংস্থাপন শাখা দ্রুত অফিস আদেশ জারি না করায় সহসচিব মো. আরশাদ হোসেনকে একটি মহল তখন চাপ সৃষ্টি করে এবং একপর্যায়ে ঘুষ প্রদানের প্রস্তাবও দেয়। অফিস আদেশ জারি না করতে পেরে একপর্যায়ে তাকেসহ সচিবের চেয়ার না থাকার হুমকিও দেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিতর্কিত কয়েকজন কর্মকর্তা চাকরি হারানোর ভয়ে রয়েছেন। নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের চলমান শুদ্ধি অভিযান তাদের ঘুম হারাম করেছে এ আলোচনা এখন নগর ভবনের সর্বত্রই।
জানা গেছে, ডিএসসিসির দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি অর্থাৎ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে শাহ মো. এমদাদুল হক দায়িত্ব পালন করছেন। প্রাধিকার অনুযায়ী, সরকারের এ অতিরিক্ত সচিব একটি গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। যোগদানের পর থেকে তিনি করপোরেশনের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ-১৫-৫১৬৪) ব্যবহার করছেন। যার চালক মোরশেদ আলম। কিন্তু নিয়মের ব্যত্যয় করে এ কর্মকর্তা করপোরেশনের আরেকটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-১৫-০২০৭) তার পরিবারের সদস্যদের সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য দিয়ে রেখেছেন। যার চালক মো. এনায়েত। ওই গাড়িটির জন্য ডিএসসিসি থেকে দৈনিক ২০-২৫ লিটার পেট্রলও নিচ্ছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিনও বিদায়ী মেয়র খোকনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে নগর ভবনে পরিচিত। এ প্রকৌশলী চার ইউনিয়ন প্রকল্পসহ প্রতিষ্ঠানটির কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে মানহীন নির্মাণ উপকরণ ও নানা অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। চলমান শুদ্ধি অভিযানে বোরহান উদ্দিনও চাপে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোরহান উদ্দিন বলেন, কর্তৃপক্ষ আমাকে প্রকল্পের পিডি হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে। তখন দায়িত্ব পালন না করার কোনো সুযোগ ছিল না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। যখন যেখানে দায়িত্ব দেবে তাই পালন করতে হবে।
সরকারের পিপিআর (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস) অনুযায়ী, শতকোটি টাকার প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) করতে হলে ন্যূনতম যোগ্যতা হতে হবে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। কিন্তু ডিএসসিসির চার ইউনিয়ন উন্নয়ন নামে ৩৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের পরিচালক করা হয় নির্বাহী প্রকৌশলী তানভির আহমেদকে। শীর্ষপর্যায় থেকে সবুজ সংকেত নিয়ে অনেকটাই নিয়মের বাইরে গিয়ে তাকে পিডির দায়িত্ব দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। এ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে প্রকল্পে নিজের পছন্দ ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে চার ইউনিয়নের কাজের মান নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ। এ বিষয়ে একাধিকবার গিয়েও এ প্রকৌশলীকে অফিসে পাওয়া যায়নি।
নগর ভবনের আলোচিত আবদুল কুদ্দুস মূলত রাজস্ব বিভাগের উপকর কর্মকর্তা। মেয়র খোকন দায়িত্ব নেওয়ার পর এক অফিস আদেশে তাকে মেয়রের একান্ত সচিব-২-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। যদিও প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যমান জনবল কাঠামোতে এ ধরনের কোনো পদের অস্তিত্ব নেই। এ কর্মকর্তা মেয়র সেলে একটি রুম বরাদ্দ নিয়ে অফিস করতেন। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল বিলবোর্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ কর্মকর্তাকেও বিদায়ী মেয়র খোকনের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই চেনেন সবাই। তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করেছে বলে জানা গেছে। কুদ্দুসের বিষয়ে একটি বড় সিদ্ধান্ত আসতে পারে এমন আভাস মিলেছে নগর ভবন সূত্রে।
ডিএসসিসির উপকর কর্মকর্তা আলীম আল রাজী। কিন্তু তিনি প্রভাব খাটিয়ে কর কর্মকর্তা ও রাজস্ব কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সেখানেই থেমে নেই রাজী। উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (বাজার) শাখার সবচেয়ে লোভনীয় চেয়ারটিও তার দখলে। ডিএসসিসির সব মার্কেটের দোকান বরাদ্দ ও ভাড়া আদায়, নামজারিসহ সব কাজই তিনি করেন। বরখাস্ত হওয়া প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদারের বিশ্বস্ত হিসেবে সব কাজ তিনি করতেন বলে জানা গেছে।
শাহজাহান আলী ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগে কর কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুর রহমান অবসরে যাওয়ার পর ইউসুফ আলী সরদারের সহযোগিতায় তিনি এ পদে বসেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত নথিও শীর্ষপর্যায় থেকে তলব করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ডিএসসিসির পরিবহন শাখার দায়িত্বে থাকা মো. মোরশেদের সঙ্গে বিদায়ী মেয়রের এক ঠিকাদারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিএসসিসির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পৌর ফিলিং স্টেশন নিয়মবহির্ভূত ইজারা নেন ওই ঠিকাদার। আর সেখানে প্রতি মাসে প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা জ¦ালানি খরচ দেখিয়ে একটি অংশ হাতিয়ে নেয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এসব কাজে ওই ঠিকাদারকে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে মোরশেদের বিরুদ্ধে। তবে মোরশেদের দাবি, কর্তৃপক্ষ তাকে পরিবহন শাখায় ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি কোনো তদবির করে এখানে আসেননি।
জাকির হোসেন ডিএসসিসি সচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তুলনামূলক ছোট পদের কর্মকর্তা হলেও দীর্ঘসময় এ পদে থেকে সচিবদের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে বদলি, পদোন্নতি ও নিয়োগ বাণিজ্য জাকিরের কব্জায় বলে অভিযোগ রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কর্মকর্তার দপ্তরকে কাজে লাগিয়ে তার বিরুদ্ধে নগর ভবনে নিজের নিকটাত্মীয়-স্বজনদের নামে প্রতিষ্ঠান খুলে কোটি কোটি টাকার কাজ করার অভিযোগও রয়েছে। নামে-বেনামে গড়ে তোলা সম্পদের বিষয়ে দুদকে মামলাও চলমান রয়েছে জাকিরের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে জাকির হোসেন বলেন, আমি কোনো অনিয়ম করিনি। আমার আত্মীয়স্বজন নগর ভবনে ঠিকাদারি করলে আমার কী করার আছে? দুদক আমার অর্থ-সম্পদের বিষয়ে তদন্ত করছে; তারা সব দেখবে।


বিজ্ঞাপন