পদ্মার রেলসংযোগ প্রকল্পে খুব বড় সমস্যা নেই: রেলমন্ত্রী

অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পে বড় ধরনের কোনো সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। মন্ত্রী বলেছেন, ‘পদ্মা সেতুতে ত্রুটি ধরা পড়েছে এটি এখনই বলার সময় আসেনি। আমরা দেখার জন্য এসেছি। রেল সংযোগ প্রকল্পে খুব যে বড় ধরণের সমস্যা তা নয়। আদৌ সমস্যা আছে কিনা তাও বলা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না বিশেষজ্ঞরা মতামত দিবে।’
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় পদ্মাসেতুর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে রেলসংযোগ প্রকল্প পরিদর্শন গিয়ে সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন তিনি।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে সড়ক ও রেল লাইনের মাধ্যমে রাজধানীর সঙ্গে সংযুক্ত করতে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। পাশাপাশি বাংলাদেশ রেলওয়ে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর উপরে ১৬৯ কিলোমিটার (ঢাকা থেকে যশোর) রেললাইন ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প’বাস্তবায়নে কাজ করছে। রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ নিয়ে ত্রুটির প্রশ্ন উঠেছে।
ট্রেনগুলো ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার ডাবল ডেক ব্রিজের নিচের ডেক ব্যবহার করবে ও যানবাহনগুলো উপরের রাস্তাটি ব্যবহার করবে। যেহেতু সেতুর দুই পাশের রেলওয়ের ভায়াডাক্টগুলো দীর্ঘ স্লোপ প্রয়োজন, তাই এগুলো ব্রিজের দুই দিকে সংযোগকারী রাস্তার ওপর দিয়ে অতিক্রম করবে।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ভায়াডাক্টের নি¤œভাগ থেকে সড়কের উচ্চতা হতে হবে ৫ দশমিক ৭ মিটার। যাতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারে। এছাড়াও একটি জাতীয় মহাসড়কের আদর্শ প্রস্থ ১৫ দশমিক ৫০ মিটার হওয়া উচিত।
বর্তমান নকশা অনুযায়ী রেলপথের ভায়াডাক্টগুলো নির্মিত হলে বড় বড় লরিগুলো সেতুটি ব্যবহার করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন বিবিএ’র নির্বাহী পরিচালক বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, তাদেরকে (পিবিআরএলপি) নকশা সংশোধন করতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পে রেলের যেভাবে কাজ চলছে সেটির ব্যাপারে সড়ক নতুন ধরণের কনডিশন (শর্ত) দিয়েছে, কিন্তু সড়ক বিভাগ এখনো ডিজাইন দেইনি। যেহেতু এটি ইঞ্জিনিয়ারিং সংশয়, সেহেতু আমাদের এক্সপার্ট আছে তারা এটি নিয়ে বসবে। যদি নকশা কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং মতনৈক্য হয় তবে আমরা আশা করছি তারাই এটি পূর্ণ সংশোধন করতে পারবে। সেতু বিভাগ ও রেল বিভাগের কাছে ডিজাইন চাওয়া হয়েছে। তারা ডিজাইন দিলেই পূর্ণ সংশোধন করা হবে। অন্য কোথাও কোনো সমস্যা নেই। শুধু রেল নামার ও উঠার সময় সমস্যা কথা উঠছে, এক্ষেত্রে সমন্বয় করা হবে।
রেল প্রকল্পের অগ্রগতি সর্ম্পকে রেলমন্ত্রী জানান, করোনার মধ্যেও কাজ চলেছে, এখনো পর্যন্ত ৩৬ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে।
প্রকল্প পরিদর্শনের সময় রেলমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানও।
এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এটি একটি জাতীয় প্রকল্প, ত্রুটি শব্দটির সঙ্গে আমরা একমত নই। ত্রুটি তখনই হবে যখন এটি চূড়ান্তভাবে হবে। এখনো প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে, কিন্তু সংশয় যেটি দেখা দিয়েছি, এরকম হয়তো আরও দেখা দিতে পারে। তবে এখনো নকশা চূড়ান্ত হয়নি, আমাদের কাছে সময় আছে। যেহেতু এটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে তাই উচ্চতর পর্যায়ে আলোচনা করে অবশ্যই সমাধান করা হবে। প্রয়োজনে সকল ইঞ্জিনিয়ার একত্রিত করা হবে এবং স্যাটেল করা হবে।
পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রজেক্ট ম্যানেজার বিগ্রেডিয়ার আহমেদ জামিউল ইসলাম জানান, রেল সংযোগের ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন ৫.৭ মিটার আমাদের এখানে ৬.৭ এর মত আছে। হরিজেন্টাল (অনুভূমিক) ক্লিয়ারেন্স নিয়ে আমাদের একটু মতনৈক্য আছে। হরিজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স ১৫.৫ মিটার প্রয়োজন এখানে ১১.৫ আছে। তবে ডিজাইন মোডিফিকেশনের মাধ্যমে এটি সংশোধন করা হবে। এটির জন্য নির্মাণ ব্যয় কিংবা সময়ে প্রভাব পড়বে না।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পদ্মাসেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম, পদ্মাসেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের সহ অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, ঢাকা-যশোর পর্যন্ত ১৭৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে মূল পদ্মা সেতুর ভেতরে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণকাজ হচ্ছিল। পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ ভাগেরও বেশি এবং মূল সেতুর প্রায় ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তবে এর মধ্যে রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ নিয়ে ত্রুটির প্রশ্ন উঠেছে।


বিজ্ঞাপন