করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু
বিশেষ প্রতিবেদক : প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২৫ লাখ শিক্ষার্থীকে দূরশিক্ষণের আওতায় যুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার। মহামারি করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ‘বাংলাদেশ কোভিড-১৯ স্কুল সেক্টর রেসপন্স’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ বলেন, টিকা না আসা পর্যন্ত আমরা নিরাপদ নই। এ কারণেই প্রকল্প। এরইমধ্যে প্রকল্পটি নিয়ে সভা করা হয়েছে। আইসিটিসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এই প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গ্রামের প্রতিটি স্কুলে ইন্টারনেট যাবে। মোবাইল কিনে দিলেই হবে না, নেট সংযোগ থাকতে হবে। তবে নেটও এখন দুর্বল। এটা নিয়ে আরো বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমরা সব বিষয় পরিষ্কারভাবে দেখেই প্রকল্পটি অনুমোদন দেব।
জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১২৬ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেবে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন (জিপিই)। আর সরকারি কোষাগার থেকে বাকি টাকা ব্যয় হবে। এ প্রকল্পটি চলতি সময় থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। এরইমধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এদিকে, করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য ভারতীয় ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল (পরীক্ষামূলক প্রয়োগ) বাংলাদেশেও করার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। একই সঙ্গে সম্ভাব্য ওই টিকা চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে বাংলাদেশেও এর উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে। হাই কমিশন সূত্র জানায়, সম্প্রতি দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এস জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা ভ্যাকসিন উন্নয়নের নানা পর্যায়ে সহযোগিতার আশা করছি। মানবদেহে চূড়ান্ত পর্যায়ে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা এবং পরবর্তীতে তা ব্যবহার উপযোগী প্রমাণিত হওয়া মাত্র যৌথ উৎপাদন ও বিতরণে সহযোগিতা দিতে চায় ভারত।
ভারতে কোভিড-১৯ টিকার পরীক্ষা শুরু হওয়া মাত্রই তা বাংলাদেশেও শুরু করা হবে। এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তার সরকারের পক্ষে বাংলাদেশকে এ প্রস্তাব দেন। ভ্যাকসিনের সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা পরীক্ষার সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। ভারতে এ প্রক্রিয়া শুরু হওয়া মাত্রই তা বাংলাদেশে চালু করতে ভারত প্রস্তুত বলে জানান তিনি। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, একই ধরনের ট্রায়াল দুই দেশের স্বাস্থ্য খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক শক্তিশালী করবে এবং এতে করে ভবিষ্যতে যৌথভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং বণ্টন করাও সহজ হবে। যৌথভাবে কোভিড টিকা উৎপাদনে ভারত সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিশ্চিত করবে।
অপরদিকে দূরশিক্ষণ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় ৩৫টি বিষয়ের ওপর ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ২৫ লাখ শিক্ষার্থীকে দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা দেয়া হবে। এছাড়া এর মাধ্যমে বিষয়ভিত্তিক ডিজিটাল কনটেন্ট কনসিয়াস ও প্রেসিস করা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষা ক্ষেত্রে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে উপবৃত্তিসহ পুনঃভর্তি কার্যক্রমের কথা বলা হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক কনটেন্ট তৈরি করা হবে। মহামারি করোনার কারণে ৩ কোটি ৮৬ লাখ ছাত্রছাত্রীর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশব্যাপী সব বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।