অভিযোগ লাখ লাখ, ব্যবস্থা যৎসামান্য

অপরাধ আইন ও আদালত

আজকের দেশ ডেস্ক : দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য চালু করা হটলাইন নাম্বারে তিন বছরে চল্লিশ লাখের বেশি কল এলেও এর মধ্যে মাত্র দুইশর কিছু বেশির তদন্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সূত্র বিবিসি বাংলা


বিজ্ঞাপন

২০১৭ সালে এই হট-লাইন নাম্বার ১০৬ চালু করা পর প্রথম দিনেই কল এসেছিলো ৭৫ হাজার। দুর্নীতি দমন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে নাগরিক, গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দুদকে মোট ১৭ হাজার ৯৫৩টি অভিযোগ এসেছিলো। যার মধ্যে অনুসন্ধানের জন্য বাছাই করা হয়েছে ৯৩৭টি এবং ৩৭৭টি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

এর পর থেকে তিন বছর পার হয়ে গেছে। এই তিন বছরে দুদকের টেলিফোন সিস্টেমে প্রায় ৪২ লাখ মানুষ কল করেছে। এতো সংখ্যক ফোনকল থেকে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার একশটির মতো।

এসব অভিযোগের মধ্যে ২০৭টি অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। এরমধ্যে চলতি বছর তদন্ত শুরু হয়েছে ৮১টি ঘটনার। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গ্রেপ্তার ও মামলা করা হয়েছে ১৪টি ক্ষেত্রে।

এছাড়া অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালিয়ে হাতে-নাতে ঘুষের টাকা পাওয়া গেছে এমন ঘটনার সংখ্যা ৭টি।

এ প্রসঙ্গে দুদকের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, আরো অনেক অভিযোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৯ সালে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এক হাজার একটি।

তিনি বলেন, যেসব অভিযোগ দুদকের এখতিয়ারের মধ্যে থাকে, এবং যেসব ঘটনার ক্ষেত্রে মানুষের কুইক রেসপন্স দরকার হয় সেসব ক্ষেত্রে কমিশনের অনুমোদন নিয়ে অভিযানের বিষয়ে কর্মকর্তা পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

তিনি জানান, আগের চেয়ে এখন কল আসার পরিমাণ কিছুটা কমে গেছে। এর মূলত দুটি কারণ। একটি হচ্ছে করোনাভাইরাস মহামারি এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে মানুষের মধ্যে কিছুটা সচেতনতা বেড়েছে। মানুষ বোঝে যে সব ধরণের দুর্নীতির ঘটনাই আসলে দুর্নীতি দমনের অধিভূক্ত নয়।

ব্যবস্থা নেয়ার হার কম হওয়া প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ১০৬ এর হট-লাইনটি মূলত বানানো হয়েছিলো দুর্নীতি দমন নয় বরং প্রতিরোধের জন্য। অর্থাৎ একটি দুর্নীতির ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে এমন তথ্য পেলে সেখানে জনবল পাঠিয়ে সেটি রুখে দেয়াই ছিলো এই হট-লাইনের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু যখন কোন ঘটনায় দুদকের জনবল বা দল গিয়ে তাৎক্ষনিকভাবে কোন সমাধানে আসতে পারে না সেক্ষেত্রে তদন্ত গঠন করা হয়।

হটলাইন থেকে পাওয়া অভিযোগ থেকে অনেক বড় তদন্ত, মামলা ও চার্জশিট হয়েছে এবং বিচারও চলছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিসেবে তিতাসে দুর্নীতি তদন্তের বিষয়টি উল্লেখ করেন দুদক চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, হটলাইন ১০৬, ই-মেইল, লিখিত অভিযোগ- সব মাধ্যম মিলিয়ে প্রচুর পরিমাণ অভিযোগ আসছে সংস্থাটির কাছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না বলে জানান তিনি।

তিনি জানান, যত অভিযোগ পাওয়া যায় তার ৯৮ শতাংশই দুদকের এখতিয়ারের মধ্যে থাকে না। সকল দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং দুদকের আওতার মধ্যে নয়। একসময় ছিলো। ২০১৫ সালের পর আইন সংশোধন করার পর আর নেই। এসব তথ্য না জানা এবং না বোঝার কারণে যেকোন দুর্নীতির ঘটনার ক্ষেত্রেই দুদকে অভিযোগ করে মানুষ।

যেসব অভিযোগের সুস্পষ্ট তথ্য-উপাত্ত থাকে এবং সত্যতা রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায় সেসব ক্ষেত্রে আওতায় না থাকলে, ওই অভিযোগগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সেগুলো হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা হয় বলে জানান দুদকের চেয়ারম্যান মি. মাহমুদ।

তিনি আরও জানান, আওতায় না থাকলেও এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের আওতায় থাকে, তখন সেসব বিভাগে অভিযোগগুলো পাঠিয়ে দেয়া হয়।

ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় যেসব অভিযোগের নিষ্পত্তি করা সম্ভব সেগুলো সেসব জেলার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয় বলেও জানান তিনি।