ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব পেলো দুই সিটি কর্পোরেশন

জাতীয় রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভুত সমস্যার অবসান ঘটলো। রাজধানীর ঢাকার জলাবন্ধতা নিসরনের দায়িত্ব ওয়াসার হাত থেকে দুই সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর একটি হোটেলে ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার নিকট হতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নিকট হস্তান্তরের লক্ষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
সমঝোতা স্মারকের স্বাক্ষর করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমান উল্লাহ নুরী ও ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান
অনুষ্ঠানের ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘‘নতুন বছরের প্রথম দিন শুক্রবার হওয়ায় তারপরের দিন, শনিবার হতেই আমরা প্রাথমিকভাবে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। জিরানি খাল, মান্ডা খাল ও শ্যামপুর খাল এবং পান্থপথ বক্স কালভার্ট ও সেগুন বগিচা বক্স কালভার্ট হতে, যেখানে দীর্ঘদিনের স্তুপকৃত বর্জ্য যা শক্ত হয়ে গিয়েছে, বর্জ্য অপসারণের বিশাল কর্মযজ্ঞ আমরা হাতে নিয়েছি। আগামী মার্চের মধ্যে এই তিনটি খাল ও দুটি বক্স কালভার্ট হতে বর্জ্য অপসারণ করার কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা আমরা নির্ধারণ করেছি।’’
এই অপসারণ কার্যক্রমে ঢাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘‘এই তিনটি খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং বক্স কালভার্টগুলোর কি অবস্থা, কাজ শুরু না করলে আমরা বুঝতে পারব না। আগামী মার্চের মধ্যে এই তিনটি খাল ও দুটি বক্স কালভার্ট যদি আমরা পরিষ্কার করতে পারি, তাহলে আগামী জুন নাগাদ বাকীগুলো ধরব।’’
এ সময় ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস আরও বলেন, ‘‘আমরা এরইমাঝে কালু নগর খালে একদফা কিছু পরিষ্কার করেছি। বাকিটা আমরা পরিষ্কার করব। আমরা আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল ধরব, ধোলাই খালের বক্স কালভার্ট ধরব। পর্যায়ক্রমে আগামী জুন মাস নাগাদ আমরা এগুলো সব পরিষ্কার করার বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছি এবং আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে। আমরা বসে নেই। আমরা যদি মন্ত্রণালয়ের কাছে টাকা চাই, প্রকল্প নির্ভর কাজ করতে চাই, তাহলে দেখা যাবে আগামী দুই বছরের মধ্যে কাজ আরম্ভ করতে পারব না। এজন্য আমরা নিজ অর্থায়নে কাজগুলো আরম্ভ করছি।’’
বর্জ্য অপসারণের পাশাপাশি খালগুলো নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস এ সময় আরও বলেন, ‘‘আমরা এই খালগুলোর যেমনি সীমানা নির্ধারণ তেমনি অবৈধ সব দখল উচ্ছেদ এবং উচ্ছেদ করার পর সেই জায়গাগুলোর সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা এবং নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে।’’
আজকের দিনটিকে ঢাকাবাসীর জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন আখ্যা দিয়ে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘‘দু’টি কারণে আজকের দিনটি ঐতিহাসিক – একটি হলো ঢাকা ওয়াসার নিকট হতে জলাবদ্ধতা নিরসনের গুরুদায়িত্ব সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর; দ্বিতীয়টি হলো ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। আর ইচ্ছা ও উপায়ের সেতুবন্ধন হলো রাজনৈতিক নেতৃত্ব।’’
এ হস্তান্তর প্রক্রিয়া সহজ ছিল না উল্লেখ করে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘‘কাল থেকে মনে হবে, এটা তো খুব সহজ ছিল। এমনি এমনি হয়ে গেছে। আসলে কোন কিছুই এমনি এমনি হয় না। ৬০০ ডলার থেকে এমনি এমনি ২ হাজার ডলার মাথাপিছু আয় আমরা অর্জন করেছি, এটা (এমনি এমনি) সম্ভব না। তেমনি কেউ একজন বেতার কেন্দ্রে বসে, আই, অন বি হাফ অব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ডিক্লেয়ার দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ। হয়ে গেল, ইন্ডিপেন্ডেন্স অফ বাংলাদেশ? দীর্ঘ সংগ্রাম পথ পরিক্রমা আন্দোলন, রক্ত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ – তারপরেই এলো স্বাধীনতা। কিন্তু আমরা পেছনেরটা ভুলে যাই। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, পেছনেরটা ভুলবেন না।’’
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘১৯৮৮ সালের আগে ঢাকার খালগুলো তদারকি করত তৎকালীন ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওই খালগুলো ওয়াসার কাছে গেল তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। তাই এতোদিন খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণে অনেকটা সমন্বয়হীনতা ছিল। তিনি বলেন, এখন ঢাকার ২৬টি খাল ওয়াসার কাছ থেকে ডিএনসিসি এবং ডিএসসিসিকে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ওই দুটি সংস্থা করবে। এতে নগরে আর জলাবদ্ধতা হবে না।’’
ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘আগে বৃষ্টি হলেই খালের পানি নেমে যেত। কিন্তু এখন বৃষ্টির কয়েক ঘন্টা পরও রাস্তা থেকে পানি নামে না। তাই নিজ উদ্যোগে ডিএনসিসির অধীনে থাকা সবগুলো খাল তারাও পরিষ্কার করেছেন। তাই চলতি বছর নগরে জলাবদ্ধতা হবে। এ ছাড়া এসব খালের সৌন্দর্য বাড়াতে তারাও প্রকল্প নিয়েছেন।’’


বিজ্ঞাপন