ইয়াবা পাচারের বড় রুট এখন রেলপথ

অপরাধ এইমাত্র

স্ক্যানার মেশিন নেই : ট্রেন ও স্টেশনেও তল্লাশি নেই

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : রেলপথে চোরাচালানের ঘটনাটি প্রাচীন কালের। তবে এখন প্রাণঘাতী মাদক ইয়াবা পাচারের বড় রুট হিসেবে রেল ব্যবহৃত হচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সতর্কাবস্থায় থাকলেও রেলপথে মাদক প্রতিরোধে সফলতা আসছে না।
শরীরের স্পর্শকাতর স্থান এমনকি পেটের ভেতরে রেখে নারী বা পুরুষরা ইয়াবা পাচার করছে। ট্রেনের শত শত যাত্রীর মধ্যে চোরাকারবারিরা সহজেই নিজেদের আড়াল করে রাখছে। যাত্রীবেশে ইয়াবা ব্যবসার এমন কৌশলে খোদ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উদ্বেগ প্রকাশ করলেও অধিকাংশ ট্রেনেই নেই কোন প্রতিরোধের ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, কোনো স্টেশনেই যাত্রীদের স্ক্যানার কোন মেশিন নেই। আবার মালবাহী ট্রেনে নেই নজরদারির কোন ব্যবস্থা।
স্থল নৌপথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারী বৃদ্ধি পাওয়ায় ইয়াবার বড় বড় চালান পাচারে এখন রেলপথ এমনকি আকাশ পথও ব্যবহার করছে। সীমান্তবর্তী এলাকার রেলপথে প্রতিদিনই ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য প্রবেশ করছে ঢাকায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৫ মাসে শুধু রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকেই উদ্ধার হয়েছে দুই মণ গাঁজা ও ২১ হাজার বোতল ফেনসিডিল। গতানুগতিক পদ্ধতিতে রোধ করা সম্ভব নয় রেলপথে মাদক পাচার। সীমান্তবর্তী স্টেশনগুলোতে স্ক্যানিং মেশিন বসানো হলে অনেকটা রোধ করা সম্ভব হবে বলে রেলপুলিশের সদস্যরা মনে করছেন।
পুলিশ জানায়, গত ১৩ মার্চ সিলেট থেকে ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে কমলাপুরে আসেন সোহেলুর রহমান। ট্রেনের ভেতর তার চলাচলে সন্দেহ হলে নজরদারীর পর তাকে আটক করে রেলওয়ে থানা পুলিশ। পরে সঙ্গে থাকা লাগেজ তল্লাশি করে পাওয়া যায় ভারতীয় ফেনসিডিল। পরে তাকে আটক করা হয়। আটক সোহেল ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকায় নিয়মিত ফেনসিডিল পরিবহন করে আসছিল বলে সে স্বীকার করে। প্ল্যাটফর্মে পুলিশ সদস্যদের দেখে কুলির কাছে ব্যাগটা রেখে পালানোর চেষ্টা করে। পরে পুলিশ তাকে হাতেনাতে আটক করে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের ট্রেনে প্রায়ই আসছে ইয়াবা, উত্তরবঙ্গ থেকে ভারতীয় ফেন্সিডিলসহ সিলেট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ট্রেনগুলো দিয়ে ঢাকায় ঢুকছে হেরোইন। গত ১ মাসেই কমলাপুর থেকে আটক করা হয়েছে দেড় মণ গাজা। যাত্রীবেশী চোরাকারবারিরা দিন দিন পাল্টাচ্ছেন কৌশল। ফলে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না।
রেলওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, রেলওয়ে স্টেশনগুলো নিরাপত্তার বলয়ে না আনা হলে এ পথে ইয়াবা কিংবা মাদক প্রতিরোধ করা কখনও সম্ভব নয়। তিন হাজার ২৮০ কিলোমিটার রেলপথে প্রতিদিন প্রায় সোয়া তিন লাখ যাত্রী চলাচল করে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় দুই হাজার ৩৭৩ জন রেলওয়ে পুলিশ রয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় আরো জনবল ও আধুনিক সরঞ্জামের অভাব, ট্রেনে তল্লাশি না হওয়াসহ স্টেশনগুলো প্রায় উন্মুক্ত থাকায় চোরাকারবারিরা রেলপথকে নিরাপদ মনে করছে। দেশের বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন যেসব যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে আন্তঃনগর ট্রেনের সবক’টিতে পুলিশ থাকে না। আর যেগুলোতে পুলিশ থাকে সেখানেও তাদের সংখ্যা হাতেগোনা। যাত্রীবাহি একেকটি ট্রেনে ৩-৪ জন পুলিশ থাকে। ফলে যাত্রীদের দেহ তল্লাশি কিংবা অবৈধ মালামাল শনাক্ত করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টিকিট পরীক্ষার সময় টিটিইদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের থাকতে দেখা যায়। শুধু গোপন সংবাদের ভিত্তিতেই সামান্য অবৈধ মালামাল, অপরাধী আটক করতে পারে রেলওয়ে পুলিশ।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন পণ্য চোরাচালানের নিরাপদ বাহন হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে লোকাল ও মেইল ট্রেন। এসব ট্রেনে কোনো পুলিশ থাকে না। নির্ধারিত সিটের তুলনায় পাঁচ থেকে ছয় গুণ যাত্রী চলাচল করে এসব ট্রেনে। চোরাকারবারিরা যাত্রীবেশে এসব ট্রেনে যাতায়াত করছে। আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে বিভিন্ন কৌশলে মাদক বহন করছে অপরাধীরা। মাঠপর্যায়ে কাজ করা পুলিশ সদস্যদের বক্তব্য-রেল পুলিশের জনবলের ঘাটতি রয়েছে। তল্লাশি চালানোর জন্য নেই কোনো আধুনিক যন্ত্র। ট্রেন থেকে হাজার হাজার যাত্রী নামে। সন্দেহ হলে পুলিশ কাউকে তল্লাশি করে। আগে বিভিন্ন ট্রেনে র‌্যাব ও লোকাল পুলিশের অভিযান থাকলেও বর্তমানে তাদের কোনো অভিযান নেই।
ফলে এসব মাদক ব্যবসায়ীরা যাত্রীবেশে পেটে, জুতা, মানিব্যাগ, মোবাইলফোন, টুপি, কলম, ফলমুল, বইসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের মাধ্যমে ইয়াবা পাচার করছে। শুধু তাই নয়, নারী মাদকপাচারকারীরা তাদের যৌনাঙ্গেও আনা-নেওয়া করছেন।
রাজধানীর বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে গত জানুয়ারিতে ফাঁড়ির ইনচার্জ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ী আকাশ (২৮) কে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে ২৫ পিস ফেনসিডিল উদ্ধার করে। রাজশাহী থেকে আসা বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে মাদকদ্রব্য আসছে। এই সংবাদে তল্লাশী চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় গত ১৩ জানুয়ারি জিআরপি থানায় মামলা নং-১, দায়ের করা হয়।
রেলপথে মাদকপাচারের বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।


বিজ্ঞাপন