নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভাষা-আন্দোলনের হাত ধরেই আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। নানা লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভাষার সংগ্রাম পরিণত হয়েছিল আমাদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সংগ্রাম। সেই বাংলা ভাষা আজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী মানুষের প্রাণে অনুরণিত হয়।
বৃহস্পতিবার ‘অমর একুশে বইমেলা’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও বইমেলা আয়োজিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আমি আয়োজক সংস্থা-বাংলা একাডেমি, দেশি-বিদেশি প্রকাশক এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে তা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৮ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত।
তিনি বলেন, এবারের বইমেলার মূল উপজীব্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করছি। আর এক সপ্তাহ পরে আমরা উদযাপন করব বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ও লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংগ্রাম, সমৃদ্ধি ও অর্জনের ৫০ বছর পূর্তি।
‘আজকের এই দিনে আমি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ সকল ভাষা শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সকল ভাষা সৈনিকের প্রতি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কানাডা প্রবাসী সালাম ও রফিকসহ কয়েকজন বাঙালি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ সরকার এ বিষয়ে জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করে। ফলশ্রুতিতে ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদানের জন্য আমি ইতোমধ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দাবি উত্থাপন করেছি। বিশ্বের সকল ভাষাগোষ্ঠীর মাতৃভাষা সংরক্ষণ, বিকাশ ও চর্চার লক্ষ্যে আমরা ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি।
উন্নয়নের দিক দিয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মহান একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় মন ও মননের প্রকাশকে সাধুবাদ জানিয়ে সহযোগিতা করে থাকে। মুক্তবুদ্ধির চর্চা, স্বাধীন মত প্রকাশ এবং শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চার জন্য বর্তমানে দেশে অত্যন্ত সুন্দর ও আন্তরিক পরিবেশ বিরাজ করছে।
বইমেলার সাফল্য কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন, বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলি। সকল ভেদাভেদ ভুলে মহান একুশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে একসঙ্গে কাজ করব-এই হোক একুশে গ্রন্থমেলায় আমাদের অঙ্গীকার।