নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী বছর শুধু প্রথম; দ্বিতীয়; ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ২০২২ শিক্ষাবর্ষের এই পাঠ্যবইগুলো ছাপা হবে নতুন কারিকুলামে। সেইসাথে সংক্ষিপ্ত হচ্ছে সিলেবাস। অন্যদিকে নবম ও দশম শ্রেণিতে চালু হতে যাচ্ছে গুচ্ছ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে বিভাগ বিভাজন তুলে দেয়া হবে। ফলে এ স্তরে বিজ্ঞান, মানবিক বা বাণিজ্য নামে কোনো বিভাগ থাকবে না। সবাইকে সব বিষয় পড়তে হবে। এতে একজন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্তরে সব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করবে। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের সকল বিষয়ের ওপরেই সমান জ্ঞান থাকবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে এনসিটিবির গবেষণা কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে তার মোবাইল ফোনে কল করা হলে তার নাম্বারেও তাকে পাওয়া যায়নি।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, গুচ্ছ পদ্ধতি চালু হলে তা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই ভাল হবে। এতদিন তো শিক্ষার্থীরা আলাদা আলাদা বিষয়ের ওপর পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু এই গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা সকল বিষয়ের ওপর দক্ষ হয়ে উঠবে। এর ফলে যে কোনো বিভাগে তারা চাকরিও করতে পারবে খুব সহজে।
এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের উর্দ্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, আগে তো নবম-দশম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা আলাদা আলাদা বিভাগে আলাদা আলাদা বই পড়তো। বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক এই তিনটি বিভাগ আলাদা ছিল। এক বিভাগের শিক্ষার্থীর আরেক বিভাগের বই পড়ার কোনো সুযোগ থাকতো না। ফলে শিক্ষার্থীরা পৃথকভাবে জ্ঞান লাভ করতো। একেক জন একেক বিষয়ের ওপর দক্ষ থাকতো। কিন্তু বর্তমানে যে গুচ্ছ পদ্ধতি চালু হতে যাচ্ছে সেই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা সকল বিভাগের বই পড়ার সুযোগ পাবে। ফলে শিক্ষার্থীরা সব বিষয়ের ওপরেই সমানভাবে দক্ষ হয়ে উঠবে। কেউ কারো থেকে পিছিয়ে থাকবে না।
এদিকে এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, আগামী শিক্ষাবর্ষে চারটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেয়া হবে। এবং এই বইগুলো নতুন কারিকুলামে আলাদাভাবে ছাপানো হবে। প্রথম, দ্বিতীয়, ছষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন কারিকুলামের এই বইগুলো পাচ্ছে।
এনসিটিবির এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী পাবলিক পরীক্ষার সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষা কমিয়ে দিয়ে তাদের শ্রেণিকক্ষে ব্যবহারিক কার্যক্রমের ওপর জোর দেয়া হবে। সেইসঙ্গে ধারাবাহিক মূল্যায়নের পরিমাণও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।
আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে কারিকুলামে পরিবর্তন আনা হবে। সে হিসেবে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে প্রথম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে এ কারিকুলামের কার্যক্রমের উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা বাতিল করা হয়েছ।
এদিকে পরের শিক্ষাবর্ষে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের সপ্তম ও ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হবে। এরপরে পর্যায়ক্রমে নবম এবং উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও নতুন কারিকুলামে পাঠ্যবই পাবে। এবং নবম ও দশম শ্রেণির কারিকুলামে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
এদিকে মাধ্যমিক স্তরের বইয়ের চাহিদা চেয়ে উপজেলা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বিভাগীয় উপ-পরিচালক তার আওতাধীন জেলার তথ্য যাচাই করে সব জেলার তথ্য সমন্বিত করে বইয়ের চাহিদা সংক্রান্ত তথ্য আগামী ৭ এপ্রিলের মধ্যে ডিপিইর বই বিতরণ শাখায় পাঠাতে হবে। সময়মত চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যবই মুদ্রণ ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিষয়টি জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তার আওতাধীন সব উপজেলা বা থানা হতে প্রাপ্ত পাঠ্যপুস্তকের চাহিদা সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করবে এবং সব উপজেলা বা থানার তথ্য জেলায় সমন্বিত করে সেই তথ্য নির্দিষ্ট ছকে ৪ এপ্রিলের মধ্যে বিভাগীয় উপ-পরিচালক অফিসে পাঠাতে হবে। এনসিটিবি সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে ছোট হয়ে আসছে এসএসসি ও এইচএসসির সিলেবাস। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি এবং এপ্রিলে নির্ধারিত আছে এই দুটি পরীক্ষা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, এখন যারা দশম শ্রেণিতে আছে তারা আগামী ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষা দেবে। অন্যদিকে এখন যারা নবম শ্রেণিতে আছে তাদেরকেও সরাসরি পাঠদান হয়নি। এই সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই সংক্ষিপ্ত করা হবে তাদের সিলেবাস। এ ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ন চন্দ্র সাহা’র সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে করোনার কারণে তার সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়নি।