অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা কিভাবে গোপন তথ্য বের করে জনস্বার্থে সংবাদ প্রচার করবে?

এইমাত্র জাতীয়

মন্তব্য প্রতিবেদন

 

‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকের পর তার বিরুদ্ধে নথি চুরি বা সরকারি ফাইলের ছবি তোলার অভিযোগ এনে মামলা করে তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিল কিন্তু প্রশ্ন উঠছে যে জনস্বার্থে যে কোন কৌশলেই হোক সাংবাদিকরা তথ্য বের করতে না পারলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সুযোগ কতটা থাকবে?’

 

আনিনুর রহমান বাদশা : রোজিনা ইসলাম অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে সারাদেশে সুপরিচিত এবং তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে যে, তিনি মন্ত্রণালয়ের সচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার কক্ষে থাকা নথি চুরি ও একটি ফাইলের ছবি তুলেছেন যাতে, তাদের ভাষায়, দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় তথ্য ছিলো।


বিজ্ঞাপন

তবে তার পরিবার স্পষ্ট করেই বলেছে সাম্প্রতিক কিছু দুর্নীতির রিপোর্টের কারণেই তাকে হেনস্থা করেছে স্বাস্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা।

প্রশ্ন উঠেছে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা তাহলে কিভাবে জনস্বার্থে গোপন তথ্য বের করে তা প্রকাশ করবেন?

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে রোজিনা ইসলামের বেশ কিছু রিপোর্ট আলোচনায় ও এসেছে।

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলছেন তথ্য চুরি না করে ও সরকারের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে এবং সে পদ্ধতি অনুসরণ করে যে কোন তথ্য পাওয়া সম্ভব বলে তিনি দাবি করেন।

একটি পদ্ধতি আছে, যে কোন তথ্য পেতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়। মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া না গেলে তথ্য কমিশনে আবেদন করতে হয়। ২০১৪ সালে তথ্য কমিশন গঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এক লাখ উনিশ হাজার ৮৩১ টি আবেদনের নিষ্পত্তি হয়েছে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত । শুধু নন-ডিসক্লোজার আইটেম তিনি পাবেন না।

তথ্য কমিশনের নির্দেশনার পর কেউ তথ্য না দিলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দায়ী থাকবেন। অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াও হয়েছে জরিমানা করা হয়েছে।

তথ্য পাওয়ার তেমন কোন দৃষ্টান্ত নেই
কিন্তু বাস্তবতা হলো তথ্য অধিকার আইনে তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিদের নিয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম, কিংবা অব্যবস্থাপনার বিষয়ে তথ্য পাওয়ার উদাহরণ নেই। সাধারণ তথ্য বা যেগুলো সরকারকে বিব্রত করবে না- সাধারণত এমন তথ্যই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো থেকে পাওয়া যায়।

যেমন গত বছর স্বাস্থ্য খাতেরই একটি বিষয়ে তথ্য পেতে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেছিলেন ঢাকার একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক আসিফ জাহাঙ্গীর।

তিনি বলছেন, গত বছর মার্চে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের পর করোনা ব্যবস্থাপনার একটি বিষয়ে প্রতিবেদনের জন্য তথ্য পেতে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন।
যোগাযোগের পর কোন তথ্য দিতে রাজী না হয়ে, তিনি আমাকে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে বলেন। সেটি করার পর তিনি তথ্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। তার কাছে গিয়ে চিঠি দেয়ার এর এক দু মাস পরও কোন উত্তর এলোনা। আবার ওই কর্মকর্তার কাছে গেলাম। এমন ৫/৭ বার দফায় দফায় যোগাযোগ করেছি। সর্বশেষ প্রায় ছয় মাস পর তারা জানিয়ে দেয় যে তারা কোন তথ্য দিতে পারবে না।

তথ্য অধিকার আইনে অনিয়ম বা দুর্নীতি বিষয়ক কোন তথ্য চাইলে তা সরকারি দফতরগুলো দিয়েছে এমন কোন নজির তো নেই-ই বরং অনেক ক্ষেত্রে মাসের পর মাসে আবেদনের কোন জবাব ও দেয়া হয় না।

এখানে প্রশ্ন ওঠে তাহলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে তথ্য তুলে নিয়ে এসে তা জনস্বার্থে প্রকাশের জন্য কোন পথ অবলম্বন করেন সাংবাদিকরা?

জনাব জাহাঙ্গীর বলছেন, আবেদন করে তথ্য না পেয়ে, পরে তিনি তার সোর্সকে ব্যবহার করে পুরো তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন প্রচার করেন কাজ শুরুর প্রায় এক বছর পর।

বাংলাদেশে সচিবালয়, সংসদ সচিবালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশনসহ সরকারি নানা মন্ত্রণালয় বিভাগ বা দপ্তরের যেসব জায়গায় জনস্বার্থ সম্পর্কিত তথ্য উপাত্ত নির্ভর কাজ বেশি হয় সেখান থেকে তথ্য মূলত এভাবেই সংগ্রহ করেন সাংবাদিকরা।

সংসদের স্থায়ী কমিটি বা সংসদীয় কমিটিগুলোতে প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারের নানা বিভাগ থেকেই প্রতিনিয়ত নানা গোপনীয় প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয় যেগুলো গণমাধ্যমে ও আসে।

অথচ নির্দিষ্ট সভার পর সেসব প্রতিবেদন কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যম কর্মীদের দেয়া হয় না, যেমনি আসেনা সচিবালয়ে হওয়া অনেক সভার খবর।

সচিবালয়ে কাজ করা একজন নারী সাংবাদিক বলছেন, তথ্য পেতে সোর্সকে টাকা দেয়ার অভিজ্ঞতা ও তার আছে। তবে তিনি তার নাম, পরিচয় প্রকাশে রাজি হন নি।

তিনি বলছিলেন, আমার সোর্স মন্ত্রী, সচিব, লিফট ম্যান এবং অফিস সহকারীসহ সব পর্যায়েই সোর্স মেনটেইন করতে হয়। সত্যি বলতে আমাকে পয়সাও দিতে হয়। যার যতটুকু চাহিদা সেটা পয়সা বা অন্য কোনভাবে সহায়তা করা হোক – যে কোনভাবে কনভিন্স করা। যার মাধ্যমে আমি তথ্য পেতে পারি সেখানে সেই পন্থা নিতে হয়।

তাহলে বাংলাদেশ তথ্য কমিশনের ভুমিকা ই বা কি? সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বেক্তির তথ্য পাওয়ার জন্য গঠন করেছেন বাংলাদেশ তথ্য কমিশন। সরকারের তথ্য কমিশন গঠনের মুল উদ্দেশ্য ছিল সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্ম ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা ও সচ্ছতা।