জ্বর হলেই আতঙ্ক, করোনা না ডেঙ্গু

এইমাত্র জাতীয় স্বাস্থ্য

*ডেঙ্গু চিকিৎসায় আলাদা হাসপাতাল
*ডেঙ্গু নিয়ে অবহেলা না করার অনুরোধ


বিজ্ঞাপন

 

বিশেষ প্রতিবেদক : করোনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকার হাসপাতালে ১০২ জন ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালে তিনজন রোগী ভর্তি হন। এ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬০ জনে।
তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪৫৪ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ছয়জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। ডেঙ্গু সন্দেহে মারা যাওয়া তিনজনের তথ্য পর্যালোচনা করার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে সর্বমোট এক হাজার ৬৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক হাজার ২১৬ জন রোগী।
চলতি বছর জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে নয়জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মে’তে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন এবং ২৫ জুলাই পর্যন্ত এক হাজার ৩০৭ জন রোগী ভর্তি হন।
জনবল বাড়িয়ে এডিস মশা নিধনে কাজ করার কথা জানিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রকোপ বাড়ার পর নয় মৌসুম শুরুর আগেই প্রস্তুতি নিলে ডেঙ্গু মোকাবিলা সহজ হতো।
জ্বর আসলেই আতঙ্কে থাকেন নগরবাসী। করোনা, ডেঙ্গু না সাধারণ ফ্লু-তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ে মানুষের মধ্যে। চিকিৎসকের কাছে গেলেই শুনতে হয় করোনা ও ডেঙ্গু পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে আসার কথা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডেই পাওয়া যাচ্ছে এডিসের লার্ভা। কোথাও কোথাও মশাটির ঘনত্ব বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। জুলাই এর চেয়ে আগস্টে রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার খবরে মশা মারতে নেমেছে দুই সিটি করপোরেশন। অসময়ে মশা মারার পদক্ষেপ যে কাজে আসেনি তার প্রমাণ আক্রান্ত বাড়ার এই পরিসংখ্যান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, জুলাই মাসের তিন সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০৬ জন।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মেদ বলেন, জনবল বাড়িয়ে মশা নিধনে কাজ করা হচ্ছে। শিগগিরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী রোববার আমাদের আরও ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যোগদান করার পরে আমরা মানুষের বাড়ির আঙ্গিনায় ঢুকবো।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু নিধনে চালানো চিরুনি অভিযান ঈদের পরিচ্ছন্নতার কারণে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও ফের শুরু হচ্ছে মশা মারার কার্যক্রম।
তিনি আরও বলেন, ৪৪টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে আমরা বিনামূল্যে ডেঙ্গু টেস্টের দিয়ে দিয়েছি।
এডিস মশার লার্ভার অর্ধেকই বাড়ির ভেতরে জমা পানিতে জন্ম নেওয়ায় ভবন মালিক সমিতির সহযোগিতা চাইলেন দুই সিটি কর্তৃপক্ষ।
করোনাকালে ডেঙ্গু নিয়ে অবহেলা না করার অনুরোধ : করোনা মহামারিকালে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে জনগণকে অবহেলা না করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম।
রোববার দুপুর ২টায় কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার এন্টিজেন কিটের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে এ পরীক্ষাটি বিনামূল্যে করার সুযোগ রয়েছে। ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে বিলম্ব না করে সরকারি কিংবা বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার অনুরোধ জানান তিনি।
ডেঙ্গু চিকিৎসায় আলাদা হাসপাতাল : করোনার চিকিৎসা আর ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা এক হাসপাতালে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় আলাদা হাসপাতাল নির্ধারণ করার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। রোববার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কনভেনশন সেন্টারে নির্মাণাধীন ফিল্ড হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। প্রায় ১২শ’ রোগী ইতোমধ্যে ভর্তি হয়েছে। আমরা একদিকে নন কোভিড রোগীর চিকিৎসা, অপরদিকে করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা, অন্যদিকে টেস্ট ও ভ্যাকসিন— সব মিলিয়ে একসঙ্গে করতে হচ্ছে। তাই আমরা আজকে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল চিহ্নিদ করেছি, যেখানে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেবো। কারণ, যেখানে করোনা রোগীর চিকিৎসা হয়, সেখানে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করা হবে সেগুলো হচ্ছে— স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল, লালকুঠি হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতালসহ আরও কয়েকটি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হবে। অন্যান্য হাসপাতালে জায়গা নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এ বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী আপনারা ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নেবেন।’