বরাদ্দের চেয়ে চাপ বেশি ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই

এইমাত্র জাতীয় স্বাস্থ্য

টিকাদানের ৩য় দিন


বিজ্ঞাপন

বিশেষ প্রতিবেদক : চলমান করোনা ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইনে রাজধানীর ওয়ার্ড ভিত্তিক গণটিকাদান কেন্দ্রগুলোতে টিকা গ্রহীতাদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে। টিকা নেওয়ার জন্য ভোর পাঁচটা থেকে টোকেনের অপেক্ষায় মানুষের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে সময় বাড়ার সাথে সাথে। ওয়ার্ড ভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে প্রত্যেকদিন যে পরিমাণ টিকা বরাদ্দ থাকে তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি মানুষ আসে টিকা নেওয়ার জন্য। এতে করে টিকা গ্রহীতারা টিকা না পেয়ে ফিরে যাবার মতো ঘটনা ঘটছে এবং টিকা পেলেও চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ধানমন্ডি-১৫ নম্বর ওয়ার্ডের গণটিকা কেন্দ্রে টিকা নিতে এসে প্রথম দিন ফিরে যেতে হয়েছে ৩২ বছর বয়সী মোন্না’রকে। পেশায় প্রাইভেটকার চালক এই ব্যক্তি ৯ আগস্ট আবার এসেছেন টিকা নেওয়ার জন্য।
দ্বিতীয় দিন এসে প্রায় সাত ঘণ্টা অতিবাহিত হয়ে গেলেও টিকা নিতে না পারায় ক্ষোভ নিয়ে এই ব্যক্তি বলেন, ভোর সাড়ে পাঁচটায় এসেছি। এখন বাজে দুপুর সাড়ে ১২টা। টোকেন থাকা সত্ত্বেও আমি টিকা নিতে পারতেছি না। রোববারও আসছিলাম কিন্তু অপেক্ষা করে করে টিকা না পেয়ে ফিরে গেছি। সোমবারও পাবো বলে মনে হয় না। আমরা যারা গরিব তারা লাইনে দাঁড়ায় থাইকাও পাইতেছি না কিন্তু ভিআইপিরা আইসা টিকা দিয়া চইলা যাইতেছে। ভিআইপিগো জন্য এত দরদ, তাইলে তাগো জন্যে আলাদা বুথ করুক। আমাগো লাইন ভাইঙ্গা তারা টিকা নিবো ক্যান?
৫২ বছর বয়সী তৈয়বুর রহমান পেশায় একজন নিরাপত্তা রক্ষী। তার কর্মস্থল থেকে ভ্যাকসিন নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য আজ তাকে কিছুটা সময় ছুটি দেওয়া হয়েছে। তিনিও ভোর বেলায় এসেছেন এই গণটিকা কেন্দ্রে। টোকেন সংগ্রহ করার পর দুপুর একটা বেজে গেলেও টিকা নিতে না পারায় খুব বিরক্তি নিয়ে তিনি বলেন, অফিসের নির্দেশ আছে টিকা নিতে হবে। তাই কাম ফালায়া টিকা নিতে আসছি সেই ভোর বেলায়। ভোর থাইকা সকাল হইলো, সকাল গড়ায়া দুপুর কিন্তু টিকা নিতে পারলাম না। সকালে যতক্ষণ সাংবাদিকরা আছিলো ততক্ষণ সব কিছু ঠিকঠাক চলছে। সাংবাদিকরা যাওয়ার পরেই আবার বিশৃঙ্খলা শুরু হইছে। আজ টিকা নিতে না পারলে অফিস আর সময় দিব না। টিকা নিতে আইসা রোদে দাঁড়ায় থাকতে থাকতে অবস্থা কাহিল।
টোকেন নিয়ে অপেক্ষারত মোহাম্মদ হাসান (৩১) নামের আরেক পরিবহন চালক বলেন, সকালে যখন আসি তখন আমি আধা কিলোমিটার পর্যন্ত লাইন দেখছি। এই লাইন দেখে অনেকে টিকা আর টোকেন না নিয়েই চলে গেছে। আবার অনেকেই টোকেন নিয়ে অপেক্ষা করতে করতে টিকা না নিয়েই চলে গেছে। মানুষ বেশি থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানা যায় নাই। অনেক ধাক্কাধাক্কিও হইছে। টোকেন হাতে পাওয়ার ধাক্কাধাক্কি না থামলেও অপেক্ষার শেষ হচ্ছে না। মনে হয় আজ আমরা টিকা পাবো না!
এই কেন্দ্রে টিকা প্রদানের জন্য সহযোগিতা করছে ব্র্যাকের স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসা কর্মীরা। তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রত্যেক কেন্দ্রে প্রতিদিনের জন্য ৩৫০টি ভ্যাকসিন বরাদ্দ। অথচ ভোর থেকে এই কেন্দ্রে প্রায় তিন হাজার মানুষ এসেছে টিকা নেওয়ার জন্য। এত মানুষ তো টোকেনই পাবে না। টিকা না পেয়ে ঘুরে যাবে এটা খুবই স্বাভাবিক। তবে আমরা যতটুকু জানি বা বলতে পারি সেটা হলো ১৪ তারিখ পর্যন্ত টিকার সংকট থাকবে। এর পরে আবার সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন টিকার থেকে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা বেশি তাই এমন হচ্ছে। আশা করি এই সংকট খুব দ্রুতই দূর হবে সরকারের আন্তরিক ইচ্ছায়।
উল্লেখ্য, এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ছয় দিনে ৩২ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে সরকার। পঁচিশ বছর থেকে বেশি যাদের বয়স তাদের টিকা দেওয়া হবে এই ক্যাম্পেইনের আওতায়। এছাড়া পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়স্ক নারী এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও দূর্গম আর প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে।