নকল ভেজাল ঔষধ তৈরির চক্রের ৮জন গ্রেফতার

অপরাধ স্বাস্থ্য

বিপুল পরিমাণ নকল ঔষধ ও ঔষধ তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার
মিটফোর্ডে তৈরি নকল ঔষধে সয়লাভ সারাদেশ


বিজ্ঞাপন

আজকের দেশ রিপোর্ট : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মানুষের জীবন রক্ষায় বহুল ব্যবহৃত মন্টিলুকাস্ট, ওমিপ্রাজল ও সেফিক্সিম গ্রুপের নকল ঔষধ তৈরি ও বিক্রয়ের অভিযোগে ৮জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো ফয়সাল মোবারক, নাসির, ওহিদুল, মামুন, রবিন, ইব্রাহিম, আবু নাঈম ও ফয়সাল।

ইতোপূর্বে ১২ আগস্ট বৃহস্পতিবার ঢাকা, সাভার ও পিরোজপুর এর নেছারাবাদ বিসিক শিল্প এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তদেরকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের কোতয়ালী জোনাল টিম।

এসময় তাদের হেফাজত হতে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ এর সেফ-৩ নামীয় নকল ঔষধ ১৬ বক্স যাতে ট্যাবলেটের পরিমাণ ২২৪ পিস ও সেকলো-২০ নামীয় নকল ঔষধ ১৬ বক্স যাতে ট্যাবলেটের পরিমাণ ১৯২০ পিস, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ এর মনটেয়ার ১০ নামীয় নকল ঔষধ ২২ বক্স যাতে ট্যাবলেটের পরিমাণ ৬৬০ পিস, জেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ এর ন্যাপ্রোক্সেন প্লাস নামীয় নকল ঔষধ ৮০০ বক্স যাতে ট্যাবলেটের পরিমাণ ২৪০০০ পিস, দি একমি ল্যাবরেটরিস লিঃ এর মোনাস ১০ নামীয় নকল ঔষধ ৪০ বক্স যাতে ট্যাবলেটের পরিমাণ ১২০০ পিস, নকল ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট, নকল ENO Anti-acidity Saline এবং ঔষুধ তৈরীর মেশিন ও বিপুল পরিমান ঔষুধ তৈরির ডায়াস জব্দ করা হয়।

সোমবার ১৬ আগস্ট দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপকালে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার)।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে আমাদের জনজীবন যখন বিপর্যস্ত তখন একটি অসাধু চক্র এ অতিমারীতে নকল ঔষধ বাজারজাত করছে। এ চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ।

ঢাকা, সাভার ও পিরোজপুর জেলায় ধারাবাহিক অভিযানে এ প্রতারক চক্রের ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, এ চক্রের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত ফয়সালের নামে সাভার ও ফিরোজপুরে দুটি কারখানা আছে। সে ভূয়া ড্রাগ লাইসেন্স নিয়ে লাইফ সেভিং এসকল নকল ঔষধ তৈরি করে।

ফয়সাল মূলত আতিয়ার নামক এক কেমিষ্ট এর কাছ থেকে বাজারে ব্যাপক প্রচলিত নামীদামি ব্র্যান্ডের ঔষধ এর Formula ও Composition নিয়ে মিটফোর্ডের কেমিক্যাল ব্যবসায়ী মুহিব এর কাছ থেকে কেমিক্যাল সংগ্রহ করে তার কারখানায় এসব ঔষুধ তৈরি করতো। এসকল নকল ঔষধ তৈরি করার পর মিটফোর্ডের কয়েকটি গ্রুপ এসকল নকল ঔষধ বাজারজাত করতো।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত নাঈম এসব নকল ঔষধের জন্য সব প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল তৈরি করে দিতো।

গ্রেফতারকৃত ফয়সাল, নাসির, ওহিদুল, মামুন, রবিন, ইব্রাহিম, আবু নাঈম, ফয়সাল ও তাদের সহযোগীরা তৈরিকৃত এসকল নকল ঔষধ বাজার মূল্যের ছেয়ে নামমাত্র মূল্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় করতো।

গ্রেফতারকৃতরা ইউএসবি কুরিয়ার, এসএ পরিবহন, সুন্দরবন কুরিয়ারসহ বিভিন্ন কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে এসকল ঔষধ প্রেরণ করতো।

তিনি বলেন, এই সব সকল ঔষধ এর ইনগ্রিডিয়েন্টস এ মূলত এ্যাক্টিভ পার্টই থাকে না।

এছাড়া মেইজ স্টার্চ অত্যান্ত নিম্ন গ্রেডের ব্যবহৃত হয়। এমনকি স্টেরয়েড ও ডাই ব্যবহৃত হতে পারে।

নন ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রেডের এসব কেমিক্যাল সেবনের ফলে মানুষের কিডনি, লিভার, হৃদযন্ত্র এবং শ্বসনতন্ত্রে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

করোনাকালীন সময় মানুষ এসকল নকল ঔষধ গ্রহণের কারণে স্বাভাবিক অর্থে সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে তারা আরো মৃত্যুর দিকে ধাবিত হবে।

এধরণের কার্যক্রম হত্যাকান্ডের চেয়ে কোন অংশে কম নয় মর্মে জানান ডিবির এ কর্মকর্তা।

গ্রেফতারকৃতদেরকে কোতয়ালী থানায় রুজুকৃত মামলায় বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

গোয়েন্দা কোতয়ালী জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ সাইফুর রহমান আজাদ এর নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়।