মাদরাসার ব্যানারের আইসের কারবার

অপরাধ

ভাড়াটিয়া আলম ড্রাইভারের হাত ধরে মাদক কারবারে জসিম
সুহৃদ-জসিমের সূত্র ধরে আইসের রুট খুঁজছেন তদন্তকারীরা, মাদরাসার ব্যানারের অভ্যান্তরে আইসের কারবার


বিজ্ঞাপন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর ভাটারার জোয়ার সাহারা বাজারের তিন রাস্তার মোড় এলাকা। সেখানে ব্যস্ত রাস্তার পাশে এ/২৬ হোল্ডিংয়ে পাঁচতলা আবাসিক ভবন।

নিচে মুদি দোকান, রেস্টুরেন্ট। ভবনটির চার তলায় একটি মাদরাসাও রয়েছে। ভবনের গেটে বড় ব্যানার লেখা—‘দারুল৭ উলুম জামালুল কুরআন মাদরাসা।

ওই ভবনের পাশের ভবনটির গেটেও আরেকটি ব্যানার। সেখানে লেখা রয়েছে—‘তা’লীমুল কোরআন মাদরাসা’। দুই ভবনের গেট দিয়েই শিক্ষার্থীদের চলাচল চোখে পড়ে।

জানতে চাইলে একজন প্রতিবেশী জানান, দারুল উলুম জামালুল কুরআন মাদরাসার ভবনটির মালিক জসিম উদ্দিন (৫০)। ওই ভবনের ছাদে রয়েছে তাঁর নিজস্ব অফিস।

সেই অফিস থেকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২৬০ গ্রাম আইস ও ২০০ পিস ইয়াবাসহ জসিমকে গ্রেপ্তার করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারা।
গত বুধবার কয়েক ঘণ্টা ওই এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তা’লীমুল কোরআন মাদরাসা থেকে পৃথক হয়ে কয়েক মাস আগে দারুল উলুম জামালুল কুরআন মাদরাসা চালু করা হয় জসিমের ভবনে।

দেড় বছর আগে জসিম ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়ে ছয় মাস জেল খাটার পর জামিনে ছাড়া পান। জোয়ার সাহারায় সাততলা আরেকটি বাড়ি আছে তাঁর।

দুই বছর আগে হানিফ পরিবহনের বাসচালক ফারুক আলম ওরফে আলম ড্রাইভার ভাড়া থাকতেন জসিমের বাড়িতে।

তাঁর সঙ্গেই প্রথমে ইয়াবা ও পরে আইসের কারবারে জড়ান জসিম। আলম ড্রাইভার এখন কোথায় আছেন সে তথ্য জানা যায়নি।

গভীর রাত পর্যন্ত গুলশান, বনানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে দামি গাড়িতে মাদকের ক্রেতারা যেত জসিমের কাছে।

কক্সবাজার থেকে আইস ও ইয়াবা এনে রাজধানীতে বিক্রি করা বড় একটি সিন্ডিকেটের হোতা জসিম।

স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। আর মাদক কারবার আড়াল করতেই বাড়ির চতুর্থ তলা ভাড়া দেওয়া হয় মাদরাসাকে।

ডিএনসি’র একটি সূত্র জানায়, মোহাম্মদপুর থেকে আফিফ আফতাব খান ওরফে সুহৃদ সরকার নামের এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তারের পর হাউস পার্টিতে আইস কারবারের সূত্র পান তদন্তকারীরা।

গত ২০ আগস্ট বনানী, বারিধারা, ধানমণ্ডি, বনশ্রী ও খিলগাঁওয়ে অভিযান চালিয়ে ৫০০ গ্রাম আইস ও পাঁচ হাজার পিস ইয়াবাসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিএনসি। তাদের মধ্যে জুবায়েরসহ কয়েকজন ক্রেতা জসিমের কাছ থেকে আইস সংগ্রহ করত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসির সহকারী পরিচালক (ঢাকা-উত্তর) মেহেদী হাসান গণমাধ্যমে বলেন, ‘গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছি। তাদের রিমান্ডে পেলে তদন্তে অগ্রগতি হবে। এরই মধ্যে কয়েকজনের কাছ থেকে কিছু নাম পেয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

২৩ সেপ্টেম্বর গুলশান, কুড়িল ও রমনা এলাকা থেকে জাকারিয়া আহমেদ (৩২), তারেক আহম্মেদ (৫৫), সাদ্দাম হোসেন (৩১) ও শহিদুল ইসলাম খান (৪৮) নামে আরো চারজনকে গ্রেপ্তার করেন ডিএনসি কর্মকর্তারা। তাঁদের কাছে আরো ৩০০ গ্রাম আইস ও এক হাজার পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে।

ভাটারা থানার মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, এ/২৬ নম্বর পাঁচতলা ভবনের ছাদে জসিমের নিজস্ব অফিস আছে। সেখানে টেবিলের ড্রয়ার তল্লাশি করে ২৬০ গ্রাম আইস ও ২০০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়।

গত বুধবার সরেজমিনে জোয়ার সাহারা বাজার এলাকায় গেলে স্থানীয়রা জানায়, মৃত ছবির উদ্দিনের দুই ছেলের মধ্যে জসিম বড়। ছোট ভাই নাজিম উদ্দিন বাড়ির নিচতলায় রেস্টুরেন্ট চালান।

পাশেই ক-১৬৭ নম্বরে আরেকটি সাততলা বাড়ি আছে তাঁদের। পৈতৃক সূত্রে যথেষ্ট সম্পদের মালিক হলেও টাকার নেশায় মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন জসিম।

পরিচয় প্রকাশ না করে দুজন প্রতিবেশী জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে ইয়াবা কারবার করছেন জসিম। দেড় বছর আগে পুলিশ তাঁকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করেছিল। ছয় মাস জেল খেটে জামিনে ছাড়া পান।

দুই বছর আগে কক্সবাজার-ঢাকা রুটে চলাচলকারী হানিফ পরিবহনের চালক আলম তাঁদের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ওই ড্রাইভারের সঙ্গে মিলেই জসিম মাদক কারবার শুরু করেন।

জোয়ার সাহারা বাজারের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘জসিম সরকারি দল করে। বাড়ির মালিক। এ কারণে কেউ কিছু বলে না।

তার দেখাদেখি এলাকায় এখন আরো অনেকে ইয়াবা ও আইসের কারবার শুরু করেছে। জসিম বড় মাদক কারবারি।’

গত ৯ আগস্ট মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের একটি ভবন থেকে চার গ্রাম আইসসহ সুহৃদ সরকার ও তাঁর কথিত বোন বিমু বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করেন ডিএনসি কর্মকর্তারা।