নকশা অনুমোদন এখন অনলাইনে

রাজধানী

রাজউক


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকায় ভবন নির্মাণে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র, নকশা অনুমোদন সেবা পেতে বিড়ম্বনার শিকার হননি, এমন নাগরিকের সংখ্যা খুব বলা যায়। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী নকশা অনুমোদন ও ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের জন্য আবদেন করা লাগে। কিন্তু অনুমোদন কবে মিলবে তা কেউ জানে না। মাসের পর মাস এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ফাইল ঘোরে। কিছু ক্ষেত্রে ফাইলের হদিসও পাওয়া যায় না। আবার নানান অজুহাতে প্রতারণার শিকার হন নাগরিকেরা। এছাড়া এই সেবা ঘিরে সক্রিয় একটি দালালচক্র। এখন এই ভোগান্তি থেকে গ্রাহকদের মুক্তি দিতে উদ্যোগ নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তারা সেবা কার্যক্রম শতভাগ অনলাইন করতে চালিয়ে যাচ্ছে কার্যক্রম।
রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীতে ভবন নির্মাণে নকশা অনুমোদন ও ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র পেতে গ্রাহকদের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হয়। এই সেবা সহজ করতে ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প: রাজউক অংশ’ নামে একটি প্রকল্প নিয়েছে রাজউক। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এই প্রকল্প পরীক্ষামূলকভাবে গুলশান এলাকায় চালু হয়েছে। এখন আবেদনকারীরা ঘরে বসেই সেবা পাচ্ছেন। সফল হলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে রাজউকের আওতাধীন অন্য এলাকায় এই সেবা শুরু হবে।
রাজউকের এই অনলাইন সেবা ইতিবাচক। তবে অনলাইন সেবার বিষয়ে রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে হবে। অন্যথায় অনলাইন সেবা পেতেও নাগরিকদের ভোগান্তি পোহাতে হবে।
নাগরিকরা বলছেন, রাজউকের এই সেবা কার্যক্রমে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা জন্মাবে। তাই দক্ষ জনবলের অভাবে যেন এই সেবা বন্ধ না হয়, এটা রাজউককে নিশ্চিত করতে হবে।
রাজউকের উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ শাখা সূত্র জানায়, গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাজউকের সেবা সহজ করতে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প’র একটি ওয়েবসাইট উদ্বোধন ও ইলেকট্রনিক কনস্ট্রাকশন পারমিটিং সিস্টেম (ইসিপিএস) সেবার চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। চুক্তিতে রাজউকের চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের (আইএবি) সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শিবলু স্বাক্ষর করেন। এখন এ ইসিপিএস পরীক্ষামূলকভাবে (পাইলটিং) রাজউকের জোন-৩ এর সাবজোন-২ (গুলশান, মিরপুর, সাভার, টঙ্গী) ও জোন-৪ এর সাবজোট-২ গুলশান এলাকায় চালু হয়েছে। অনলাইনে রাজউকের এই সেবাটি পাওয়া যাবে ওয়েবসাইটে।
তবে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত কতজন এই সেবার আবেদন করেছেন বা সেবা পেয়েছেন তার তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে রাজউক।
গুলশান-১ নম্বরের ২৪ নম্বর রোডের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, রাজউকের এই অনলাইন সেবা ইতিবাচক। তবে অনলাইন সেবার বিষয়ে রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে হবে। অন্যথায় অনলাইন সেবা পেতেও নাগরিকদের ভোগান্তি পোহাতে হবে।
স্বল্পসময়ে সব নির্মাণ কাজের সুষ্ঠু সেবা নিশ্চিত করতে বিদেশি সংস্থার পরামর্শে এবং দক্ষ জনবল নিয়ে এই সিস্টেমের উন্নয়ন করা হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে জোন-৬ এর সাবজোন-২ এ এই সেবা চালু করা হবে। পরে সম্ভাব্য ত্রুটিগুলোর সমাধান পর্যায়ক্রমে সব জোন ও সাবজোনে এই সেবা বাস্তবায়ন করবে রাজউক।
রাজউকের পরিচালক (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) মো. মোবারক হোসেন বলেন, স্বল্পসময়ে সব নির্মাণ কাজের সুষ্ঠু সেবা নিশ্চিত করতে বিদেশি সংস্থার পরামর্শে এবং দক্ষ জনবল নিয়ে এই সিস্টেমের উন্নয়ন করা হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে জোন-৬ এর সাবজোন-২ এ এই সেবা চালু করা হবে। পরে সম্ভাব্য ত্রুটিগুলোর সমাধান পর্যায়ক্রমে সব জোন ও সাবজোনে এই সেবা বাস্তবায়ন করবে রাজউক। তখন ভবন নির্মাণে আবেদন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সলভেন্সি সার্টিফিকেট পাওয়া পর্যন্ত সব অনলাইনেই সম্পন্ন হবে। ঘরে বসেই এই সেবা নিতে পারবেন গ্রাহকেরা। এছাড়া বিভিন্ন সার্ভিস ফি নিজের সুবিধাজনক সময় ও স্থানে জমা দিতে পারবেন তারা। এর সঙ্গে ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমও যুক্ত করা হয়েছে।
রাজউক জানায়, এই প্রকল্পের সামগ্রিক উদ্দেশ্য হলো ঢাকা ও সিলেটে জরুরি ব্যবস্থায় কার্যকর সাড়া দেওয়ার লক্ষ্যে দেশের সরকারি সংস্থাগুলোর সক্ষমতা জোরদার করা। গৌণ উদ্দেশ্য হলো ঢাকা ও সিলেটে নতুন নির্মাণ কাজের মানোন্নয়ন, রাজউকের অধীনে আরবান অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইউনিট গঠন ও পরিচালনা করা এবং ডিজিটাল বৈদ্যুতিক নির্মাণ অনুমোদন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা।
এই লক্ষ্যে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত এবং স্থানীয়ভাবে পরিচালিত দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য পরিবেশ তৈরি ও সক্ষম করার চেষ্টায় নিয়োজিত।