এমআইএস একটি ডিজিটাল বাংলাদেশের রোল মডেল

জাতীয়

বিশেষ প্রতিবেদক : সীমিত সামর্থ্য ও সম্পদের অপ্রতুলতার মধ্যেও একটি মধ্যম আয়ের দেশ সমন্বিত ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে কয়েক কোটি মানুষকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দিচ্ছে।


বিজ্ঞাপন

দুই ডোজের ভ্যাকসিন নেওয়া শেষ হওয়া মাত্রই পেয়ে যাচ্ছেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনলাইন কিউআর কোডযুক্ত ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট।


বিজ্ঞাপন

শুধু তাই নয়, দেশ বিদেশের যেকোনো স্থান থেকে সার্টিফিকেট স্ক্যান করলেই তাৎক্ষণিক ভাবে পাওয়া যাচ্ছে কবে, কোথায়, কোন ভ্যাকসিন পেয়েছেন।

ল্যাব এ গিয়ে কোভিড-১৯ পরীক্ষার পর রিপোর্ট যেকোনো স্থান থেকেই ডাউনলোড করা যাচ্ছে অনলাইনেই।

এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পাবলিক ড্যাশবোর্ড থেকে যেকোনো চাইলেই জানতে পারবেন এই মূহুর্তে কোন হাসপাতালে কতটি আইসিইউতে বেড খালি আছে, কতটি কোভিড শয্যা খালি আছে বা কতটি সাধারণ শয্যা আছে।

স্বাস্থ্যখাতে এই যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন তা সম্ভব হয়েছে তথ্য তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে স্বাস্থ্যবিভাগের প্রচেষ্টার কারনে।

স্বাস্থ্যে সফল ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রয়োগের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালে জাতিসংঘের ‘ডিজিটাল হেলথ ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট’ পুরস্কার অর্জন করেন।

স্বাস্থ্য খাতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের কাজটি করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে বিভাগ সেটি ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস)।
এমআইএসের লক্ষ্য স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থা, ই–হেলথ ও মেডিকেল বায়োটেকনোলজির উন্নতি করা। এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মকৌশল আছে এমআইএসের।

এমআইএসের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার একটি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি আছে। আমরা সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ করছি।

কাজ করার সময় প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ থেকে প্রভূত সহায়তা পেয়েছি।

আইটি বিশেষজ্ঞদের একটি দল আমরা তৈরি করতে পেরেছি। বর্তমান সাফল্য ধরে রাখার পাশাপাশি আমরা হাসপাতাল অটোমেশনের দিকে যাচ্ছি।’

বিশ্বের খুব কম দেশই আছে, যারা ই–হেলথ এবং স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থা (হেলথ ইনফরমেশন সিস্টেম) বাংলাদেশের মতো এগিয়ে নিতে পেরেছে।

২০১৫ সালে ১৬২৬৩ নাম্বারে স্বাস্থ্য বাতায়ন নামে ২৪/৭ কল সেন্টার চালু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ বছর ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ১ কোটি ৮৬ লাখ ৫৮ হাজার ১৭৯ জন স্বাস্থ্য বাতায়নে ফোন করে সেবা নিয়েছেন।

স্বাস্থ্য বাতায়নের মতো কল সেন্টার কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আরো ভালোভাবে বুঝা গেছে করোনার সময়ে।

হাসপাতাল, ক্লিনিক বা চিকিৎসকের কাছে যেতে না পারা মানুষ স্বাস্থ্য বাতায়নে ফোন করে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ নিয়েছেন।

দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত কল এসেছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৫৫ হাজার ২৭৭টি।

করোনাকালে স্বাস্থ্য বাতায়ন ডিজিটাল হাসপাতাল হিসেবে কাজ করেছে। স্বাভাবিক সময়ে স্বাস্থ্য বাতায়নে ২৪ ঘণ্টায় কল আসে ৫ থেকে ১০ হাজার। কোভিড-১৯ মহামারিকালে কল এসেছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার।

এই বিপুলসংখ্যক কলের জবাব দেওয়ার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক চিকিৎসক সেখানে যুক্ত করতে হয়েছে।

বর্তমানে টেলিমেডিসিন সেবা চালু আছে প্রায় ১০০ হাসপাতালে। এর মাধ্যমে উপজেলা হাসপাতালে থাকা রোগী ঢাকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ পান।

স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া ছাড়াও স্বাস্থ্য খাত ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জাতীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল থেকে শুরু করে চালু ১৩ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিকে একটি করে কম্পিউটার এবং ২৪ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে ট্যাবলেটসহ ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

এর মাধ্যমে মাঠ থেকে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ ছাড়াও টেলিমেডিসিন সেবা, ভিডিও কনফারেন্স, স্বাস্থ্যশিক্ষা, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ নিয়মিত করা হয়।

এমআইএস বর্তমানে হেলথ সিস্টেম স্ট্রেনদেনিং নামে একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

এই কর্মসূচিতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিটি সেবা প্রতিষ্ঠানের মান, দক্ষতা ও কার্যকারিতা যাচাই করা হয়। তার ভিত্তিতে প্রতিবছর সেরা প্রতিষ্ঠানকে ‘হেলথ মিনিস্টারস’ পুরস্কার দেওয়া হয়।

বিশ্বের ৬৩টি দেশের স্বাস্থ্য খাতে ডিএইচআইএস–২ নামে একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়।

এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের ইলেকট্রনিক তথ্য, স্বাস্থ্য জনবল, হাসপাতাল অটোমেশন, জনস্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহের একটি নেটওয়ার্ক চালু করেছে এমআইএস।

দেশগুলোর মধ্যে সফটওয়্যারটি সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে বাংলাদেশ।

ডিএইচআইএস–২ ব্যবহারকারী সর্ববৃহৎ দেশ হওয়ায় জার্মান সরকার ২০১৪ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগকে ‘বেস্ট প্র্যাকটিস অ্যাওয়ার্ড’ দেয় এবং আ কোয়াইট রেভল্যুশন ইন হেলথ ইনফরমেশন সিস্টেম ইন বাংলাদেশ নামের একটি বইও প্রকাশ করে।