অভয়নগরের এরশাদ এতিমখানায় বাবা-মা হারা পথ শিশুরা থাকবে অট্টালিকায়

সারাদেশ

সুমন হোসেন : শামীম (১১), হালিম গাজী (১২), আলিম (১০), নাহিদ (১২), নাসিম (১৫)। ওরা চল্লিশজন। কারও বাবা নইে, কারও মা নইে, কেউ বাবা-মা দু’জনকেই হারিয়েছে। কেউ আবার বাবাকে কোনদিন দেখেইনি। রয়েছে ৪/৫ বছরের শশিুও। তারাও পতিৃ-মাতৃহারা। এসব ছিন্নমূল শিশুদের পথে পথে ঠোঁকর খেয়ে মাদকসেবি, টোকাই বা কিশোর বাহিনীতে নাম লেখানোর কথা ছিলো। কন্তিু, না। বিপথে যায়নি শামীম, হালিমরাা। ওরা ঠাঁই পেয়েছে যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার এরশাদ এতিমখানায়। এখানে ওরা পেট ভরে খেতে পাচ্ছে। পাচ্ছে লেখা পড়ার সুবিধা। বিকাল হলেই ছুটে যাচ্ছে খেলার মাঠে। পাচ্ছে অপার ভালোবাসা। তাছাড়া এরা চল্লিশজন যেন জোড়ের ভাই। একে অন্যের সুবিধা-অসুবিধায় পাশে ছুঁটে যাচ্ছে। কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে সকলে মিলে সেবা দিচ্ছে। জলপট্টি দিচ্ছে। অসুস্থ্য হলে ডাক্তারের কাছে নিচ্ছে। সরকারি হাসপাতালেও পাচ্ছে সেবা। সবার ভিতরেই রয়েছে বিনয়, ভদ্রতা ও ন¤্রতার এক অর্পূব চারিত্রিক নির্দশণ। রয়েছে সৃজনশীলতা। বাইরের কাউকে কাছে পেলে খুব সহজেই আপন করে নেয়ার এক চমৎকার দক্ষতাও দেখা গেছে তাদের মধ্যে। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে এতিমখানার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সভাপতি ওই এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও সাদা মনের মানুষ খ্যাত সৈয়দ মাহাবুবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোল্যা সাঈদ আলম বাচ্চুসহ কছিু হৃদয়বান মানুষের ভালোবাসা, উদারতা ও সমাজের প্রতি কর্তব্যবোধের কারনে।
যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার ১ নং প্রেমবাগ ইউনিয়ন। যশোর-খুলনা মহাসড়কের গা-ঘেষে এ ইউনিয়নের প্রেমবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর বিদ্যালয়টির প্রাচীর ছুঁয়ে বাহিরঘাট গ্রাম অভিমুখে যাওয়া সড়কটি ধরে একটু সামনে গেলেই রাস্তার পাশের্^ একটি জীর্ণ সাইনবোর্ড। ‘এরশাদ এতিমখানা’। সরু সড়কে নেমে কয়েক গজ যেতেই দুইটি পুরাতন রংচটা পাকা ঘর। উপরে টিনের চালা। প্রায় ৩০ বছর আগে ওই এলাকার কতীপয় দানবীর ব্যক্তি ৩ একর জমির উপর শুরু করেন এ এতিমখানা। ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকার এতিমখানাটিকে নিবন্ধনভুক্ত করেন। দীর্ঘ ২৬ বছর সরকারি সামন্যতম সহযোগিতা ও স্থানীয়দের সহযোগিতার উপর এখানে এতিমরা বেড়ে উঠছে। শিখছে লেখাপড়া। রয়েছে ধর্মীয় অনুশাসন ও সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন। এখানে স্থানীয় অনেকের অবদান রয়েছে। আবার কারও কারও বিরুদ্ধে বিতর্কও রয়েছে। তবে সম্প্রতি কতিপয় সৎ ও সাদা মনের মানুষের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির নেতৃত্বে¡ এতিমখানার শ্রীবৃদ্ধসিহ এতিমদের সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এতিম শিশুদের চোখে নতুন স্বপ্ন বুনতে কাজ শুরু করেছেন তারা। প্রাথমিকভাবে বাবা-মা হারা এসকল ছিন্নমূল শিশুদরে জন্য এখানে চারতলা বিশিষ্ঠ সুরম্য ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে যা বস্তবায়নে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন এতিমখানা র্কতৃপক্ষ। পরিকল্পনা অনুযায়ী চুড়ান্ত হয়েছে ভবনের নকশা। সম্পন্ন হয়েছে সয়েল টেস্ট। দ্রুতই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন এতিমখানার সভাপতি সৈয়দ মাহাবুবুর রহমান। এছাড়া এসকল শিশুদের শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন ঘটাতেও পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তারা। সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে ছিন্নমূল এসকল শিশুদের সমাজে প্রতিষ্ঠার লক্ষ নিয়ে এক নতুন স্বপ্নের যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
আর এ স্বপ্নের পেছনে রয়েছেন এক অদৃশ্য কারিগর। যিনি স্বপ্ন দেখিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির ভাই অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ গ্রামের গর্বিত সন্তান আমেরিকা প্রবাসী ও আমেরিকার হাওয়াই বিশ^বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শক্ষিক প্রফেসর ড. মুজিবর রহমান শাওন। চারতলা বশিষ্ঠ সুরম্য অট্টালিকা নির্মাণের পরিকল্পনা তার মাথা থেকেই এসেছে। প্রস্তাবিত ভবনের নকশাও তিনিই করিয়েছেন। করিয়েছেন মাটি পরীক্ষা। এবং কাজটিও তিনি শুরু করার সাহস যুগিয়েছেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে তিনি ভবন নির্মাণের কর্মযজ্ঞ শুরুর প্রস্ততুতি নিতে কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দিচ্ছেন। অর্থনৈতিকভাবে বড় ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে তিনি এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হাটতে শুরু করিয়েছেন। যদিও স্থানীয় সচেতন মহল বিষয়টি নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। একজন মানুষের পক্ষে এতবড় ভবনের কাজ সম্পন্ন করা অনেকটাই দুঃসাধ্য। তাই তারা দাবি করেছেন প্রফেসর ড. মুজিবর রহমান শাওনের পাশে যদি অভয়নগরের শিল্প শহর নওয়াপাড়ার দু’চারজন শিল্পপতি ও আমদানিকারকরা এগিয়ে আসতেন সেই সাথে স্থানীয় হৃদয়বানরা যদি পাশে এসে দাড়াতেন তাহলে খুব দ্রুতই এ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভ করতো। স্থানীয় সচেতন মহল এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি সৈয়দ মাহাবুবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোল্যা সাঈদ আলম বাচ্চু ছোট্ট এসব ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে আরও কিছু ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা এ প্রতিবেদকের কাছে জানিয়েছেন। পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে চারতলা ভবনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলে এখানে একশ’ জন এতিম শিশুকে থাকা, খাওয়াসহ লেখাপড়া শেখার সুযোগ করে দিবেন। পাশাপাশি মেধার দৌড়ে যারা এগিয়ে থাকবে তাদেরকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী পর্যন্ত লেখাপড়া শেখানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির এ দুই কর্মকর্তা জানান, মেধার দৌড়ে পিছিয়ে পড়াদের আলাদা করে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করার মধ্য দিয়ে তাদেরকে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থাও করার পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে। আর এ সকল পরিকল্পনার পেছনে অদৃশ্য শক্তি হিসেবে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন আমেরিকা প্রবাসী স্বনামধন্য শিক্ষক প্রফেসর ড. মুজিবর রহমান শাওন।


বিজ্ঞাপন