লাল কার্ড দেখালেন শিক্ষার্থীরা

জাতীয়

সড়কে অব্যবস্থাপনা

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : শিক্ষার্থীদের হাফপাস কার্যকর, নিরাপদ সড়ক, সড়কের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লাল কার্ড হাতে নিয়ে আবারও আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুর থেকে রামপুরা ব্রিজের হাতিরঝিল থানা অংশে লাল কার্ড হাতে অবস্থান নেন খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ না হলেও প্রগতি সরণির এক পাশে যান চলাচল কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
আন্দোলন প্রসঙ্গে শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ও রাস্তায় যে লুটপাট ও দুর্নীতি হয়েছে এর বিরুদ্ধে আমরা আজ রাষ্ট্রকে লাল কার্ড দেখাচ্ছি। ফুটবল খেলায় যেমন কোনো খেলোয়াড় ফাউল করলে রেফারি লাল কার্ড দেখায়, তেমনি আমরা আজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে রেফারির ভূমিকায় নেমেছি। বাংলার মাটিতে দেশের ছাত্র সমাজ কখনো দুর্নীতি মেনে নেবে না। তাই আমরা সড়কের সঙ্গে যত লুটপাট ও দুর্নীতি যুক্ত তার বিরুদ্ধে লাল কার্ড দেখাচ্ছি।
গুজব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে নানা গুজব রটানো হচ্ছে। আমি নাকি শিক্ষার্থী নই, আমার বয়স নাকি ৩০বছর, আমি নাকি আন্দোলনের উসকানি দিচ্ছি। এসব মিথ্যা কথা। আমি এবার খিলগাঁও মডেল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা প্রসঙ্গে সোহাগী বলেন, হ্যাঁ আমার ব্যক্তিগত মতাদর্শ থাকতে পারে, সেটার সঙ্গে এ আন্দোলন সংশ্লিষ্ট নয়। আমি আন্দোলনে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দিইনি। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন করছি। আমি সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা মহানগরের দপ্তর সম্পাদক- এ কথা সত্যি।
এর আগে শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নিরাপদ সড়ক দাবিতে রামপুরা ব্রিজের ওপর আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা কর্মসূচিতে তাদের দাবির পক্ষে বিভিন্ন শ্লোগান দেন।
গত বুধবার রামপুরা ব্রিজের আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা।
দাবিগুলো হলো হচ্ছে…
সড়কে নির্মম কাঠামোগত হত্যার শিকার নাঈম ও মাঈনউদ্দিনের হত্যার বিচার করতে হবে। তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গুলিস্তান ও রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পথচারী পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।
সারাদেশে সকল গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস (অর্ধেক ভাড়া) সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। হাফ পাসের জন্য কোনো সময় বা দিন নির্ধারণ করে দেওয়া যাবে না। বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহার করতে হবে। সকল রুটে বিআরটিসির বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
গণপরিবহনে ছাত্রছাত্রী এবং নারীদের অবাধ যাত্রা ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন চালককে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিআরটিএর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
সকল রাস্তায় ট্রাফিক লাইট, জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করাসহ জনবহুল রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাসগুলোর মধ্যে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা বন্ধে এক রুটে এক বাস এবং দৈনিক আয় সকল পরিবহন মালিকের মধ্যে তাদের অংশ অনুযায়ী সমানভাবে বণ্টন করার নিয়ম চালু করতে হবে।
শ্রমিকদের নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। চুক্তির ভিত্তিতে বাস দেওয়ার বদলে টিকিট ও কাউন্টারের ভিত্তিতে গোটা পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।
গাড়ি চালকের কর্মঘণ্টা একনাগাড়ে ৬ ঘণ্টার বেশি হওয়া যাবে না। প্রতিটি বাসে ২ জন চালক ও ২ জন সহকারী রাখতে হবে। পর্যাপ্ত বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে। পরিবহন শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংস্কার করতে হবে এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
ট্রাক, ময়লার গাড়িসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সময় নির্ধারিত করে দিতে হবে।
মাদকাসক্তি নিরসনে গোটা সমাজ জুড়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। চালক-সহকারীদের জন্য নিয়মিত ডোপ টেস্টের ও কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে বাস ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। তারপরও নির্ধারিত মূল্যর চেয়ে অতিরিক্ত বাস ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই। এখনও বন্ধ হয়নি সিটিং সার্ভিস, গেটলক ও ওয়েবিল।
ভাড়া বৃদ্ধির পর বিভিন্ন রুটে হাফ পাস বা অর্ধেক ভাড়া দেয়া নিয়ে বাসের সহযোগী ও চালকদের সঙ্গে বাগবিত-া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিরাপদ সড়কের দাবি নিয়ে আন্দোলন চললেও সড়কে প্রতিনিয়ত ঝরছে প্রাণ। চলমান আন্দোলনের মধ্যে নটরডেম শিক্ষার্থী নাঈম হাসান গাড়িচাপায় নিহত হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়।
সর্শেষ দুই বাসের প্রতিযোগিতায় ২৯ নভেম্বর রাত পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর রামপুরা এলাকায় গ্রিন অনাবিল পরিবহনের বাসের চাপায় মাইনুদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়। এনিয়ে গত ২৪ নভেম্বর থেকে রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও তীব্র হয়। এর ফলে সড়কে বিপাকে পড়ছেন যাত্রীসহ শ্রমিকরাও।


বিজ্ঞাপন