একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক পল্লীবন্ধু হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ

উপ-সম্পাদকীয়/মতামত

মো. নাসির উদ্দিন শিকদার : বাংলাদেশের এদেশের আপামর জনসাধারণ তথা সকলের মনে ভালোবাসার জাল বুনতে পেরেছিল এমন ব্যক্তির নাম পল্লী বন্ধু হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। ইতিহাসে যে এক সাথে গৌরবোজ্জ্বল ও হাস্যোজ্জ্বল এক জ্বল জ্বলে উজ্জ্বল তারকা। যার প্রতি অজপাড়া গাঁয়ের হতদরিদ্র পরিবার থেকে শুরু করে বিত্তবান পরিবারের সবারই ছিল অকৃত্রিম ভালবাসা। যার উন্নয়নের স্পর্শ এখনও বাংলার মানুষ অনুভব করে। বাংলাদেশ বিনির্মাণে যার অবদান কখনও ভুলবার নয়।তিনিই হলেন ১৯৩০ সালের ২০ মার্চ কুড়িগ্রাম শহরে “লাল দালান” বাড়ি খ্যাত নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করা “পেয়ারা” নামে একটি শিশু। আর দশটা শিশুর মতই বেড়ে ওঠেন এই “পেয়ারা”।
কে জানতো যে এই শিশুটিই বড় হয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের ইতিহাস রচনা করবে!
শিশু “পেয়ারা ” বড় হয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নামে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব পালন করেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনা করেন ৯ বছর। রাষ্ট্র ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পরও এই মানুষটার প্রতি মানুষের মানুষের আবেগ ও ভালবাসার এতটুকুও কমতি ছিলনা। তাইতো জাতীয় নির্বাচনে একাধিকবার অংশগ্রহণ করার পরও কোনো নির্বাচনে তাঁকে পরাজয়ের কালিমা স্পর্শ করতে পারেনি।
পরপর দুইবার ১৯৯৯ ও ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে কারাগার থেকে অংশ নিয়েও ৫ টি করে আসনে জয়ী হয়েছেন যা বিশ্ব রেকর্ড করে। রাজনীতিতে সৌহার্দ, সম্প্রীতি আর ভালবাসার এক অনবদ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন পল্লীবন্ধু।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচজন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকেও বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করতে যাননি।
কিন্তু ১৯৮৪ সালে ৪ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর মাজারে ফাতেহা পাঠ করে মোনাজাত করেন। সেদিন তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি।
অমায়িক আচরণের পাশাপাশি রাজনৈতিক শিষ্টাচারেরও এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তিনি। হরতাল নামের দেশবিরোধী কর্মকান্ডকে মনে প্রাণে ঘৃণা করতেন পল্লীবন্ধু।তাইতো দীর্ঘ ৬ বছর জেলে থেকেও তাঁর মুক্তি আন্দোলনে তাঁর অনুসারীদের একদিনও হরতাল পালনের নির্দেশ দেননি।একজন সচ্চ,শালীন ও সজ্জন রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি পরিচিত। তিনি কখনও অশালীন ভাষায় বক্তব্য, লজ্জাজনক অঙ্গভঙ্গি ও কাউকে কথার মাধ্যমে উদ্দেশ্যমুলকভাবে আক্রমন করতেন না।প্রতিপক্ষের কঠিন আক্রমণের মুখেও তাঁর ভাষা ছিল সংযত ও স্বাভাবিক।
বাংলাদেশের মানুষকে অকৃত্রিম ভালবাসার বাঁধনে বেঁধেছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।


বিজ্ঞাপন

৯ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকেও দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের নামে কোন হল স্থাপন না করে
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে দুটি হল স্থাপন করনে।
একেই বলে রাজনৈতিক উদারতা। ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম করেন। শুক্রবার গরীবের হজ্জকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করেন। তিনি ইসলামের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের মানুষের ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা দেন।
১৯৫০ সালে বন্ধ হওয়া জন্মাষ্টমী আনন্দ শোভাযাত্রা তৎকালীন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর সময়কালে ১৯৮৯ সালে চালু হয়।

১৯৮৬ বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপির প্রতিষ্ঠান ছিল তার নেওয়া এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তিনি আশ্রয়হীন ও দুস্থ শিশুদের জন্য “পথকলি ট্রাস্ট” গঠন করেন। এই ট্রাস্টে দুস্থ শিশুদের দেখভালসহ পড়াশোনার সকল খরচ বহন করা হয়।

প্রশাসনিক দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালনের জন্য ৪৬০ উপজেলা পরিষদ গঠন করে।
৪২ টি মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করেন পল্লীবন্ধু। এতে ১৯ থেকে জেলার সংখা দাঁড়ায় ৬৪ টিতে। সার্বজনীন বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনও ছিল তার একটি অন্যতম উদ্যোগ।
তিনি ১৯ টি কলেজকে জাতীয়করণ করেন। ৯ টি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করেন। তিনি ইসলামি বিশ্ব বিদ্যালয় স্থাপন।

১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ সালে সারা দেশে ৪৬৮ টি “গুচ্ছগ্রাম” স্থাপন করে ২১০০ ছিন্নমূল,ভূমিহীন পরিবারকে পুর্নবাসিত করে।
২০১৯ সালের ২৪ জুলাই বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবেই পুরো দেশকে শোকের
সাগরে ভাসিয়ে পরলোকগমন করেন এই মহাান নেতা।
এভাবেই শেষ হয় এক কিংবদন্তির গৌরবোজ্জ্বল জীবন। এই বাস্তব জীবনের মহানায়ক গুলি মরেও যেন মরেনা।তিনি রেখেছেন অফুরন্ত অবিনাশী সব কীর্তি।

এই মহান বীরের বীরত্বগাথাঁ তিন-চার পাতায় লিখে শেষ করা যাবেনা। ওপারে ভালো থাক আমাদের প্রিয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এটাই প্রত্যাশা।