যশোর গদখালিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ২ কোটি টাকার ফুল বিক্রি

অন্যান্য এইমাত্র

সুমন হোসেন, যশোর থেকে ঃ
যশোরের গদখালিতে ১৪ ফেব্রæয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ২ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করা হয়েছে। বসন্ত উৎসব ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গদখালির ফুল চাষীরা আনুমানিক ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন

তারই ধারাবাহিকতাই বসন্ত উৎসব ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে শুধুমাত্র গদখালি ফুল বাজার এবং পানিসরা হাড়িয়ার ফুল মোড়ে ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির কাঁচা ফুল বিক্রি হয়েছে।

গদখালির বাজারে ও পানিসরা হাড়িয়ার ফুল মোড়ে সরেজমিনে দেখা যায়, গোলাপ ও রজনীগন্ধার তোড়া ১০০-১৫০ টাকা এবং বিভিন্ন ফুল দিয়ে ব্যান্ড তৈরী করে ৫০-১০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

চায়না গোলাপ ১০০ টাকা, সাধারন গোলাপ ৩০ টাকা, জারবেরা ১৫ টাকা, রজনীগন্ধা ১০-১২ টাকা, গøাডিওলাস ২০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ৩ টাকা, গাদা ফুল (প্রতি হাজার) ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফুল চাষিদের বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন অনেক ফুলচাষি।

তবে স্কুল-কলেজ খোলার পর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছিলেন গদখালির ফুল চাষিরা। চলতি সপ্তাহে বাজারে ফুলের দাম পেয়ে আশায় বুক বেঁধেছিলেন তারা। কিন্তু হঠাৎ করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েন চাষিরা।

বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসে ভালো দামে ফুল বিক্রি করতে পেরে চাষিরা অনেক খুশি হয়েছেন। তারা আশা করছেন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আনুমানিক ১০ কোটি টাকার ফুল বাজারে বিক্রি করা হবে বলে।

এদিকে বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস যাওয়ার পরই রয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসে মানুষের প্রিয় জনদেরকে কাঁচা ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে অনেকটা উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসা সাধারন মানুষ।

আন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে গোটা জাতি নিবেদন করবেন পুষ্পর্ঘ্য। এসব ফুলের চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভুমিকা রাখেন গদখালির ফুল। তবে মাঝে কয়েকদিন বৃষ্টির কারনেও গোলাপ উৎপাদনে কিছুটা ছন্দ পতন হয়েছে বলে জানান ফুল চাষিরা। বেশ কিছু ফুলের ক্ষতিও হয়েছে। অপরদিকে বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় গোলাপের দামও বেড়েছে কয়েক গুন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গদখালির বাগানে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকার ফুল রয়েছে। স্কুল-কলেজ খোলা থাকলে ফুল বিক্রি বেশি হয়। স্কুল-কলেজ খুললে, সবগুলো দিবসে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা গেলে করনা কালের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছিলেন চাষিরা।

এদিকে গদখালির ফুল বাজারে এক সপ্তাহ পূর্বে দেখা গেছে, গোলাপ ৬-৭ টাকা, জারবেরা ৬-৭ টাকা, রজনীগন্ধা ৫ টাকা, গøাডিওলাস ৬-৮ টাকা, জিপসি (প্রতি আটি ২৫ টাকা), চন্দ্রমল্লিকা ২ টাকা এবং প্রতি হাজার গাদা ফুল ৪৫০-৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

গদখালির এক চাষি জানান, হাটে ২০০ পিস গøাডিওলাস এনেছিলাম। সিঁদুর, হলুদ আর খয়েরী হলুদ রঙের। রঙভেদে ১৮ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। গত সপ্তাহে কিছু এনেছিলাম তখন দাম কম পেয়েছিলাম।

ফুলচাষি মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ করেছি। এ বছর টার্গেট ছিলো ২ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করার,কিন্তু এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। বাকি ফুল বাগানে মজুদ আছে।

নিমতলা এলাকার বিল্লাল হোসেন জানান, গত বছর করনার কারণে ১৪ টাকার ফুল ৪ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। অনেক ফুল কেটে গরু-ছাগল দিয়ে খাওয়াতে হয়েছে।

গত সপ্তাহে একই রকম অবস্থা ছিলো। তবে এই সপ্তাহে একটু ভালো দাম পওয়া যাচ্ছে। সরকার যদি স্কুল-কলেজ খুলে দেয়, তাহলে ফুলের দাম পাওয়া যাবে বলে মনে করেন ফুল চাষিরা। কেননা আমাদের এই ফুলের ক্রেতা সাধারনত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাই বেশি।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি ও পানিসরাসহ ছয়টি ইউনিয়নে প্রায় ৬২৫ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করেন প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কৃষক।

এর মধ্যে ২৭২ হেক্টর জামিতে গøাডিওলাস, ১৬৫ হেক্টর জমিতে রজনীগন্ধা, ১০৫ হেক্টর জমিতে গোলাপ, ৫৫ হেক্টরে গাদা, ২২ গেক্টরে জারবেরা আর ৬ হেক্টর জমিতে রথস্টিক চাষ হচ্ছে। এসব জমিতে প্রায় ৯৮ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। উৎপাদিত ফুল বিক্রি হবে প্রায় ২৯ কোটি টাকার।