নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ ১৭ ফেব্রুয়ারি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ সাফিনুল ইসলাম, বিজিবিএম (বার), এনডিসি, পিএসসি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ সময় বিজিবি’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় অসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বিজিবি’র ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ (বিজিটিসিএন্ডসি)-এর বীর উত্তম মুজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে সকাল ৯ টা ৪৫ মিনিটে নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিজিবি মহাপরিচালকসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত হলে বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ (বিজিটিসিএন্ডসি)-এর কমান্ড্যান্ট তাঁদেরকে অভ্যর্থনা জানান। সকাল ১০ টা ২০ মিনিটে বিজিবি মহাপরিচালককে সশস্ত্র সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের প্যারেড কমান্ডার হিসেবে মনোজ্ঞ এ প্যারেড পরিচালনা করেন ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের অফিসার ইনচার্জ মেজর মোঃ সেলিমুদ্দোজা এবং প্যারেড এ্যাডজুটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। উল্লেখ্য, ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে শুরু হয়। বিজিটিসিএন্ডসিতে প্রশিক্ষণ নেয়া মোট ৬৭০ জন রিক্রুট এর মধ্যে ৬২১ জন পুরুষ এবং ৪৯ জন নারী রিক্রুট প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও একই দিনে ও একই সময়ে চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়ন (৬বিজিবি)-এর প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের ২১৫ নবীন সৈনিকের মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে বর্ণিত দুইটি ভেন্যুতে সর্বমোট ৮৮৫ জন নবীন সৈনিক আজ আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা করলো। এবারের প্রশিক্ষণে বিজিটিসিএন্ডসিতে ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে ১ম স্থান অধিকার করে বক্ষ নম্বর-৪৪২ রিক্রুট (জিডি) নুরুল হুদা মামুন এবং চুয়াডাঙ্গায় ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে ১ম স্থান অধিকার করে বক্ষ নম্বর-১১৮৩ রিক্রুট (জিডি) মো: জুবায়ের আলী। ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ শেষে বিজিবি মহাপরিচালক নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উপদেশ ও দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করেন। ভাষণের শুরুতে তিনি স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একইসাথে তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎর্গকারী বিজিবি’র ৮১৭ জন অকুতোভয় বীর বিশেষ করে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ ও শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নুর মোহাম্মদ শেখসহ মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য এ বাহিনীর ৮ জন বীরউত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম এবং ৭৭ জন বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত বীরদেরও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, কিংবদন্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই বাহিনী সুনাম ও সাফল্যের পথ পরিক্রমায় সকলের প্রচেষ্টায় বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মর্যাদা লাভ করেছে। বিজিবি আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার দেশপ্রেমিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে দেশের ৪,৪২৭ কি:মি: দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা, সীমান্ত ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, সীমান্তে চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচার রোধসহ সব ধরণের সীমান্ত অপরাধ দমনসহ দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সফলতার সাথে পালন করে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। এছাড়াও দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃংখলা রক্ষায় অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান, যেকোন দুর্যোগময় মুহুর্তে জনগণের পাশে দাঁড়ানো এবং বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিজিবি বিশ্বস্ততা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে সেবা ও কর্তব্য পরায়ণতার মাধ্যমে সমগ্র জাতির শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, “প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে শৃঙ্খলাই সৈনিকের মূলভিত্তি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সে-ই প্রকৃত সৈনিক। সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠা, আনুগত্য ও নির্ভরযোগ্যতা, বুদ্ধিমত্তা ও কর্মতৎপরতা, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি। নবীন সৈনিকরা এসব গুণাবলির প্রতিফলন ঘটিয়ে বাহিনীর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবে বলে তিনি আশা করেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর চারটি মূলনীতি-‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’-এ উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে বিজিবি’র উপর অর্পিত যেকোন দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ও সুচারুরূপে পালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।বিজিবি মহাপরিচালক ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বিডিআর-এর ৩য় ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের চোরাচালান বিরোধী ও প্রেষণামূলক মূল্যবান বক্তব্যের কথা স্মরণ করে চোরাচালান রোধে নবীন সৈনিকদেরকে পেশাগত দক্ষতা অর্জনসহ ব্যক্তিগতভাবে সুদৃঢ়, সুশৃঙ্খল, নির্লোভ ও নির্ভীক সর্বোপরি উন্নত চরিত্রের অধিকারী হওয়ার উপদেশ দেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নারী সৈনিকদের আত্মত্যাগের বিষয় টা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।