ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বাসাবাড়িতে ডাকাতি মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করল পিবিআই, গাজীপুর

অন্যান্য অপরাধ এইমাত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ গাজীপুরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বাসাবাড়িতে ডাকাতি মামলার রহস্য উদঘাটন সহ আসামি গ্রেফতার করলো পিবিআই গাজীপুর। জানা গেছে, পিবিআই গাজীপুরের একটি টিম দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত করে উক্ত মামলার রহস্য উদঘাটন করলো। মোঃ রুবেল মিয়া (২৫), পিতা-মোঃ আব্দুল হাই, মাতা-মোসাঃ হেলেনা বেগম, সাং-রাম গোপালপুর (উরাকোনা), থানা-গৌরিপুর, জেলা-ময়মনসিংহ এ/পি. সাং-চারাবাগ, কুমকুমারী বাজার মিন্নত আলী মেম্বার এর বাড়ীর ভাড়াটিয়া, থানা-আশুলিয়া, জেলা-ঢাকাকে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে গত ১৪ মার্চ, ১ (এক) দিনের পুলিশ রিমান্ড প্রাপ্ত হয়ে।


বিজ্ঞাপন

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ ঃ মামলার বাদী মোঃ সফিকুল ইসলাম (৩৮), পিতা-হাজী মোঃ ওসমান গনি, সাং-সারদাগঞ্জ রাইসমিল, থানা-কাশিমপুর, জিএমপি, গাজীপুর, অভিযোগে উল্লেখ করেন যে, গত ১১/০৯/২০২১ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭ টার সময় বাদী, বাদীর মা, বাবা, ভাইয়ের বউ, ছোট ভাতিজা, ভাতিজী ও প্রতিবেশী চাচাতো বোন জরিনা বেগম কাশিমপুর থানাধীন সারদাগঞ্জ রাইসমিল সাকিনস্থ নিজ বসত বাড়ীতে অবস্থান করতে ছিল।

ঐ সময় অজ্ঞাতনামা ২ জন ব্যক্তি কথিত ডিবির জ্যাকেট সাদৃশ্য পোষাক পরিহিত অবস্থায় ওয়ারলেস ও পিস্তলসহ বাদীর শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে বাড়ীতে অবৈধ জিনিস আছে এবং বসত বাড়ী তল্লাশী করতে হবে মর্মে জানায়।

এর সাথে সাথেই আরো অজ্ঞাতনামা ৬ জন তাদের হাতে থাকা পিস্তল ও চাপাতিসহ বাদীর রুমে প্রবেশ করে তাদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করতঃ লুঙ্গি ও গামছা দ্বারা সকলের হাত, মুখ ও চোখ বেধে ফেলে।

বাদীর ভাতিজা সালমান (০৫) ও ভাতিজী বুশরা (০২) কান্না শুরু করলে অজ্ঞাতনামা ডাকাত তাদের কান্না থামানোর জন্য বাদীর ভাইয়ের বউ লাবনী আক্তার (২৫) এর হাত, মুখ ও চোখের বাঁধন খুলে দেয়।

ঐ সময় অজ্ঞাতনামা ডাকাতরা বাদীর বসত বাড়ীতে থাকা পাঞ্জাবির পকেট হতে এবং ওয়ারড্রবের তালা ভেঙ্গে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়।

যার সর্বমোট আনুমানিক মূল্য ৮,০৪,৫০০ টাকা। এ সংক্রান্তে কাশিমপুর থানার মামলা নং-১৩ তারিখ-১২/০৯/২০২১, ধারা-৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড রুজু হয়।

মামলাটি কাশিমপুর থানা পুলিশ প্রায় ২ মাস তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার পিবিআই গাজীপুর জেলার উপর অর্পন করা হয়।

অ্যাডিশনাল আইজিপি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার. বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এর সার্বিক সহযোগীতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) মোঃ সুমন মিয়া মামলাটি তদন্ত করেন।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী ও অপর একজন পলাতক সহযোগী আসামী একই গার্মেন্টসে চাকুরী করত। পরে করোনার কারনে গ্রেফতারকৃত আসামীর চাকুরী চলে যায়। এরপর গ্রেফতারকৃত আসামী অটোরিক্সা চালানো শুরু করে।

হঠাৎ একদিন গ্রেফতারকৃত আসামীর সাথে অপর সহযোগী একজন আসামীর আশুলিয়া বাসষ্ট্যান্ডে দেখা হয়। তখন গ্রেফতারকৃত আসামীকে অপর সহযোগী আসামী বলে, কাজকাম করলে বলিস।

বেশ কিছুদিন পর অপর সহযোগী আসামী কাজকাম করার জন্য নরসিংহপুর (আশুলিয়া) তে গ্রেফতারকৃত আসামীকে যেতে বলে। এরপর গত ১০/০৯/২০২১ তারিখ গ্রেফতারকৃত আসামী সেখানে গিয়ে অপর সহযোগী আরোও কয়েকজনকে দেখতে পায়। অন্যান্য সহযোগী আসামীরা সেদিন জানায়, একটা বাসায় টাকা পয়সা আছে সিষ্টেম করে আনবো, তুই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবি।

এরপর ইং ১১/০৯/২০২১ তারিখ দুপুর বেলা অপর সহযোগী আসামীদের কথামত গ্রেফতারকৃত আসামী নরসিংহপুর গিয়ে একটা মাইক্রোবাস (কালো রংয়ের হাইচ) এ করে উক্ত আসামীসহ আরো ৮ জন আসামী কাশিমপুরের দিকে রওয়ানা দেয়। কাশিমপুর আসার পথে একটা ফাঁকা জায়গায় সন্ধ্যার পূর্ব মুহূর্তে সহযোগী আসামীদের মধ্যে একজন হাইচ মাইক্রোবাসটি দাঁড় করায়। এরপর সেখানে নেমে আসামীরা হাটাহাটি করে আবার গাড়িতে উঠে।

সন্ধ্যা অনুমান ৭ টার দিকে সারদারগঞ্জ রাইচ মিল এলাকায় ফাঁকা একটা জায়গায় সবাইকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে ২ জন সহযোগী আসামী ডিবি পুলিশের জ্যাকেট পরে রাস্তার পাশে একটি বাসায় ঢুকে।

বাসার ভেতরে ঢুকে তারা বলে ‘আমরা ডিবি পুলিশ থেকে এসেছি, আপনাদের বাসায় অবৈধ মালামাল আছে’। তখন আরো ৬ জন আসামী ঐ বাসায় ঢুকে এবং সবার হাত এবং মুখ বেধে ফেলে।

বাচ্চারা কান্না শুরু করলে একটা মহিলার হাত ও মুখের বাঁধন খুলে দেয়। গ্রেফতারকৃত আসামী বাসার দরজার পাশে তখন পাহারায় ছিল।

তারপর ২ জন আসামী ওয়ারড্রবের তালা ভেঙ্গে গয়না, স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়সা নিয়ে নেয়। সহযোগী আসামী গ্রেফতারকৃত আসামীকে ১০ হাজার টাকা দেয়। পরে আরো টাকা দিবে বলে জানালেও দেয় নি।

এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, মামলার গ্রেফতারকৃত আসামী ও পলাতক সহযোগী আসামীগন একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্য। তারা গাজীপুর সহ আশপাশের জেলা সমূহে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করে থাকে।

গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ রুবেল মিয়া কে আদালতে সোপর্দ করলে উক্ত আসামী নিজেকে জড়িয়ে মামলার ঘটনার সাথে জড়িত অপর সহযোগী আসামীদের নাম উল্লেখ করে আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা ঃ এসআই (নিঃ) মোঃ সুমন মিয়া, পিবিআই গাজীপুর জেলা।

তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ও পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান।