রাশিয়ার অবরোধের ধাক্কা বাংলাদেশ আর কতদিন সহ্য করতে পারবে?

Uncategorized আন্তর্জাতিক

কুটনৈতিক প্রতিবেদক ঃ আফগানিস্থান ছোট দেশ। বিশ্ব বাণিজ্যে তাদের অংশ দশমিকের পর কতটা শুন্য সেই হিসাবে থাকে। আফগান যুদ্ধে লাখো মানুষ মরলেও সেটা নিয়ে হম্বিতম্বি করার মানুষ কম। আসল কথা হল নিজের মাথা ব্যাথা শুরু হলে অন্যের মাথা ব্যাথা নিয়ে ভেবে নিজের মাথা ব্যাথা না করার মত অবস্থা। ইয়েমেনের ক্ষেত্রেও হিসাবটি একি রকম। বার্মার ক্ষেত্রেও একি রকম। এসব দেশে কি হচ্ছে এগুলা নিয়ে মানবিক দিক থেকে আপনি উদ্বেগ অনুভব করলেও উন্নত দেশগুলির মাথা ব্যাথা অল্প কিছু খাদ্য সাহায্যের মধ্যেই আটকে থাকে। এখানে বিজনেস নেই। ইরাক যুদ্ধে তেলের সরবরাহ ঘাটতি প্রতিপক্ষ আরব দেশ গুলি মিটিয়ে দিয়েছে। কারো পেটে টান পড়েনি। কিন্তু প্রসঙ্গ যখন রাশিয়া তখন ব্যাপারটা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। এখানে বেশি মানবিকতা দেখানোর পেছনে ব্যাবসার বিষয়টিও জড়িত। আর যাই হোক আফ্রিকার মত বিশাল একটা মহাদেশের সমান রাশিয়াকে হুট করে বিশ্ব অর্থনীতি থেকে বাদ দেয়ার প্রভাব কারো উপর পড়বে না তা কি করে হয়? গ্যাসের সাপ্লাই, খাদ্যের সাপ্লাই, তেলের সাপ্লাই সব কিছুই এলোমেলো করে দিয়ে মার্কিন অবরোধ। এর ধাক্কা লাগেনি এমন কোন দেশ বিশ্বে নেই। খোদ আমেরিকার অবস্থা শোচনীয়। ইউরোপের অবস্থা আরো ভয়াবহ। করোনার সময় বাদ দিয়ে বহুবছর পর চীনের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি সিঙ্গেল ডিজিটে নেমেছে। যেসব দেশে পণ্য রপ্তানি হয় সেসব দেশের অবস্থা নাজুক। তারা কিনবে কিভাবে? ইউরোপ তো বাংলাদেশের রপ্তানির সবথেকে বড় বাজার। স্বাভাবিক যে এর ধাক্কা আমাদের উপর পড়তে বাধ্য। কোভিডের পর বিশ্ব যখন এর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নিজেদের অর্থনীতি সাজানোতে ব্যাস্ত তখন রাজনৈতিক বিবেচনায় মার্কিন উস্কানিতে বিশ্ব এক ভয়ানক সঙ্কটে পড়েছে। ভি ডেতে পুতিনের বক্তব্য আরো ভীতির কারন। তিনি বলেছেন রাশিয়ার অস্তিত্ব না থাকলে বিশ্ব থেকে আর কি করবে? পরমানু হামলা হোক না হোক এটা সুস্থ স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরাতে যে কোন পক্ষই আগ্রহী নয় সেটার ইঙ্গিত দেয়। ইতোমধ্যে লেবানন দেউলিয়া। শ্রীলংকা ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে সপ্তাহখানেকের মধ্যে নতুন সরকার গঠন না হলে যে গভীর খাঁদে দেশটি পড়তে যাচ্ছে সেখান থেকে সহসা উত্তোরনের পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে দেশটির। পর্যটন নির্ভর নেপালের অবস্থা এতটায় খারাপ যে বেশ আগে থেকেই তারা অপ্রয়জনীয় পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বা সীমিত করেছে। পাকিস্তানের রিজার্ভ দ্রুত নেমে গেছে। দেশটির কয়েকমাস আগেও মুদ্রার মান ছিল ডলারের বিপরীতে ১৭০ রুপির আশেপাশে। সেটি এখন ১৯২ রুপি ছাড়িয়েছে। খোলা বাজারে ২০০ রুপির বেশিতে বেচাকেনা হয়েছে। এই পরিস্থিতির প্রভাব ভারতেও ভয়াবহ ভাবে পড়েছে। কিন্তু আমার আগ্রহের কেন্দ্রে বাংলাদেশ। যেকথা বিগত বছর খানেক ধরে বলে আসছি বার বার তা হল আমাদের অপ্রয়জনীয় খরচ বন্ধ করতে হবে। ভাল লেগেছে সম্প্রতি দুটি বড় সিদ্ধান্তে। আগের দিন প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছেন দেশে নতুন করে আর কোন সড়ক নির্মাণ প্রকল্প নেয়া হবেনা আপাতত। বিদ্যমান সড়ক মেরামত এবং অন্যান্য প্রকল্পগুলি চালিয়ে নেয়া হবে। এই খবরটি পাওয়ার পর আমার মাথায় প্রথম যে বিষয়টি কাজ করেছে সেটি হল, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পগুলি বন্ধ করা। যেহেতু দেশে উৎপাদন সক্ষমতা চাহিদার দ্বিগুন ছাড়িয়েছে এবং এখন পর্যন্ত সঞ্চালন ব্যাবস্থার উন্নতি আশানুরূপ হয়নি তাই এই মুহুর্তে সবথেকে বেশি প্রয়োজন ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন প্রকল্পে না যাওয়া। এবং বিদ্যমান রেন্টাল বিদ্যুৎ বন্ধ এবং ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বাঁচানো।
বুধবার অর্থমন্ত্রীর আরেক সিদ্ধান্ত দেখে মনে হয়েছে তাদের ভাবনায় কিছুটা হলেও টনক নড়েছে। মন্ত্রী মহোদয়ের ভাষ্যমতে যেসব প্রকল্পে ডলার প্রয়োজন এবং এখনি আমাদের জন্য জরুরি না সে সব প্রকল্প স্থগিত করা হবে। সেই সাথে বিদেশ ভ্রমনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বা নিয়ন্ত্রণ আনা হবে। সরকারী কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ করে দিবে আপাতত। কিছুদিন আগেও ঈদ উপলক্ষে ভারত ভ্রমনের জন্য ৫ লক্ষ মানুষের যে ভীড় দেখেছিলাম তখন আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি যে আসন্ন পরিস্থিতি বিবেচনায় এটা আমাদের জন্য খুব ভাল কিছু বয়ে আনবে না। এই মুহুর্তে এত ডলার চলে যাওয়া সুখকর নয়। হয়ত এই বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসবে। আজকের নিউজে দেখলাম জাতিসংঘ মিশনে শান্তিরক্ষা দেখতে সংসদীয় কমিটি নাকি বিদেশ সফরে যাবেন। যদি এটা বন্ধ হয় তবে কিছুটা হলেও স্বস্থি মিলবে যে না আসলেই মন্ত্রী এই ইস্যুতে সিরিয়াস।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক SUV, হোল এপ্লায়েন্সে ইলেক্ট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমদানিতে ৭৫% নগন মার্জিন সংরক্ষনের নির্দেশনা দিয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বাদে অন্য পণ্য আমদানিতে ৫০% মার্জিন রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। আশাকরি আমদানি এবার কিছুটা হলেও কমবে। মাসে রপ্তানি $৪ বিলিয়নের বিপরীতে আমদানি $৮ বিলিয়ন ছাড়ানো খুব ভয়ঙ্কর ব্যাপার। এই প্রথম দশ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি $২৪ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। সেই সাথে কারেন্ট একাউন্ট ডেফিসিট ছাড়িয়েছে $১৪ বিলিয়ন ডলার!! এভাবে চললে রিজার্ভ ধরে রাখবেন কিভাবে?
পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন সবার উচিত বিলাসিতা কমানো। দেশে এই মুহুর্তে নৈরাজ্য সৃষ্টি হলে ভয়ানক পরিনতি হতে পারে। এই মুহুর্তে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় আটকানো না গেলে আর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ আরো ৬ মাস বা ১ বছর চললে আমরা বোধহয় ধাক্কা সামলাতে পারব না। আমাদের টনক নড়েছে এটাকে ইতিবাচক হিসাবেই দেখছি।


বিজ্ঞাপন