নদীর উৎসমুখে ভারত ও চীনের বাঁধ বাংলাদেশকে ভয়ঙ্কর পানি সংকটে ফেলবে, আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি তো?

Uncategorized আন্তর্জাতিক

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ঃ আমাদের দেশ ব্রহ্মপুত্র নদের পানির উপর প্রায় অর্ধেক নির্ভরশীল। কিন্তু এই পানি প্রাপ্তির ইস্যুতে ভারতকে নমনীয় করবার চেষ্টা বৃথা যাবে বলে মনে করি। অথবা ভারত এই পানির ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখবার চেষ্টা করবে।

ফারাক্কা বাধ এবং গঙ্গা ওয়াটার শেয়ারিং চুক্তির প্রকৃত বাস্তবায়নের চিত্র দেখলে একথা কেন বলছি স্পষ্ট হবে। বাংলাদেশ তার প্রাপ্য পানির অধিকার চুক্তি করেও নিশ্চিত করতে পারেনি। তিস্তা নিয়েও একি কথা প্রযোজ্য। ভারতের সাথে পানি ইস্যুতে দরকষাকষির ফলাফল হবে সময়ক্ষেপন।

এক্ষেত্রে চীন ব্রহ্মপ্রুত্র নদীর উৎসে বাধ দিচ্ছে। এর এটা নিয়ে ভারতে শুরু হয়েছে শঙ্কা। ভারতের যে শঙ্কা এটিকে কাজে লাগিয়ে ভারত বাংলাদেশ যৌথ ওয়াটার শেয়ারিং চুক্তির পরিবর্তে চীন কে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করাটা উপযুক্ত মনে করি।

এতে ক্ষমতার ব্যালান্স থাকবে। আলোচনার ক্ষেত্রে এবং এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একক দেশের ক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ বন্ধ বা কমিয়ে আনা যাবে। এক্ষেত্রে চীনের সাথে চমৎকার সম্পর্ককে কাজে লাগানো যেতে পারে।

তিস্তার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র চীনকে নিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা ভারতের মিডিয়ায় যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তাতে বোঝা যায় যেকোন আন্ত বর্ডার পানি শেয়ারিং চুক্তিতে চীনের মত দেশকে যুক্ত না করলে কাঙখিত ফল পাওয়া দুস্কর হবে।

জলবিদ্যুৎ এর বিকল্প নেই। তবে সেটা কোন অবস্থাতেই ভারত থেকে আনার যুক্তি নেই। জলবিদ্যুৎ এর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আঞ্চলিক সহযোগীতা হিসাবে ভুটান এবং নেপালকে সাথে রাখতে হবে। জলবিদ্যুৎ এর ক্ষেত্রে নেপাল বা ভুটান থেকে আনা উত্তম। সম্প্রতি সরকারের একটি চমৎকার আইডিয়া আমার ভাল লেগেছে।

সেটি হল নেপালের সাথে বাংলাদেশ এরকম চুক্তি করতে চায় যেখানে শীতকালে বাংলাদেশ নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানি করবে কারন শীতে নেপালের জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যায় পানির প্রবাহে ঘাটতির জন্য।

যেহেতু বাংলাদেশের উৎপাদিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি গ্যস, ফার্নেস ওয়েল, জ্বালানি তেল, এলএনজি, কয়লা ব্যাবহার করছে এবং শীতে আমাদের দেশে চাহিদাও কমে যায় ফলে কেন্দ্রগুলিকে ক্যাপাসিটি চার্জ না দিয়ে একচুয়াল কস্ট প্লাস মার্জিনে নেপালে রপ্তানি করলে সেটা মন্দ হয়না।

এতে আমাদের উৎপাদন ক্ষমতার ব্যাবহার নিশ্চিত হবে। অব্যবহৃত উৎপাদন সক্ষমতার বিপরীতে ক্যাপাসিটি চার্জ বাচল আবার বিদ্যুৎ রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হল। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশের শুধু গ্রীষ্মকালে নেপাল থেকে কম খরুচে জলবিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। এতে বিদ্যুৎ প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা দূর করা সম্ভব হবে।

মুলকথা হল, ত্রিপাক্ষিক সমাধানে না গিয়ে এখন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বা সমাধানের পথ খোজাটা আমার দৃষ্টিতে ঝুকি বৃদ্ধি করে। কমায় না। পানি আগামীর বিশ্বের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাড়াবে। আমাদের দারা সম্ভব এরকম সব উপায় মাথায় রেখেই আমাদের এগোনো উচিত।


বিজ্ঞাপন