কুটনৈতিক বিশ্লেষক ঃ শ্রীলঙ্কার ১৭ কিলোমিটার সড়ক বানাতে খরচ লাগবে $১ বিলিয়ন ডলার। এই সড়কের বিদেশি স্বত্তাধীকারী হিসাবে থাকবে চীন। জ্বি। ঠিকি শুনেছেন। চীনের সরকার সমর্থিত প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার এনার্জি কোম্পানি (CHEC) কে কন্ট্রাক্ট দেয়া হয়েছে কলোম্বোয় ১৭ কিলোমিটারের (১০.৫ মাইল) চার লেনের সড়ক বানাতে। খরচ ধরা হয়েছে $১ বিলিয়ন ডলার বা ৮৫০০ কোটি টাকা। প্রতি কিলোমিটার হিসাবে খরচ পড়বে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
চুক্তি অনুযায়ী এই সড়ক নির্মান হবে ৩ বছরে এবং BOT হিসাবে চীন ১৫ বছর পরিচালনা করবে। এরপর শ্রীলঙ্কাকে হস্তান্তর করবে। এই সিদ্ধান্তের এক সপ্তাহ আগেই চীনের মাধ্যমে নির্মিত কলোম্বো পোর্ট সিটি কে ট্যক্স ফ্রি স্টাটাস দিয়েছে দেশটি। গতবছর শ্রীলংকা $১.৫ বিলিয়ন ডলারের জাপানিজ ফান্ডে নির্মিত হতে যাওয়া রেল প্রকল্প বাতিল করে। রেল প্রকল্পটি আর্থিক ভাবে লাভজনক নয় বলে বাতিল করেছিল দেশটি।
এই বছর মার্চে শ্রীলংকা, ভারত ও জাপানকে চীন পরিচালিত কন্টেইনার জেটির পাশেই অবস্থিত গভীর সমুদ্র বন্দর অফার করে। তবে এটা নিশ্চিত যে শ্রীলংকায় ভারত ও জাপানের প্রভাবকে ছাড়িয়ে চীন জয়ী হয়েছে। ২০১৭ সালে চীনের দেয়া বিশাল ঋন শোধ করতে না পারায় হাম্বানটোটা বন্দর চীনের কাছে ৯৯ বছরের লিজে দিতে বাধ্য হয় শ্রীলঙ্কা। তাদের বৈদেশিক ঋনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে তারা এখন বাংলাদেশের কাছ থেকে ঋন নিতে চাইছে ফরেন কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে। বাংলাদেশ হয়ত লিবর প্লাস ২% এ তিন মাস মেয়াদে শ্রীলংকাকে ২০ কোটি ডলার দিবে। পরিশোধে ব্যার্থ হলে আমদানি রপ্তানির প্রাপ্য থেকে সমন্বয় করে নিবে বাংলাদেশ। তবে গতকাল শ্রীলংকার একটি ভেরিফাইড ফেসবুক আইডি থেকে এই ঋন নেয়া নিয়ে একটি পোস্ট করা হয়। কমেন্টে সাধারন শ্রীলংকানদের বাংলাদেশ নিয়ে যে মানসিকতা পোষন করেন সেটি দেখে যার পর নাই অবাক হয়েছি।
অনেক কে মন্তব্য করতে দেখলাম যে নেক্সটে হয়তো সোমালিয়ার কাছে লোন চাইবে শ্রীলংকা। একজন লিখেছেন যে তিনি তার অধীনে কর্মরত বাঙ্গালীদের কাছে মুখ দেখাতে পারবেন না। বিষয়টি আমার কাছে মনে হয়েছে যে আমাদের নিয়ে সেদেশের মানুষের ভাল ধারনার বড়ই অভাব। হয়ত একদিন আমরা প্রমাণ করব নিজেদের। অপমানের জবাব দিতে পারব।
এক বছরের আপডেট:
শ্রীলংকা দেউলিয়া ঘোষনা করেছে নিজেদের, শ্রীলংকার দেউলিয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে কোভিডের সময় পর্যটনে ধ্বস ও অন্যান্য খাতের অব্যাবস্থাপনা। সেই সাথে রুশ -ইউক্রেন যুদ্ধে তেলসহ যাবতীয় খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্দি পাওয়া, ফিসকাল মিসম্যানেজমেন্ট, ডলার বাঁচাতে সার আমদানি নিষিদ্ধ করে খাদ্য উৎপাদন ২০% কমে যাওয়া এবং হিতে বিপরীতে সেই ঘাটতি খাদ্য আমদানি করতে আরো বেশি ডলার ব্যয় হয়ে যাওয়া, উচ্চ সুদের বন্ড ইস্যু এবং সেটার ম্যাচুউরিটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কারেন্সি সোয়াপ চুক্তি অনুযায়ী শ্রীলংকা এখন পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে দাম হারানো লঙ্কান মুদ্রার হিসাব অনুযায়ী বাজার রেটে অতিরিক্ত মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করে সমন্বয় করে চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ঋনের মেয়াদ আরো এক বছর বৃদ্ধি করেছে।