বঙ্গোপসাগরে চীনের প্রবেশে আধিপত্যের লড়াইয়ে চীনের কাছে ভারত কি হেরে যাচ্ছে?

Uncategorized আন্তর্জাতিক


কুটনৈতিক বিশ্লেষক ঃ শক্তির শক্তি হল টাকা। অর্থ না থাকলে শক্তিশালী দেশ রাতারাতি হয়ে যেতে পারে ভিখারি। সারা বিশ্বে এই অর্থ সম্পদে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার ফলে এখনি সবাই বিদায় ঘন্টা শুনতে পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের। হয়ত আর ২ যুগ পর চীন হবে বিশ্বের মোড়ল। আর সেক্ষেত্রে চীনের সাথে ভাল সম্পর্ক থাকাটা অনেক দেশের জন্য আশীর্বাদ ও হয়ে উঠতে পারে। কারন সারা বিশ্বে প্রভাব সৃষ্টিতে চীন মূখ্য ভূমিকা রাখতে চলেছে। অপর একটি শক্তি হল ভারত। সাপে নেউলে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও চীনের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উভয় দেশ কোন তিক্ততা রাখতে চাইনা। কিন্তু ভারতের সাথে চীনের বাণিজ্য এক প্রকার অসম। ২০১৭-১৮ সালে বাণিজ্য ঘাটতি চীনের পক্ষে ছিল প্রায় $৬৩ বিলিয়ন। চীনে ভারতের রপ্তানি ছিল মাত্র ১২ বিলিয়ন ডলার যার বিপরীতে চীন থেকে প্রায় ৭৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করা লেগেছে ভারত কে। অবশ্য বিগত বছরে বাণিজ্য ঘাটতি ভারত কিছুটা হলেও কমিয়ে আনতে পেরেছে।
বাংলাদেশ যে ভবিষ্যতে বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম অংশীদার হতে চলেছে সেটা সারা বিশ্বের কাছেই স্বীকৃত। আর এজন্যই সারা বিশ্বের ফোকাস এখন বাংলাদেশের দিকে। বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে বিশ্বের নাম করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। জেনারেল ইলেক্ট্রিক, সিমেন্স এর মত কোম্পানি এদেশের ব্যাবসা প্রসার নিয়ে আলাদা ভাবে কাজ করে যাচ্ছে যেটা এক সময় ভাবাই যেত না। সুমিতোমো, সজিত কর্পোরেশন, মিতশুবিশি সহ প্রচুর জাপানিজ জায়ান্ট কোম্পানি এদেশে বিনিয়োগ করতে চলেছে অথবা করেছে। সৌদি আরব, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস সহ ইউরোপীয় বহু দেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আর সব থেকে বেশি যে ব্যাপার টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে সেটি হল চীনের উপস্থিতি। ভারতের প্রভাব বলয়ের দেশ হিসাবে বাংলাদেশ সুপরিচিত ছিল। ভারতের আপত্তির কারনে বাংলাদেশ এক সময় সাবমেরিন কেনা থেকে পিছু হটে। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে বাংলাদেশে ভারতের উপস্থিতি মলিন হয়ে যাচ্ছে অন্যান্য দেশের কাছে। বিশেষ করে চীনের কাছে।
সরাসরি চীন কে বাংলাদেশ সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দরের কাজ দেয়নি ভারত সহ অনেক দেশের আপত্তি থাকার কারনে। তবে ভারত বা অন্য দেশের আপত্তি থাকার চেয়ে বেশি ছিল বাংলাদেশের স্বার্থ। যেহেতু সল্প দূরত্বে মাতারবাড়িতে গভির সমুদ্র বন্দরের জন্য জাপানের অর্থ সহায়তা পাওয়া গেছে তাই এখানে চীন কে দিয়ে অতিরিক্ত আরেকটি বন্দর করানো বোকামী। তবে বিকল্প হিসাবে চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিলানের সাথে চীন কে যুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে পায়রা বন্দরের কাজ ও পুরোপুরি ভারত বা চীন কাউকে না দিলেও গুরুত্বপূর্ণ অংশটি চীনকে দিয়েছে বাংলাদেশ। ভারত কে হয়ত একটি টার্মিলান করতে দিবে। সব কিছু ছাপিয়ে বেশ গোপনে হুট করে বাংলাদেশ যে কাজটি করেছে সেটা হয়ত বেশ অপ্রত্যাশিত ছিল। বাংলাদেশ দেশের প্রথম এবং বৃহত্তম সাবমেরিন বেজ করার কাজ চীন কে দিয়ে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ভারতের জন্য যে সস্থিকর নয় সেটা বুঝতে গেলে রকেট সাইন্স জানা লাগে না। এর আগেও বাংলাদেশ কে নিজের প্রভাব বলয়ে আনার জন্য ভারত চেষ্টার কমতি রাখেনি। ভারতের ক্ষেত্রে সব থেকে বড় হুমকি ছিল ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর এবং $২৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি। সমসাময়িক জাপানের সাথেও $৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে বাংলাদেশ। মূলত চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক গভীর করার অন্যতম নিয়ামক হিসাবে কাজ করেছে এটি। এর জবাবে ভারতের আসলে কিছুই করার ছিল না। তবুও তারা $১ বিলিয়ন ডলার ঋন চুক্তি করে। এর পরে $২ বিলিয়ন ডলারের লাইন অব ক্রেডিট চুক্তি হয়। তারপর $১০ বিলিয়ন ডলারের। কিন্তু এই অর্থের ছাড় ভারত করেনি। সামর্থ এখানে বড় প্রশ্ন। চীন যেমন ভাবে পারবে ভারতের পক্ষে সেভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। দেশের স্টক এক্সচেঞ্জের নিয়ন্ত্রনেও ভারত চীনের কাছে পরাস্ত হয়। সব শেষ, প্রতিরক্ষা এমওইউ করে তারা ভেবেছিল হয়ত চীনের প্রভাব কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হবে। কিন্তু সেটা তো হয়নি বরং সাবমেরিন বেজের মত স্পর্শকাতর কাজের দায়িত্ব চীন পেয়ে গেছে। ১০৩০০ কোটি টাকার এই বেজ করা থেকে এটুকু অনুমান করা যায় যে বঙ্গোপসাগরে চীনের উপস্থিতি এক প্রকার নিশ্চিত। যেটা হয়ত সমুদ্র বন্দর দিয়ে একক ভাবে বাংলাদেশ দেয়নি সেটা সাবমেরিন বেজের মাধ্যমে দিয়ে দিল। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ হল সমদ্র বন্দর যেহেতু একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম শক্তিশালী ভীত্তি, তাই কোন একক দেশের কাছে বাংলাদেশ নির্ভর করেনি। ভারত ও না। চীন ও না। তবে সাপোর্টিভ বন্দর হিসবে মাতারবাড়িতে জাপানের উপর নির্ভর করেছে কারন জাপান অঞ্চলিক কুৎসিত রাজনীতিতে কখনো জড়াবে না বাংলাদেশে। চীনের উদ্দেশ্য সফল। এখানে বলে রাখা ভাল, যে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মেগা পকল্পের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো দুটি দেশকে প্রাধান্য দিয়েছে। জাপান কে দিয়ে মেট্রোরেল মাতারবাড়ি, ঢাকা চট্টগ্রামের তিনটি ব্রিজের মত কাজ করিয়েছে অথবা করাচ্ছে। অন্যদিকে এগুলা বাদে এক প্রকার সকল মেগা প্রজেক্টে রয়েছে চীনের সুস্পষ্ট উপস্থিতি।
ভারত কে বাংলাদেশ কিছু কাজ দিয়েছে তবে তার অধিকাংশ হল ভারতীয় এলওসিএর অধিনের প্রকল্পগুলি। এর বাইরে বাংলাদেশে ভারতের অর্থনৈতিক উপস্থিতি এক প্রকার সীমিত হয়ে গেছে। রাজনৈতিক প্রভাব এখনো ভারতের রয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে সকল প্রভাবের মূল ভিত্তি হল অর্থনীতি। এজন্যই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েও ভারত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের নিয়ন্ত্রন নিতে ব্যার্থ হয়েছে চীনের কাছে। আমি আগেও বলেছি এখনো বলেছি, বাংলাদেশ চীন সম্পর্ক এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে যদি কোন প্রকল্পে ভারত এবং চীন উভয় দেশ আগ্রহ প্রকাশ করে সেখানে দেখা গেছে বাংলাদেশ এক প্রকার বিনা দ্বিধায় চীন কে বেছে নিচ্ছে। ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও চিন থেকে সাবমেরিন কেনা, ঘাটি করার দায়িত্ব দেয়া, মেগা প্রজেক্ট গুলির কাজ দেয়া ভারতের জন্য চরম অসস্থির হলেও খোলামেলা ভাবে এই বিষয়ে ভারত বাংলাদেশ কে কোন চাপ ও দিতে পারছে না


বিজ্ঞাপন