বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম কর্তৃক স্বাস্থ্য বাজেটের বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন

Uncategorized জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম প্রতি বছরের মতো এবারো স্বাস্থ্য বাজেট বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাহেদ মালেক এমপি, মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন,
২০২২-২৩ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের জন্য মোট বাজেট বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। যা জাতীয় বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এই খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩২ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা (প্রস্তাবিত ছিল ৩২ হাজার ৭৬১) এবং ২০-২১ অর্থ বছরে ছিল মাত্র ২১ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। বিগত অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ছিল ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ঘোষিত বাজেটে বরাদ্দ
বেড়েছে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে সামগ্রিক বাজেটের পরিধি গত বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বাড়লেও স্বাস্থ্য খাতে বেড়েছে ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ স্বাভাবিকের তুলনায় কম
বেড়েছে। বলা যায় এই বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ গতানুগতিক। অর্থাৎ দেশের স্বাস্থ্য খাত যেভাবে চলছে, ঠিক সেভাবেই চলবে। স্বাস্থ্য সেবা পেতে মানুষকে পকেট থেকেই সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হবে। বিশেষায়িত চিকিৎসা পেতে মানুষকে জীবন-মান বিসর্জন দিতে হবে। বিদ্যমান অবস্থায় দেশে প্রয়োজনীয় (কাঙ্খিত নয়) স্বাস্থ্য সেবা পেতে জনসাধারণকে নিজেদের পকেট থেকে ৬৮ শতাংশ ব্যয় করতে হবে। যার বেশিরভাগই ব্যয় হয় ওষুধ, পথ্য ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ। কিন্তু সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫ (ক) অনুসারে চিকিৎসাসহ জীবন ধারনের মৌলিক উপকরনের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ (১) অনুসারে জনগনের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন রাষ্ট্রের অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য। ঘোষিত বাজেটে মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য সেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যান বিভাগের জন্য পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের পরিচালন ব্যয় ১৩ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। ২১-২২ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ১৫১ কোটি টাকা। এছাড়া উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ১৪ কোটি টাকা।অন্যদিকে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যান বিভাগের পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ২ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এখাতে বরাদ্দ ছিল যথাক্রমে ৪ হাজার ২৯ কোটি ২ টাকা এবং ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ নিয়ে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বিদ্যমান বাস্তবতায় কিছুটা সমুদ্র বাজেট কাম্য হলেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যর মতো সামাজিক খাতের ওপর যেন এর প্রভাব না পড়ে। এখাতে কাটছাট করা না হলেও বরাদ্দ খুব বাড়েনি। প্রায় এক দশক ধরেই স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ থাকে জাতীয় বাজেটের ৫ শতাংশে মধ্যে। আসন্ন অর্থ বছরের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করেন, স্বাস্থ্যখাতে এ বরাদ্দ ১০ শতাংশ হওয়া উচিত। দেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৮ শতাংশই আসছে জনসাধারনের পকেট থেকে। এই ব্যয় (আউট অব পকেট) ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হলে জাতীয় বাজেটের ৭ থেকে ৮ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন। এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের নাগরিকরা স্বাস্থ্য সেবা পেতে পকেট থেকে যে ৬৮ শতাংশ ব্যয় করেন, তারমধ্যে ওষুধ ও পচনশীল (এমএসআর) চিকিৎসা সামগ্রী কিনতে ব্যয় হয় ৬৭ শতাংশ। ৫ শতাংশ বায় হয় ইমেজিং সেবা পেতে, ৭ শতাংশ ব্যয় হয় ল্যাবরেটরি সেবা পেতে, ইনপেশেন্ট কিউরেটিভ সেবা পেতে ব্যয় হয় ৮ শতাংশ এবং আউটপেশেন্ট কিউরেটিভ সেবা পেতে ব্যয় হয় ১৩ শতাংশ। গড়ে দেশের অসুস্থ বা দূর্ঘটনায় আক্রান্ত নাগরিকদের মধ্যে ১২ শতাংশ কোন আনুষ্ঠানিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেন না। আউট পেশেন্টদের মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে যান। অন্যদিকে ৪০ শতাংশের বেশি ইনপেশেন্ট বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস (বিএনএইচএ) এর ১৯৯৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশের জিডিপির মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বরাদ্দ মাথাপিছু পড়ে মাত্র ৪৫ ডলার। অন্যদিকে প্রতিবেশি দেশ নেপাল, ভারত, ভুটান এবং শ্রীলঙ্কায় যথাক্রমে বরাদ্দ ৫৮, ৭৩, ১০৩, এবং ১৫৭ ডলার।
অর্থাৎ প্রতিবেশি দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম বরাদ্দ নেপালের তুলনায় আমাদের বরাদ্দ ১৩ শতাংশ কম। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম মনে করে, স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বিনিয়োগ হিসাবে দেখতে হবে, ব্যয় হিসাবে নয়। কারণ স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ মানে সুস্থ মানব সম্পদ। প্রয়োজনীয় রাজস্ব আহরণ এবং দেশের অর্থনীতেকে এগিয়ে নিতে সুস্থ সবল মানব সম্পদের কোন বিকল্প নেই। তাই জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন।
যাতে রোগীদের পকেট থেকে ব্যয় ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। চিকিৎসা করাতে গিয়ে যেন রোগীরা দরিদ্র থেকে অতি দরিদ্র না হয়ে পড়েন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *