সিটিং-গেটলকে জিম্মি যাত্রী

অপরাধ অর্থনীতি আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয় বানিজ্য রাজধানী

নেয়া হচ্ছে চারগুণ ভাড়া

মহসীন আহমেদ স্বপন : সিটিং-গেটলক-স্পেশাল-বিরতিহীন নাম অনেক হলেও উদ্দেশ্য এক; অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা। যাত্রীদের একরকম জিম্মি করেই কোনো কোনো রুটে নেয়া হচ্ছে চারগুণ ভাড়া। যদিও দায় নিতে নারাজ বাস মালিক সমিতি। সমস্যা নিরসনে ফ্র্যাঞ্জাইজিভিত্তিক বাস পরিচালনার যে সমাধান বাতলে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা, সেটিও ২০২০ সালের ডিসেম্বরের আগে বাস্তবায়নের সম্ভাবনা দেখছে না খোদ বিআরটিএ।
রাজধানীর ইসিবি চত্বর থেকে শ্যাওড়াপাড়া। কুড়িল ফ্লাইওভার দিয়ে পার হওয়া এ রুটের দূরত্ব সাড়ে ৪ কিলোমিটারের মতো।
রাজধানীতে কিলোমিটার প্রতি বিআরটিএ নির্ধারিত বাস ভাড়া ১ টাকা ৭০ পয়সা হিসেবে এতটুকু রাস্তার ভাড়া কোনোভাবেই ৮ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এ রুটে চলাচলকারী যে কোনো বাসে এ দূরত্বের জন্যই গুণতে হচ্ছে কমপক্ষে ২০ টাকা। কোনো কোনো বাস মালিক নিচ্ছেন ৩০ টাকাও।
এদিকে বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১.৭০ টাকা, মিনিবাস ১.৬০ টাকা। অর্থাৎ এই দূরত্বে বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা, মিনিবাসের ৫ টাকা।
আইনের তোয়াক্কা না করে সিটিং, গেইটলকের নামে দেদারসে চলছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। ‘ওয়েবিল’ পদ্ধতিতে ভাড়া ঠিক করায় সবচেয়ে ভোগান্তিতে কম দূরত্বের যাত্রীরা। কারণ দূরত্ব যাই হোক চেকার যাত্রী সংখ্যা উল্লেখ করার পর সব যাত্রীকে গুণতে হয় একই ভাড়া।
বিগত ২০১৭ সালের এপ্রিলে সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত হলেও পরে আর তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে সিটিং সার্ভিসের নামে যাত্রী হয়রানির দায় নিতে রাজি নয় মালিক সমিতি।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আপনারা (সাংবাদিকরা) শুধু অনিয়ম তুলে ধরতে চাইছেন, ভালো কিছুর দিকে দৃষ্টি কেন দিচ্ছেন না। আমরা বলতে চাচ্ছি যে, অনিয়ম ছিল বিধায় তখন সেটা বন্ধ করতে চেয়েছিলাম। ওই সময় বিআরটিএ দায়িত্ব নিল, গেট লক সার্ভিস বন্ধ হবে না, চলবে আমরা এটা নিয়ে ভেবে দেখবো।
ভাড়া নৈরাজ্য দূর করতে দ্রুত ফ্রাঞ্জাইজিভিত্তিক বাস চালুর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের। যোগাযোগ ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, বাস রুট ফ্রাঞ্জাইজি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারলে শুধু ভাড়ার নৈরাজ্য কমবে না, সবদিকে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
যদিও ২০২০ সালের ডিসেম্বরের আগে এ পদ্ধতিতে যাওয়ার কোনো আশা দেখাতে পারছে না বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ। বিআরটিএ’র পরিচালক মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, আগামী ২০২০ সাল নাগাদ ২২টা রুটে এ বাসগুলো পরিচালনা করা হবে। এ লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে।
সিটিং-গেটলকে যাত্রীরা জিম্মি করে নেয়া হচ্ছে চারগুণ ভাড়া প্রসঙ্গে যাত্রী কল্যান সমিতির মহসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এটা পুরাপুরি অনৈতিক। কোন ভাবে এটা অন্যায়, সিটিং-গেটলক নামে কোন সার্ভিস আইনে নেই। ৩১ আসনের বাসে ৪০ এর অধিক সীট বসানো হয়। এসব বাসে দাড় করিয়ে যাত্রী নেয়া হয়, ভাড়া নেয়া হয় ৩-৪গুণ। এবিষয়টি যাদের দেখার কথা তারা না দেখার ভান করছে।
শ্রমিক ইউনিয়ন মহাখালী বাস টার্মিনালের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ সদু বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে চারগুন ভাড়া নেয়া হয় এমন অভিযোগ আমি এখনো পাইনি। কিন্তু কিছু কিছু গাড়ীর চালক সহকারী হয়তো অধিক ভাড়া নিয়ে থাকে। তাই বলে সব গাড়ীই চারগুন ভাড়া নিবে এমন হতে পারে না। তিনি বলেন, একজন যাত্রী যদি মতিঝিল থেকে গাড়ীতে উঠে ফার্মগেইট নেমে ১০ টাকা ভাড়া দেয় তাহলে তো গাড়ীর ড্রইভার এবং মালিকদের লোকসান হয়ে যাবে। আবার মালিক সমিতি থেকে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে এবং গাড়ীর ড্রাইভাররা যেন চুরি করতে না পারে তার জন্য ওয়েবিল আছে। তার জন্য ভাড়া টা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। মতিঝিল মিরপুরের থেকে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ টাকা। তাই নির্দিষ্ট স্থানে লোক রাখা হয়েছে যেখানে গাড়ীর যাত্রী হিসাব করে ওয়েবিলে তা লিখে দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে ভাড়া কম দেয়ার কোন সুযোগ নেই। যাত্রী যেখানেই নামুক না কেন, ওয়েবিল লিখার পর ভাড়া কোনোভাবেই কম দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ ওয়েবিলে যাত্রীর পরিমাণ যা লিখা থাকে ড্রাইভারকে সেই হিসাব অনুযায়ী ভাড়া টা মালিককে বুঝিয়ে দিতে হবে। তাই হয়তো অনেকেই অভিযোগ করেছে যে তাদের কাছ থেকে ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে। তবুও যদি ভাড়া বেশি নেওয়ার এমন অভিযোগ যাত্রীরা করে থাকে তাহলে আমরা তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *